Header Ads

তুতেনখামেনের অভিশাপ

#তুতেনখামেনের_অভিশাপ
=====================
কামরুজ্জামান কাজল

গোটা সম্রাজ্যে তুমুল ব্যস্ততা । আলোর ফোয়ারা, দিকে দিকে জয়ধ্বনি, একটা উৎসব উৎসব আমেজ । প্রস্তরশিল্পী থেকে শুরু করে মাটিকাটা শ্রমিক—কেউই ফুরসত পাচ্ছে না । ফারাও তুতেনখামেন স্বয়ং তদারকি করছেন সব!

বুঝলে আনখেন, মৃত্যুটা খুব জরুরী । এই নশ্বর পৃথিবীর পরেই আসল জীবন । সেই জীবনে রয়েছে অজস্র ঐশ্বর্য আর সীমাহীন সমৃদ্ধি— তুতেন তামাক টানার জন্য থামেন । রাণী আনখেনের মনটা ভালো নাই । তবুও তুতেনকে সঙ্গ দিতে প্রশ্ন করেন—আচ্ছা, আসল জীবন কী?

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সমানতালে ঢোল বাজছে । দ্রিম দ্রিম দ্রিম ।

পাথর আনছে । পাথর কাটছে । লোহার গরম শিখায় লাল স্ফুলিঙ্গ, দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হচ্ছে একের পর এক শব্দ ছবি । কী নেই সেখানে! হরিণ শাবক, বনের ভেতর সরু রাস্তা, পাহাড়ের চূড়ায় বসে সিংহের উন্মত্ত হুঙ্কার । পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে নীল নদের স্রোত!

তুতেনখামেন একটি ছাগলছানাকে প্রাণপণ দৌড়াতে দেখছিলেন । আশে পাশে তাকিয়ে তার ভ্রু’টা কুঁচকে ওঠে । নাহ, এত ভয় পাচ্ছে কেন ছাগলটি! ওকে শিকার বা মারার জন্য কেউ তো নেই!

ছাগলছানাটি বিশাল দৌড়ে ক্লান্তপ্রায় । জোরে জোরে শ্বাস ফেলে, তবুও থামে না । তবে কি তুমি কী প্রস্তুত?— আওয়াজটা শুনে পেছনে তাকাতেই— বিশাল ফণা তোলা এক সাপ! তুতেনের দিকে এগিয়ে আসে ।

তুতেনের ঘুম ভেঙে যায় । আনখেন পানির পাত্রটি হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করে— আবারও বাবাকে স্বপ্ন দেখেছেন? তুতেন আমতা আমতা করে বলে— কণ্ঠটা যে তাঁর-ই!

দ্রুতগতিতে কাজ চলতে থাকে । ফারাও থাকবে বলে কথা! তার থাকার সুবিধার জন্য রাখা হয় সোনার বাটি, সোনার ফল, সোনার তৈরী মগ! মৃত ফারাও মমি থেকে জীবিত হয়ে উঠে যেন কোনো কষ্ট না পান, তার জন্য একটা রূপার বাক্সে ভর্তি করে দেয়া হয় অজস্র সম্পত্তি!

অবশেষে দরজাটা বন্ধ করা হয়! কেউ যেনো সমাধিটি খুঁজে না পায়, সেজন্য  সাজানো হয় ভুলভুলাইয়া । অবশেষে পিরামিডের মুখে খোদাই করা হয় পবিত্র হায়ারোগ্লিফির হরফ! তাতে লেখা— ফারাও তুতেনখামেন !

...

তুতেনখামেন সত্যি-ই মমি থেকে জেগে ওঠেন, ছয়শ বছর পর! তাকে দেয়া সম্পত্তিও অক্ষত থাকে । অন্ধকার হাতড়ে সিংহাসনে বসেই ভ্রু’টা কুঁচকে উঠে তাঁর! প্রজারা সব কোথায়! এ যে মৃতরাজ্য! চারপাশে ভরে আছে শুধু কংকালের স্তুপ!

তুমি কী এবার প্রস্তুত তুতেন?— অশরীরী সেই আওয়াজে প্রাসাদটি গমগম করতে থাকে । তুতেনখামেন জড়সড় হয়ে প্রার্থনা করতে থাকে— হায় ইখনাটন! এটাও যদি স্বপ্ন হতো!

দূরে বয়ে চলা নীলনদের তীর ঘেঁষে বাঁশের ভেলায় ভেসে যাচ্ছিলো অজস্র মৃত লাশ । সাধারন প্রজাদের মমি করার কোনো নিয়ম ছিলো না ।

No comments

Theme images by fpm. Powered by Blogger.