কয়েকটা_পরোক্ষ_খুন
#কয়েকটা_পরোক্ষ_খুন
:স্যার কি এখনি ঘুমাতে চলে যাবেন?জলিল বললো।"
আচমকা প্রশ্ন শুনে সাদমান সাহেব আপন মনেই লজ্জা পেয়ে গেলেন।নেশাটা বেশ চড়েছে।হ্যালোসুনেশন হচ্ছে।তার অফিসের সুপারভাইজার জলিলের চাকুরী গেলো প্রায় এগারো মাস।তার পরে তাকে কখনো দেখেন নি।এখন প্রায় মধ্যরাত।৬ তলা বাড়ির ছাদে একা বসে হুইস্কি গিলছিলেন।উনার লিমিট পেগ পাঁচ অথবা সাত।আজ নয় পেগ চালিয়েছেন।নইলে এতো রাতে এতো নিরাপত্তা ফাঁকি দিয়ে জলিল বাড়ির ছাদে আসবে কিভাবে?নিশ্চই নেশার ঘোর।সাদমান সাহেব বিচলিত হলেন না।
:না,ঠিক আছি।তুমি বলো;কি খবর তোমার?"হাসি মুখে প্রশ্ন করলেন।
:স্যার আমার চাকুরিটা গেলো কেন?"জলিল বললো।
:আসলে হয়েছি কি,সব দোষ রহমান সাহেবের।দু- কোটি টাকার একটা গন্ডগোল হলো।জিএম সাহেব আমার উপড় চাপ দিলেন।অথচ ইয়ে মানে সব টাকা গায়েব করেছে পিএম রহমান সাহেব।তখন চাকুরী বাঁচাতে গিয়ে তোমাদের কয়েকজনকে দোষারোপ করে ছাঁটাই করতে হয়েছে।"
জলিল মাথা নিচু করে বসে আছে।
:তা কি করছো আজকাল।"সাদমান সাহেব বললেন।
:চাকুরী চলে যাবার পর বেশ কয়েক জায়গায় চাকুরী খুজলাম।পেলাম না।ড্রাইভিং শিখলাম।হরতালের অবস্থা দেখে গাড়ি চালাতে সাহস হয় না।চা বিক্রি করলাম ক' দিন।বউ-বাচ্চাদের নিয়ে অবস্থা খারাপ যাচ্ছিলো।তাও মানিয়ে নিচ্ছিলাম।
কিন্তু আজ ২৭ দিন হলো বাস চাপা পড়ে মারা গেলাম।"
এক শ্বাসে কথা গুলো বলে কাঁদতে লাগলো জলিল।প্রথমে নিঃশব্দে। তারপর হাউমাউ করে,টেনে টেনে কাঁদছে।অশ্রুহীন,বিচ্ছিরি কান্না।
সাদমান সাহেব নিজেও জানেন হ্যালোসুনেশন হচ্ছে।তবুও অবর্ণনীয় ভয় পেলেন।তার সারা শরিরে ঘাম হতে লাগলো।ফোনটা হাতে নিয়ে কাজের ছেলেটাকে কল দিলেন একবার।রিং হচ্ছে;কল ধরছে না।"শালার ব্যাটা মাল খেয়ে মরার মতো ঘুমাচ্ছে।কালকেই চাকুরি নট করবো" বিড়বিড় করে বললেন।
:জলিল,ব্যাপারটায় খুবই দুঃখিত।তা তোমার বউ-বাচ্চার কি খবর?"হাসিমুখে বলার চেষ্টা করলেন।
:তারা কোথায় আছে জানিনা,খুজতাছি।আপনি জানেন কিছু।"কাঁন্না থামিয়ে বাচ্চাদের মতো জিজ্ঞেস করলো জলিল।
:আমি কিভাবে বলবো?"
:স্যার!এই অল্প বয়সী মেয়েটা বাচ্চাটাকে সাথে নিয়া কোথায় যাবে বলতে পারেন,কিভাবে চলবে?
গ্রামে আমার,,,আমার মা!....চাকুরীটা কেন খাইলেন,স্যার?চাকুরীটা থাকলে কি আর এ অবস্থা হতো?"চোখগুলো লাল করে জিজ্ঞেস করলো জলিল।
:রাগ করো না বাবা।শত হোক আমি মুরুব্বি হই তোমার।ভাল থাকবে;দোয়া করবো তোমাদের জন্য।"
:রাগ করে আর কি হবে স্যার!না নিজের প্রাণ ফিরে পাবো,না পরিবার।"
সাদমান সাহেবের চোখের সামনে অভাবে বিপর্যস্ত কয়েকটা পরিবারের ছবি ভাসতে লাগলো।জলিল ছাড়াও আরো ছয় জনের চাকুরী গিয়েছিলো।তারা কি চাকুরি পেয়েছে?তারা তাদের পরিবার নিয়ে কিভাবে আছে?চাকুরি না পেলে তাদেরও নিশ্চই করুণ অবস্থা।তিনি জানেন,প্রত্যেকের পরিবারের করুণ পরিণতির দায় তার।তিনি কি বলবেন সহসা কথা খুঁজে পেলেন না
সাদমান সাহেব উঠে দাঁড়ালেন।এখানে থাকা উচিৎ হবে না।সহসা অন্য আরেকটা কন্ঠ কথা বলে উঠলো।জলিলের পাশে সাদেক দাড়িয়ে আছে।আরো একটা মুখ।আরো একটা।
একে একে সাতজন।তারা সবাই অন্যায়ের শিকার; চাকুরিচ্যুত যুবক।প্রত্যেকের চোখে জানতে চাওয়ার কৌতূহল।কেনো তাদের চাকুরিচ্যুত করা হলো;অপরাধ কি তাদের? তাদের এ চোখ জোড়া স্বপ্ন দেখতো নিশ্চই।বেঁচে থাকার স্বপ্ন।সাতজোড়া চোখ এক আকাশ কৌতূহল নিয়ে সাদমান সাহেবকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে।
-পরদিন সকাল।সাদমান সাহেবের সদ্য তৈরি করা ছ'তলা বাড়িটার পাশে ছোটখাটো একটা জটলা।মানুষের জটলার মাঝখানে মাথা থেতলে যাওয়া একটা লাশ;সাদমান সাহেবের লাশ।কয়েকটা পুরুষ্টু মাছি ভনভন করছে লাশটার মুখের চারপাশ ঘিরে।
.........
★সমাপ্ত★
© ইয়াছিন আরাফাত
:স্যার কি এখনি ঘুমাতে চলে যাবেন?জলিল বললো।"
আচমকা প্রশ্ন শুনে সাদমান সাহেব আপন মনেই লজ্জা পেয়ে গেলেন।নেশাটা বেশ চড়েছে।হ্যালোসুনেশন হচ্ছে।তার অফিসের সুপারভাইজার জলিলের চাকুরী গেলো প্রায় এগারো মাস।তার পরে তাকে কখনো দেখেন নি।এখন প্রায় মধ্যরাত।৬ তলা বাড়ির ছাদে একা বসে হুইস্কি গিলছিলেন।উনার লিমিট পেগ পাঁচ অথবা সাত।আজ নয় পেগ চালিয়েছেন।নইলে এতো রাতে এতো নিরাপত্তা ফাঁকি দিয়ে জলিল বাড়ির ছাদে আসবে কিভাবে?নিশ্চই নেশার ঘোর।সাদমান সাহেব বিচলিত হলেন না।
:না,ঠিক আছি।তুমি বলো;কি খবর তোমার?"হাসি মুখে প্রশ্ন করলেন।
:স্যার আমার চাকুরিটা গেলো কেন?"জলিল বললো।
:আসলে হয়েছি কি,সব দোষ রহমান সাহেবের।দু- কোটি টাকার একটা গন্ডগোল হলো।জিএম সাহেব আমার উপড় চাপ দিলেন।অথচ ইয়ে মানে সব টাকা গায়েব করেছে পিএম রহমান সাহেব।তখন চাকুরী বাঁচাতে গিয়ে তোমাদের কয়েকজনকে দোষারোপ করে ছাঁটাই করতে হয়েছে।"
জলিল মাথা নিচু করে বসে আছে।
:তা কি করছো আজকাল।"সাদমান সাহেব বললেন।
:চাকুরী চলে যাবার পর বেশ কয়েক জায়গায় চাকুরী খুজলাম।পেলাম না।ড্রাইভিং শিখলাম।হরতালের অবস্থা দেখে গাড়ি চালাতে সাহস হয় না।চা বিক্রি করলাম ক' দিন।বউ-বাচ্চাদের নিয়ে অবস্থা খারাপ যাচ্ছিলো।তাও মানিয়ে নিচ্ছিলাম।
কিন্তু আজ ২৭ দিন হলো বাস চাপা পড়ে মারা গেলাম।"
এক শ্বাসে কথা গুলো বলে কাঁদতে লাগলো জলিল।প্রথমে নিঃশব্দে। তারপর হাউমাউ করে,টেনে টেনে কাঁদছে।অশ্রুহীন,বিচ্ছিরি কান্না।
সাদমান সাহেব নিজেও জানেন হ্যালোসুনেশন হচ্ছে।তবুও অবর্ণনীয় ভয় পেলেন।তার সারা শরিরে ঘাম হতে লাগলো।ফোনটা হাতে নিয়ে কাজের ছেলেটাকে কল দিলেন একবার।রিং হচ্ছে;কল ধরছে না।"শালার ব্যাটা মাল খেয়ে মরার মতো ঘুমাচ্ছে।কালকেই চাকুরি নট করবো" বিড়বিড় করে বললেন।
:জলিল,ব্যাপারটায় খুবই দুঃখিত।তা তোমার বউ-বাচ্চার কি খবর?"হাসিমুখে বলার চেষ্টা করলেন।
:তারা কোথায় আছে জানিনা,খুজতাছি।আপনি জানেন কিছু।"কাঁন্না থামিয়ে বাচ্চাদের মতো জিজ্ঞেস করলো জলিল।
:আমি কিভাবে বলবো?"
:স্যার!এই অল্প বয়সী মেয়েটা বাচ্চাটাকে সাথে নিয়া কোথায় যাবে বলতে পারেন,কিভাবে চলবে?
গ্রামে আমার,,,আমার মা!....চাকুরীটা কেন খাইলেন,স্যার?চাকুরীটা থাকলে কি আর এ অবস্থা হতো?"চোখগুলো লাল করে জিজ্ঞেস করলো জলিল।
:রাগ করো না বাবা।শত হোক আমি মুরুব্বি হই তোমার।ভাল থাকবে;দোয়া করবো তোমাদের জন্য।"
:রাগ করে আর কি হবে স্যার!না নিজের প্রাণ ফিরে পাবো,না পরিবার।"
সাদমান সাহেবের চোখের সামনে অভাবে বিপর্যস্ত কয়েকটা পরিবারের ছবি ভাসতে লাগলো।জলিল ছাড়াও আরো ছয় জনের চাকুরী গিয়েছিলো।তারা কি চাকুরি পেয়েছে?তারা তাদের পরিবার নিয়ে কিভাবে আছে?চাকুরি না পেলে তাদেরও নিশ্চই করুণ অবস্থা।তিনি জানেন,প্রত্যেকের পরিবারের করুণ পরিণতির দায় তার।তিনি কি বলবেন সহসা কথা খুঁজে পেলেন না
সাদমান সাহেব উঠে দাঁড়ালেন।এখানে থাকা উচিৎ হবে না।সহসা অন্য আরেকটা কন্ঠ কথা বলে উঠলো।জলিলের পাশে সাদেক দাড়িয়ে আছে।আরো একটা মুখ।আরো একটা।
একে একে সাতজন।তারা সবাই অন্যায়ের শিকার; চাকুরিচ্যুত যুবক।প্রত্যেকের চোখে জানতে চাওয়ার কৌতূহল।কেনো তাদের চাকুরিচ্যুত করা হলো;অপরাধ কি তাদের? তাদের এ চোখ জোড়া স্বপ্ন দেখতো নিশ্চই।বেঁচে থাকার স্বপ্ন।সাতজোড়া চোখ এক আকাশ কৌতূহল নিয়ে সাদমান সাহেবকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে।
-পরদিন সকাল।সাদমান সাহেবের সদ্য তৈরি করা ছ'তলা বাড়িটার পাশে ছোটখাটো একটা জটলা।মানুষের জটলার মাঝখানে মাথা থেতলে যাওয়া একটা লাশ;সাদমান সাহেবের লাশ।কয়েকটা পুরুষ্টু মাছি ভনভন করছে লাশটার মুখের চারপাশ ঘিরে।
.........
★সমাপ্ত★
© ইয়াছিন আরাফাত
No comments