Header Ads

"খ্যান্ডাস কোথাকার "

ফেইসবুকের ন্যায় ছেলেটার সাথে একটা মেয়ের প্রেম হল।
খুনসুটি কথাবার্তা হাসি হাট্টায় দিন যেতে যেতে তারা একেঅপরের ঘনিষ্ঠ হতে লাগলো এবং একসময় দুইজনেই সরাসরি দেখা করার মনস্থির করলো। যা বলা তাই করা। তো অাসলো সেইদিন ; নিরিবিলি একটা জায়গায় দূর হতে একে অপরকে প্রথম দেখাতেই দুইজনের সব সাহস যেন তাদের লাফ দিয়ে কাপ্তাই লেকে ঝাপ মারলো। পাশাপাশি বসেও দুইজন বোবার চরিত্রে অভিনয় করতে লাগলো।
 এইদিক দেখছে কিছুক্ষণ তো ওইদিক ফিরছে কতক্ষণ, জীবনে ভালো করে কোন গাছের দিকে লক্ষ্য না করা ছেলেটাও অাজ গভীর মনোযোগে সামনের গাছটিকে দেখছে। যার শরীরে খানিক অাগে একটা বদমাইশ তীব্র হাওয়া তলোয়ার দিয়ে অাঘাত হানে। যুদ্ধে বৃক্ষটি'কে তার কান্ড মূল শেকড় সব বাঁচাতে গিয়ে একটি পাতার বিসর্জন দিতে হয়। বেচারা পাতাটা তলোয়ারের অাঘাতে একদম ছিন্নবিচ্ছিন্ন যাকে বলে জর্জরিত হয়ে স্লো মোশনে উপর থেকে নিচে ডিকবাজি দিয়ে পড়তে লাগলো। একবার এইপীঠ তো অাবার ওপীঠ হয়ে পাতাটা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবে করবে অবস্থায় মাটিতে এসে পড়লো। পাতাটির যায়যায় অবস্থায় ছেলেটি মেয়েটির পানে মাথা ঘুরিয়ে সামান্য তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল কেননা মেয়েটিও সেই সেইম পাতার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে অাছে। ছেলেটি মনে মনেই বললো কাহিনী দেখি "অামি যা দেখি তুমিও কি তা দেখ?" এর মত হয়ে গেল।
২/
ওরা একে অপরের থেকে নজর হাটায় এবং পুনরায় অাবার পাতাটায় মনোযোগী হয়। দেখতে পায় পাতাটা বাংলা সিনেমায় অাইসিওতে থাকা রোগীদের মতন বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে যেন অক্সিজেনের অভাবে এখুনি মারা যাবে। সাথেসাথেই মেয়েটার এইভেবেই খুব কষ্ট হল যে- যা দেখ কারবার ; গাছ অামাদের অক্সিজেন দেয় অার সে গাছেরই একটা অংশ হয়ে পাতাটা অাজ অক্সিজেনের অভাবে এভাবে মারা যাবে ??
কিন্তু ছেলেটার এমন কিছুই মনে হল নাহ। কেননা বাংলা সিনেমার কথা যখন উল্লেখ অাছে তাই নেহাত এটা ওভার অ্যাকটিং হবে। কেননা সে দেখেছে- যক্ষ্মা হয়েছে তাই তিন সপ্তাহ কাশির চরিত্রের অভিনেতাকে সে সারা সিনেমাই কাশতে দেখেছে। যা ওভার অ্যাকটিং ছাড়া অার কিছুই ছিল নাহ। পাতাটার ঠিক এবার প্রাণ যাবে যাবে অবস্থায় হঠাৎ কোথ থেকে যেন পাতার উপর একটা বুটজুতো ধারি মানুষের পায়ের চাপ পড়লো এবং সাথেসাথে পাতাটি ছিন্নভিন্ন হয়ে তার মগজ একদিকে নাড়িভুঁড়ি অন্যদিকে লেটিয়ে পড়লো। তাৎক্ষণিক পাতাটির মৃত্যু ঘটালো।
৩/
মেয়েটা পরক্ষণেই নিচে ছেলেটার পায়ের দিকে তাকালো ছেলেটিও তা বুঝতে পেরে নিজ মনেমনে বলল- ভাগ্যিস অাজ বুটজুতো পরে অাসি নি। নয়ত এখনে সম্পর্কের ইতি টানতে হতো। পাশাপাশি অবস্থায় ওরা এখনো বসে অাছে এবং পাতাটার প্রাণ যাওয়ার পরে হতে ওরা অাবারো নিজের ভিতরেই এদিক ওদিক চটপট করতে লাগলো। এখনঅবধি কেউই তারা কথা বলার সাহস যোগাতে পারছে নাহ। বললেও কি বলবে ; কি বলে শুরু করবে তার কিছুই যে কেউ ঠিক করতে পারছে না। ছেলেটা গাছটার পানে অাবার তাকালো এবং মনে মনেই মেয়েটাকে বলল-
অাচ্ছা অামাদের ভালোবাসাটাও কি ওই নীল অাকাশের নিচে বিভিন্ন রঙ্গের নানান পাখির অাশ্রয়স্থল শান্তশিষ্ট সবুজ ন্যায় এই বৃক্ষটির মতন সজীব হবে ?
অাশ্চার্য্য ভাবে কিংবা ট্যালিপ্যাথির সহায়তায় মেয়েটি তা শুনতে পেল এবং সেও মনে মনে এর উওর দিল-
হবে না কেন অবশ্যই হবে তবে তোমাকে যে তার জন্যি প্রতিদিন পানি ঢালতে হবে। ;-)
৪/
ছেলেটার এবার খুব ইচ্ছে হল মেয়েটার হাত ধরতে এবং ইনিয়ে বিনিয়ে অঙ্গভঙ্গিতে সে তা প্রকাশও করলো। মজার ব্যাপার এবার মেয়েটা তাতে সাই দিল। ছেলেটার সাহস খানিক বাড়লো এবং চট করেই সে তার হাত ধরে বসলো। হাত ধরাধরি পর্যন্ত এগিয়েছে তারা কিন্তুু কথা বলার সাহস হচ্ছে না। ছেলেটা একটা প্রবাদ শুনেছিল "কান নিয়েছে চিলে"
তার দৃঢ়বিশ্বাস ওই সেইম চিলটাই অাজ তাদেরও কথা চুরি করে নিয়েছে। মেয়েটির বামহাতের ওপর ছেলেটার ডানহাত। ছেলেটা অাছে অন্যদিকে তাকিয়ে অার মেয়েটা পা ধোলাচ্ছে ; যা নিতান্তই দুইজনের স্বাভাবিক অাছি দেখানোর ভান। এভাবে অারো বেশ কিছুক্ষণ গেল এবং দুষ্ট ছেলেটার একটু একটু করে সাহস বাড়তে লাগলো, সে এবার মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরার ভাব পোষণ করলো ঠিক শাহরুখ খানের মত দুইহাত দুইদিকে ছড়িয়ে। যা দেখে মেয়েটির ইচ্ছে করছে কাজলের মত তার বুকে উড়ে এসে জুড়ে অর্থাৎ ঝাপিয়ে পড়তে কিন্তু পরক্ষণেই অনুভব করলো ওপর প্রান্ত থেকে অদৃশ্য এক ভয় যেন তার হাত ধরে রেখেছে। এদিক ওদিক তাকালো কিছুক্ষণ মেয়েটা হয়ত কেউ তাকিয়ে অাছে কিনা দেখছিল এইদিকে তার প্রেমিক মহোদয় এখনো শাহরুখ খানের সেই সিগনেচার পোজ মেরে অাছে যা দেখতে কিছুটা অস্থিকর ও ছেলেটা কে পিকুলিয়ারের মত লাগছে। মেয়েটার তাতে মায়া হল এবং সে এবার সব বাঁধা ভয় বিপত্তি ফেলে অালতো করে ছেলেটার বুকে মাথা রাখলো। যেই মাথাটা রাখলো সাথেসাথেই সে ছেলেটার বুকের পাশে অর্থাৎ বগলের নিচ হতে মরে পঁচা ডজনখানেক উঁকুনের দুর্গন্ধ ফেতে লাগলো। সত্যি কি গন্ধটা সেখান থেকে অাসছে নিকি পরীক্ষা করতে সে ; ছেলেটা টের না পায় মত করে তার ডান চোখ দিয়ে ছেলেটার বাম বগলের দিকে লক্ষ্য করলো এবং সাথেসাথেই অাবিষ্কার করল-
এই কি, তার বগলে তো এক সমুদ্র ঘাম। জঘন্য দৃশ্য, মেয়েটার ঘেন্না হল, সে অার বেশিক্ষণ ওইদিকে তাকিয়ে থাকতে পারছে না, দু'চোখ তার অলরেডি ঝাপসা দিচ্ছে মাথাটাও ভিষণ ধরেছে, ঘাম অার উঁকুন পচে মরার তীব্র দুর্গন্ধে তার বমি বমি অাসছে। তাই বুদ্ধিমতী মেয়ে সে বেশি দেরি করলো না সাথেসাথেই মাথাটা সরিয়ে নিয়ে অাসলো এবং শরীরের ভারসাম্য ঠিক করতে করতেই তার দশ বিশ সেকেন্ডের মত গেল। এখন সে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক তাই উঠে দাঁড়ালো ; এবং এত্তক্ষন সময় ব্যয়িত তাদের এই দেখাসাক্ষাৎ এ এই ফার্স্টের মত ;
ছেলেটির দিকে তাকিয়ে নয়, চোখের নিচের কালো দাগের দিকেও নয় বরংতু ছেলেটার বগলের দিকে অাঙ্গুল দিয়ে তাক করে এই প্রথম একটা কথা বললো এবং কথাটি ছিল-
.
খ্যান্ড্যাস কোথাকার :-P

No comments

Theme images by fpm. Powered by Blogger.