পারবোনা আমি ছাড়তে তোমাকে
গল্পঃ *পারবোনা আমি ছাড়তে তোমাকে*
-------------
হেডিং আমাদের টা দেখলেই আমাদের মনে প্রেমিকের জন্য প্রেমিকার বা প্রেমিকার জন্য প্রেমিকের এক ডায়লগ এর কথা ভেসে আসে।
নাহ আমি এই কথাটা কে কখনোই প্রেমিক প্রেমিকার ক্ষেত্রে নিচ্ছিনা। আমি তার জন্য প্রযোজ্য মনে করি যিনি এই কথাটার পরিপুর্ণ অধিকারী। তিনি হলেন আমাদের গর্ভধারিণী মা। আমরা কখনোই তাকে ছাড়তে পারবোনা।
গল্প টা মাকে নিয়েই।
-
মুন্নার মোবাইলটা বেজেই যাচ্ছে।
রিসিভ করতে পারছেনা।সে তার মাকে ঔষধ
খাওয়ানোর জন্য মায়ের কাছে ছিলো। তার পরিবারে সে আর তার মা ছাড়া আর
কেউ নেই। মা বেশ অসুস্থ। চলাফেরা করতে
পারেননা।
নিজের জীবনে অধিক পরিশ্রম করেছেন।মুন্না কে কষ্ট করে লেখা পড়া করিয়েছেন। মুন্না এই বছর স্টাডি শেষ করে একটা ভালো চাকরি করতেছে।
,
কলটা দিয়েছিলো ফারিহা।ফারিহা মুন্না কে ভালোবাসে। আর মুন্না ও ফারিহাকে অনেক ভালোবাসে, সেই কলেজ লাইফ থেকে। ফারিহার আর মাত্র এক বছর বাকি স্টাডি শেষ হওয়ার। মুন্না ফ্রি হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ১২ টা কল। বুঝে গেছে ফারিহা রেগে অলরেডি আগুন হয়ে গেছে।
কিছুটা চিন্তা করে কল ব্যাক করল।
ফারিহাঃহ্যালো........
মুন্নাঃ হ্যালো...সরি।
ফারিহাঃ কে বলতেছেন?
মুন্নাঃ বললাম তো সরি।
ফারিহাঃ হুম, কিসের সরি, এতো কল দিলাম একটা ও ধরলেনা। এতটুকুও সময় নেই?
আর প্রায় ২০ মিনিট পর এখন কল ব্যাক করেছো?
মুন্নাঃ এই মাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তাই,, প্লিজ রাগ করেনা রাগকুমারি।
ফারিহাঃ তুমিতো সকল সময়ই ব্যস্ত, আমার জন্য কি আর তোমার টাইম আছে। (অভিমানী সুরে)
মুন্নাঃ প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর। ওকে কান ধরতেছি নেক্সট টাইম মোবাইল সাথে রাখবো।
ফারিহাঃ হইছে হইছে থাক।আর ডং করতে হবেনা, এখন শুনো যে জন্য কল দিয়েছিলাম।
মুন্নাঃ কি জন্য বলো?
ফারিহাঃ কাল তো আমার বার্থডে জানাই আছে? কাল কিন্তু তুমি না আসার আগ পর্যন্ত আমি কেক কাটবো না।
মুন্নাঃ ওকে না কাটলে তো ভালো।
তোমার বাবার কেকের দাম টা বেঁচে যাবে।
ফারিহাঃ কিইইইইইইই.........
মুন্নাঃ নাহ ঠিক আছে আসবো । আমার একমাত্র দাদার নাতির বউয়ের বার্থডে আর আমি আসবো না?
ফারিহাঃ হেহ...বড় বড় কথা,সময় হলেতো ভুলে যাবে।
মনে থাকে যেন। নইলে.....
মুন্নাঃ হুম...মনে থাকবে ,তা পার্টি শুরু হবে কবে?
ফারিহাঃ সন্ধ্যা ৮ টায়।
মুন্নাঃ ওকে আসবো এখন রাখলাম, বাই।
ফারিহাঃ ওকে বাই।
...
পরদিন বিকাল বেলা মুন্না শপে গিয়ে লাভ ডোমেন করা একটা তাজমহল ক্রয় করলো।
ফারিহার বার্থডে গিফট দেওয়ার জন্য।
সন্ধ্যা ৭.৩০ হয়ে গেছে। -----------
এদিকে মুন্না আসার কোনো নাম-ই নেই।
সকল অতিথি এসে উপস্থিত।
ফারিহা না আসতে দেখে ফোন দিলো।
কিন্তু ফোন রিসিভ করতেছেনা।
প্রায় ২০ টা কল দিলো। নাহ রিসিভি হচ্ছেনা।
ফারিহা রেগে আগুন হয়েগেছে।
ফারিহার মা তার রুমে এসে বললেন যে কেক কাটার সময় হয়ে গেছে চলে আসতে,
কিন্তু ফারিহা মুন্নার জন্য অপেক্ষা করতেছে।
প্রায় ৮ টা ১৫,,, মুন্না আসেনি।
শেষমেশ মায়ের কথায় ফারিহা কেক কাটতে গেলো।
কেক কাটা,পার্টি,শেষ।
মুন্না আসেনি,
ফারিহা মনে মনে খুব কষ্ট পায়
রুমে গিয়ে কাঁদতে থাকে।
...
এদিকে....
সন্ধ্যা ৭ টায় হঠাৎ মুন্নার মায়ের হার্টে প্রচণ্ড ব্যাথা শুরু হয়।
মুন্না তড়িঘড়ি করে মাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। আর তাড়াহুড়াতে মোবাইলটা ঘরে ফেলে গেছে। এবং তার মায়ের ছুট্ট একটা অপারেশন করাতে হয়। প্রায় ১০ টায় অপারেশন শেষ হয়। পরদিন সকালে মাকে নিয়ে বাসায় ফিরে।
বাসায় এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ফারিহার অনেক ফোন আর একটা মেসেজ।
মেসেজে লিখা; কাল দেখা করবে।
মুন্না বুঝতে পারে ফারিহা খুব রেগে আছে।
তারপর মাকে রেখে ফারিহাকে কল দিয়ে দেখা করতে যায়। গিয়ে দেখে ফারিহা আগে থেকেই এসে বসে আছে।
মুন্না ভয়ে ভয়ে গিয়ে বসে বলে...
- আসলে ফারিহা কাল মায়ের.......এইটুকু
বলার পরই ফারিহা থামিয়ে দেয়।
ফারিহাঃ আমি তোমাকে কারণ বলতে বলিনি। কি আর বলবে? তোমার ব্যস্ততার কথা এইতো।
তোমার মায়ের এই হয়েছিলো সেই হয়েছিলো তাইতো।
মুন্নাঃ আসলে আমার কথা টা শুনো।
ফারিহাঃ স্টপ! কি শুনবো,হুম?
আমার জন্য তোমার কোনো ভালোবাসাই নেই।
কি আর এমন হয়ে যেতো একদিন মাকে ছেড়ে আসলে। আর তুমি ছাড়া কি আর কেউ নেই? কাল আমি আমার ফ্রেন্ডদের কাছি অপমানিত হয়েছি শুধু তোমার জন্য।
ব্যস. আজ থেকে তোমার আমার কোনো সম্পর্ক নেই।আজ এখানেই খতম। তুমি তোমার মাকে নিয়েই থাকো। এই বলেই ফারিহা উঠে চলে গেলো। মুন্না চলে আসে বাসায়। এসে শুধু একটা মেসেজ দেয়। মেসেজে লিখেছিলঃ
না শুনেইতো চলে গেলে, ওকে যাও ভালো থেকো।
তবে মনে রেখো আমি সব ছাড়তে পারলে ও আমার মাকে ছাড়তে পারবনা।
পারবনা আমি ছাড়তে আমার পৃথিবীকে, কিছু না জেনেই একা বক বক করে চলে গেলে। কাল আমার মায়ের অপারেশন করানোর প্রয়োজন হয়। রাতে মায়ের বুকে ব্যথা উঠায় আমি পাগলের মত হয়ে যাই।
তাড়াহুড়ায় মোবাইল টাও ফেলে চলে আসি।
আমি ছাড়া মায়ের দেখার কেউ নেই।
-
তুমি তো কাল তোমার পার্টি নিয়ে ছিলে।
আর এদিকে আমার উপড় দিয়ে ঝড় গেছে।কিন্তু তুমি সেটা বুঝতে চেষ্টা করনি।
আজ আমি যদি তোমায় বলি যে তুমি তোমার মাকে একেবারে ছেড়ে দিতে,,তার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে পারবেনা।
তখন তোমার অবস্থা কেমন হবে?
নাহ তুমি সেটা চিন্তা না করেই চলে গেছো। ওকে ভালো থেকো। আর অন্যের ক্ষেত্রে অন্তত নিজের মায়ের কথা চিন্তা করো॥
-
মেসেজ টা পাওয়া মাত্রই ফারিহা বুঝতে পারে যে সে কতো বড় ভুল করেছে।
নিজের ভুল বুঝতে পেরে হাওমাউ করে কেঁদে উঠে। আর পরেই মুন্না কে কল দেয়।
মুন্নাঃ হ্যলো! কি?
ফারিহাঃ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। (কেঁদে কেঁদে)
মুন্নাঃ তুমি তো কোনো অপরাধ করনি যে ক্ষমা করবো।
ফারিহাঃ মুন্না প্লিজ। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
মুন্নাঃ ওকে।
ফারিহাঃ আর তুমি কি নিজেকে কি হিরো মনে করো? যে সব কাজ নিজেই করবে।
মায়ের সেবা কি তুমিই করতে জানো?
কাল আমি আমার বাবা-মা কে তোমাদের বাড়িতে পাঠাবো।
তোমার মাকে তুমিই রাজি করাবে কিন্তু।
আর আজ থেকেও আমি ও তোমার মায়ের সঙ্গি হবো। তোমার মায়ের সব দায়িত্ব আমার। মনে থাকে যেন। সব যেন ঠিকঠাক হয়ে যায়। নইলে..............(আনন্দ রাগে)
এবং আগামি সাপ্তাহে যেন বিয়েটা হয়ে যায়। মনে থাকে যেন।
মুন্নাঃ আরে কি বলো। আর তোমার পড়ালেখা? আর আমকেও তো একটু ভাবার সময় দাও।
ফারিহাঃ পড়ালেখা বিয়ের পরেও করা যাবে। নো টাইম মনে থাকে যেন।
মুন্নাঃ একটা আনন্দের হাসি দিয়ে, যো হুকুম মহা রাগি সাহেবা।
ফারিহাঃ কি?????????
মুন্নাঃ নাহ কিছুনা ওকে।
তারপর পারিবারিক ভাবেই মুন্না আর ফারিহার বিয়ে হয়। ফারিহা নিজের মায়ের মতই তার শাশুড়ি কে স্নেহো করে সব সময় কেয়ার করে। মুন্নার থেকেও বেশি।
--------------------------
শেষ কথাঃ
যদি আমরা সবাই মনে মনে চিন্তা করি যে আমারো তো মা আছেন আমারো ত বাবা আছেন। আমার বাবা মা যেভাবে আমাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন, স্নেহো করেছেন।
-
অন্যের বাবা মা ও ঠিক সেইভাবে নিজের সন্তানকে মানুষ করেছেন। আজ আমি কিভাবে তাকে বলি যে নিজের বাবা মাকে ফেলে দিতে।
আমরা সকল ছেলেরা এই কথা কেনো ভাবতে পারিনা যখন ছেলে বাড়ি থেকে রাগ করে না খেয়েই চলে যায় তখন অধিক রাতে একমাত্র মা ই খাবার হাতে নিয়ে ছেলের জন্য অপেক্ষা করে, গার্লফ্রেন্ড বা বউ নয়।
আর শাশুড়িরা যদি এই কথা ভাবি যে আমার যেভাবে মেয়ে আছে তেমনি ভাবে আমার ছেলের বউ ও একজন মায়ের মেয়ে...
বউয়েরা যদি এই কথাটা একবার ভাবি আমার যেমনি মা আছেন আমার শাশুড়ি ও আমার স্বামীর মা। আমার মা আমার কাছে যেমন ঠিক তেমনি আমার শাশুড়িও তার ছেলের কাছে তেমন।
আমরা যদি এই কথা গুলি একবারের জন্য চিন্তাকরি তাহলে এই দেশে কখানই বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজন হবেনা, কখনো সংসার যুদ্ধ হবেনা। কখনো বউ শাশুড়ির যুদ্ধ দেখা লাগবেনা---।।।
*
লেখকঃ মাহমুদ হাসান (অভদ্র লেখক)
-------------
হেডিং আমাদের টা দেখলেই আমাদের মনে প্রেমিকের জন্য প্রেমিকার বা প্রেমিকার জন্য প্রেমিকের এক ডায়লগ এর কথা ভেসে আসে।
নাহ আমি এই কথাটা কে কখনোই প্রেমিক প্রেমিকার ক্ষেত্রে নিচ্ছিনা। আমি তার জন্য প্রযোজ্য মনে করি যিনি এই কথাটার পরিপুর্ণ অধিকারী। তিনি হলেন আমাদের গর্ভধারিণী মা। আমরা কখনোই তাকে ছাড়তে পারবোনা।
গল্প টা মাকে নিয়েই।
-
মুন্নার মোবাইলটা বেজেই যাচ্ছে।
রিসিভ করতে পারছেনা।সে তার মাকে ঔষধ
খাওয়ানোর জন্য মায়ের কাছে ছিলো। তার পরিবারে সে আর তার মা ছাড়া আর
কেউ নেই। মা বেশ অসুস্থ। চলাফেরা করতে
পারেননা।
নিজের জীবনে অধিক পরিশ্রম করেছেন।মুন্না কে কষ্ট করে লেখা পড়া করিয়েছেন। মুন্না এই বছর স্টাডি শেষ করে একটা ভালো চাকরি করতেছে।
,
কলটা দিয়েছিলো ফারিহা।ফারিহা মুন্না কে ভালোবাসে। আর মুন্না ও ফারিহাকে অনেক ভালোবাসে, সেই কলেজ লাইফ থেকে। ফারিহার আর মাত্র এক বছর বাকি স্টাডি শেষ হওয়ার। মুন্না ফ্রি হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ১২ টা কল। বুঝে গেছে ফারিহা রেগে অলরেডি আগুন হয়ে গেছে।
কিছুটা চিন্তা করে কল ব্যাক করল।
ফারিহাঃহ্যালো........
মুন্নাঃ হ্যালো...সরি।
ফারিহাঃ কে বলতেছেন?
মুন্নাঃ বললাম তো সরি।
ফারিহাঃ হুম, কিসের সরি, এতো কল দিলাম একটা ও ধরলেনা। এতটুকুও সময় নেই?
আর প্রায় ২০ মিনিট পর এখন কল ব্যাক করেছো?
মুন্নাঃ এই মাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তাই,, প্লিজ রাগ করেনা রাগকুমারি।
ফারিহাঃ তুমিতো সকল সময়ই ব্যস্ত, আমার জন্য কি আর তোমার টাইম আছে। (অভিমানী সুরে)
মুন্নাঃ প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর। ওকে কান ধরতেছি নেক্সট টাইম মোবাইল সাথে রাখবো।
ফারিহাঃ হইছে হইছে থাক।আর ডং করতে হবেনা, এখন শুনো যে জন্য কল দিয়েছিলাম।
মুন্নাঃ কি জন্য বলো?
ফারিহাঃ কাল তো আমার বার্থডে জানাই আছে? কাল কিন্তু তুমি না আসার আগ পর্যন্ত আমি কেক কাটবো না।
মুন্নাঃ ওকে না কাটলে তো ভালো।
তোমার বাবার কেকের দাম টা বেঁচে যাবে।
ফারিহাঃ কিইইইইইইই.........
মুন্নাঃ নাহ ঠিক আছে আসবো । আমার একমাত্র দাদার নাতির বউয়ের বার্থডে আর আমি আসবো না?
ফারিহাঃ হেহ...বড় বড় কথা,সময় হলেতো ভুলে যাবে।
মনে থাকে যেন। নইলে.....
মুন্নাঃ হুম...মনে থাকবে ,তা পার্টি শুরু হবে কবে?
ফারিহাঃ সন্ধ্যা ৮ টায়।
মুন্নাঃ ওকে আসবো এখন রাখলাম, বাই।
ফারিহাঃ ওকে বাই।
...
পরদিন বিকাল বেলা মুন্না শপে গিয়ে লাভ ডোমেন করা একটা তাজমহল ক্রয় করলো।
ফারিহার বার্থডে গিফট দেওয়ার জন্য।
সন্ধ্যা ৭.৩০ হয়ে গেছে। -----------
এদিকে মুন্না আসার কোনো নাম-ই নেই।
সকল অতিথি এসে উপস্থিত।
ফারিহা না আসতে দেখে ফোন দিলো।
কিন্তু ফোন রিসিভ করতেছেনা।
প্রায় ২০ টা কল দিলো। নাহ রিসিভি হচ্ছেনা।
ফারিহা রেগে আগুন হয়েগেছে।
ফারিহার মা তার রুমে এসে বললেন যে কেক কাটার সময় হয়ে গেছে চলে আসতে,
কিন্তু ফারিহা মুন্নার জন্য অপেক্ষা করতেছে।
প্রায় ৮ টা ১৫,,, মুন্না আসেনি।
শেষমেশ মায়ের কথায় ফারিহা কেক কাটতে গেলো।
কেক কাটা,পার্টি,শেষ।
মুন্না আসেনি,
ফারিহা মনে মনে খুব কষ্ট পায়
রুমে গিয়ে কাঁদতে থাকে।
...
এদিকে....
সন্ধ্যা ৭ টায় হঠাৎ মুন্নার মায়ের হার্টে প্রচণ্ড ব্যাথা শুরু হয়।
মুন্না তড়িঘড়ি করে মাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। আর তাড়াহুড়াতে মোবাইলটা ঘরে ফেলে গেছে। এবং তার মায়ের ছুট্ট একটা অপারেশন করাতে হয়। প্রায় ১০ টায় অপারেশন শেষ হয়। পরদিন সকালে মাকে নিয়ে বাসায় ফিরে।
বাসায় এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ফারিহার অনেক ফোন আর একটা মেসেজ।
মেসেজে লিখা; কাল দেখা করবে।
মুন্না বুঝতে পারে ফারিহা খুব রেগে আছে।
তারপর মাকে রেখে ফারিহাকে কল দিয়ে দেখা করতে যায়। গিয়ে দেখে ফারিহা আগে থেকেই এসে বসে আছে।
মুন্না ভয়ে ভয়ে গিয়ে বসে বলে...
- আসলে ফারিহা কাল মায়ের.......এইটুকু
বলার পরই ফারিহা থামিয়ে দেয়।
ফারিহাঃ আমি তোমাকে কারণ বলতে বলিনি। কি আর বলবে? তোমার ব্যস্ততার কথা এইতো।
তোমার মায়ের এই হয়েছিলো সেই হয়েছিলো তাইতো।
মুন্নাঃ আসলে আমার কথা টা শুনো।
ফারিহাঃ স্টপ! কি শুনবো,হুম?
আমার জন্য তোমার কোনো ভালোবাসাই নেই।
কি আর এমন হয়ে যেতো একদিন মাকে ছেড়ে আসলে। আর তুমি ছাড়া কি আর কেউ নেই? কাল আমি আমার ফ্রেন্ডদের কাছি অপমানিত হয়েছি শুধু তোমার জন্য।
ব্যস. আজ থেকে তোমার আমার কোনো সম্পর্ক নেই।আজ এখানেই খতম। তুমি তোমার মাকে নিয়েই থাকো। এই বলেই ফারিহা উঠে চলে গেলো। মুন্না চলে আসে বাসায়। এসে শুধু একটা মেসেজ দেয়। মেসেজে লিখেছিলঃ
না শুনেইতো চলে গেলে, ওকে যাও ভালো থেকো।
তবে মনে রেখো আমি সব ছাড়তে পারলে ও আমার মাকে ছাড়তে পারবনা।
পারবনা আমি ছাড়তে আমার পৃথিবীকে, কিছু না জেনেই একা বক বক করে চলে গেলে। কাল আমার মায়ের অপারেশন করানোর প্রয়োজন হয়। রাতে মায়ের বুকে ব্যথা উঠায় আমি পাগলের মত হয়ে যাই।
তাড়াহুড়ায় মোবাইল টাও ফেলে চলে আসি।
আমি ছাড়া মায়ের দেখার কেউ নেই।
-
তুমি তো কাল তোমার পার্টি নিয়ে ছিলে।
আর এদিকে আমার উপড় দিয়ে ঝড় গেছে।কিন্তু তুমি সেটা বুঝতে চেষ্টা করনি।
আজ আমি যদি তোমায় বলি যে তুমি তোমার মাকে একেবারে ছেড়ে দিতে,,তার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে পারবেনা।
তখন তোমার অবস্থা কেমন হবে?
নাহ তুমি সেটা চিন্তা না করেই চলে গেছো। ওকে ভালো থেকো। আর অন্যের ক্ষেত্রে অন্তত নিজের মায়ের কথা চিন্তা করো॥
-
মেসেজ টা পাওয়া মাত্রই ফারিহা বুঝতে পারে যে সে কতো বড় ভুল করেছে।
নিজের ভুল বুঝতে পেরে হাওমাউ করে কেঁদে উঠে। আর পরেই মুন্না কে কল দেয়।
মুন্নাঃ হ্যলো! কি?
ফারিহাঃ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। (কেঁদে কেঁদে)
মুন্নাঃ তুমি তো কোনো অপরাধ করনি যে ক্ষমা করবো।
ফারিহাঃ মুন্না প্লিজ। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
মুন্নাঃ ওকে।
ফারিহাঃ আর তুমি কি নিজেকে কি হিরো মনে করো? যে সব কাজ নিজেই করবে।
মায়ের সেবা কি তুমিই করতে জানো?
কাল আমি আমার বাবা-মা কে তোমাদের বাড়িতে পাঠাবো।
তোমার মাকে তুমিই রাজি করাবে কিন্তু।
আর আজ থেকেও আমি ও তোমার মায়ের সঙ্গি হবো। তোমার মায়ের সব দায়িত্ব আমার। মনে থাকে যেন। সব যেন ঠিকঠাক হয়ে যায়। নইলে..............(আনন্দ রাগে)
এবং আগামি সাপ্তাহে যেন বিয়েটা হয়ে যায়। মনে থাকে যেন।
মুন্নাঃ আরে কি বলো। আর তোমার পড়ালেখা? আর আমকেও তো একটু ভাবার সময় দাও।
ফারিহাঃ পড়ালেখা বিয়ের পরেও করা যাবে। নো টাইম মনে থাকে যেন।
মুন্নাঃ একটা আনন্দের হাসি দিয়ে, যো হুকুম মহা রাগি সাহেবা।
ফারিহাঃ কি?????????
মুন্নাঃ নাহ কিছুনা ওকে।
তারপর পারিবারিক ভাবেই মুন্না আর ফারিহার বিয়ে হয়। ফারিহা নিজের মায়ের মতই তার শাশুড়ি কে স্নেহো করে সব সময় কেয়ার করে। মুন্নার থেকেও বেশি।
--------------------------
শেষ কথাঃ
যদি আমরা সবাই মনে মনে চিন্তা করি যে আমারো তো মা আছেন আমারো ত বাবা আছেন। আমার বাবা মা যেভাবে আমাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন, স্নেহো করেছেন।
-
অন্যের বাবা মা ও ঠিক সেইভাবে নিজের সন্তানকে মানুষ করেছেন। আজ আমি কিভাবে তাকে বলি যে নিজের বাবা মাকে ফেলে দিতে।
আমরা সকল ছেলেরা এই কথা কেনো ভাবতে পারিনা যখন ছেলে বাড়ি থেকে রাগ করে না খেয়েই চলে যায় তখন অধিক রাতে একমাত্র মা ই খাবার হাতে নিয়ে ছেলের জন্য অপেক্ষা করে, গার্লফ্রেন্ড বা বউ নয়।
আর শাশুড়িরা যদি এই কথা ভাবি যে আমার যেভাবে মেয়ে আছে তেমনি ভাবে আমার ছেলের বউ ও একজন মায়ের মেয়ে...
বউয়েরা যদি এই কথাটা একবার ভাবি আমার যেমনি মা আছেন আমার শাশুড়ি ও আমার স্বামীর মা। আমার মা আমার কাছে যেমন ঠিক তেমনি আমার শাশুড়িও তার ছেলের কাছে তেমন।
আমরা যদি এই কথা গুলি একবারের জন্য চিন্তাকরি তাহলে এই দেশে কখানই বৃদ্ধাশ্রমের প্রয়োজন হবেনা, কখনো সংসার যুদ্ধ হবেনা। কখনো বউ শাশুড়ির যুদ্ধ দেখা লাগবেনা---।।।
*
লেখকঃ মাহমুদ হাসান (অভদ্র লেখক)
No comments