* আমার সুখ *
ক্যাটাগরী- সাহিত্য।
-------------------তাহমিনা নাহার।
২৯-৪-২০১৭
-------------------
* একদিন ছিলো, এই আমি যে এতো সুখী
আজ,সেই আমি প্রতিটা মুহুর্ত কাটিয়েছি
নিজেকে শেষ করে দেয়ার চিন্তায়। শুধু
চিন্তাই নয় দু' একবার সে পথে পা ও
বাড়িয়েছি। সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে
ফিরিয়ে এনেছে আমার বাবা, মা।
তাদের একমাত্র মেয়ে ছিলাম আমি।
আমার কোন কিছুর অভাব ছিলোনা,
ভালোবাসারতো নয়ই,সে ভালোবাসার
জোড়েই হয়তো আমি জীবন ফিরে
পেয়েছি।
---- একমাত্র মেয়ে বলে বাবা,মার ছেলে
বলতেও আমি ছিলাম,মেয়েও আমি।
আমাকে দিয়ে পুরণ করতে চেয়েছে
তারা তাদের সখ আহ্লাদ। সেটা আমি
বুঝতাম, নিজেকে খুব সুখী ভাবতাম,
আমার বাবা,মার স্বপ্ন পূরণের জন্য
বদ্ধপরিকরও ছিলাম। কোথা থেকে যে
কি হয়ে গেলো! আমি প্রেমে পড়লাম
আমার শহরের ছেলে রাহুলের সাথে, দু'জনই একই ক্লাসে, ভিন্ন স্কুলে পড়ি।
স্কুলের পর প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও আধা ঘন্টার জন্য হলেও
রাহুলের সাথে দেখা করতে গিয়েছি।
এত অল্প সময়ের দেখা রাহুল মেনে
নিতে পারতোনা, আমাকে জোর করে
আটকে রাখতে চাইতো,আমি তার কাছ
থেকে জোর করে ফিরে আসতাম বাসায়।
কিন্তু মনটা পরে থাকতো রাহুলের কাছে।
খুব কষ্ট হতো, ভাবতাম আর একটু সময়
থাকলেও পারতাম। এমনি করে করে
দিনের পর দিন আমাদের সম্পর্ক গাঢ়
হতে থাকে। এরমধ্যে আমাদের এস,এস,
সি পরীক্ষা হয়ে গেলো। আমার রেজাল্ট
ছিলো বেশ ভালো, তবে রাহুল কোনরকম
পাশ করেছে, ভর্তি হলাম কলেজে আমরা।
কিন্তু কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছি রাহুল
যেন আগের মতো নেই। পড়াশুনা যে
একেবারেই করেনা সেটা বুঝা যায়।
কোথায় যেন খুইয়ে থাকে আমার সাথে
বসে থেকেও। জান্তে চাই একদিন,
" কি হয়েছে তোমার?
" কই, কিছু নাতো! ঠিক আছি আমি।
মলিন একটা হাসি দিয়ে ভালো আছে বলে
কিন্তু আমার মন বলে সে ভালো নেই।
এমনি করে আমাদের দিন যাচ্ছে, আমি
পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি, রাহুল দেখা যাচ্ছে
মাঝে মাঝে ক্লাসেই আসেনা।
এমনি তিনদিন ক্লাসে এলোনা, চারদিনের
দিন এলো খুব উদাস হয়ে, এসেই আমাকে
খোঁজ করছিলো, আমার বান্ধবী এসে
বল্লো সে আমাকে খুঁজছে, এগিয়ে গিয়ে
যা দেখলাম, সে যেন রাহুল নয়, অন্য কেউ। কেমন যেন ছন্নছাড়া লাগছে।
আমাকে দেখেই বল্লো,
" কিছু টাকা দাও, খুব দরকার।
" কোথায় ছিলে, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে
কেন?
" পরে বলবো সব, আগে টাকা দাও।
" দেখো, এই মুহুর্তে টাকা নেই, বিকেলে
দেই?
আমতা, আমতা,করছিলো, তবুও করার
কিছু ছিলোনা। বল্লাম,
" বিকেলে প্রাইভেট স্যারের বাসার কাছাকাছি থেকো।
দ্রুত চলে গেলো আর কিছু না বলে।
আসবে কি আসবেনা সেটাও বলে গেলোনা। কি হলো, ভাবতে ভাবতে বিকেল
হলো। আব্বুর দেয়া প্রাইভেট স্যারের টাকাটা দিবো ভাবছি। কিন্তু পরে স্যারের
টাকা কোথা থেকে দেবো? প্রেমের জন্য
মিথ্যে বলতে হলো,
" আম্মু টাকাটা এইখানে রেখেছিলাম খুঁজে
পাচ্ছিনা।
" যাবে আর কোথায়, ঘরেই তো থাকবে।
আম্মুও আমার সাথে খুঁজলো, না পেয়ে
আবার টাকা দিলো। স্যারের বাসার কাছে
রাহুলকে দেখতে পেলাম, এগিয়ে এলো।
কোনকিছু না বলেই হাত বাড়িয়ে বলে,
" দাও টাকাটা।
দিতে দিতে জান্তে চাইলাম,
" ক্লাসে আসছোনা কেন?
কোনরকম জবাব কিছু একটা দিয়েই
খুব তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো। পেছন
থেকে চিৎকার করে বলে দিলাম,
"ক্লাসে এসো।
জবাব দিলোনা, ফিরেও দেখেনি।
এরপর আরো দু'বার টাকা চেয়ে নিয়েছে।
কম করে হলেও দিয়েছি, ভালো যে বাসি!
দু'তিন দিন পর পর ক্লাসে আসে। এমনি
করে আমাদের এইচ, এস,সি পরীক্ষার
সময় ঘনিয়ে এলো, পরীক্ষার ফিস দেওয়ার সময় সে এসে বলছে,
" ফিস হারিয়ে ফেলেছি, দিতে পারবোনা
পরীক্ষা।
আমি আর কিভাবে দেবো বাসা থেকে।
শেষপর্যন্ত আমার গলার চেইনটা বিক্রি
করে তার হাতে টাকাটা দিলাম। যেন
পরীক্ষাটা দেয়।
পরীক্ষার সময় দেখা গেলো সে হলেই
এলোনা। ফোন করলে ধরেনা। পরীক্ষার
শেষে তার দেখা পেলাম, কেমন উদভ্রান্তের
মতো চেহারা হয়েছে, দেখে খুব মায়া হচ্ছে।
হঠাৎ করেই আমার কাছে এসে কান্নায়
ভেঙ্গে পড়ে বলছে,
" আমাকে বাঁচাও তুমি।
" কি হয়েছে তোমার, বলো!
যা বল্লো, আমার পা থেকে মাথা অবদি দুলে উঠলো, সে ড্রাগ আসক্ত। খুব
অনুনয় করে বলছে, সে বাঁচতে চায়।
কি করবো, ভালো যে বাসি প্রচন্ড!
এক মুহুর্তও চিন্তা না করে বিয়ে করার
সিদ্ধন্ত নিয়ে নিলাম, তার কাছাকাছি থেকে
তাকে সুস্থ্য করে তোলার জন্য। নিজের
কিছু গহনা ছিলো, সেগুলো নিয়ে পরের
দিনই বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলাম। বিয়ে
করলাম। ভুল করেছি চরম, ভালো সে
হয়নি, বরং তার ব্যবহার, মেজাজ হয়ে
গেছে খিটখিটে, কথায় কথায় হাত তুলে
আমার গায়ে, টাকার জন্য। গয়না বেচার
টাকা প্রায় শেষ দু' মাসে। সংসারতো জুড়েছি, চলবে কিভাবে? অন্যদিকে তার
মারধোরতো আছেই। আর যেন টিকতে
পারছিলামনা। আমার বাবা, মা ও আমার
ব্যপারে আর খোঁজ নেয়না। যখন অবস্থা
খুব খারাপ তখন আমার এক বান্ধবীর
মাধ্যমে সব জেনে আমার মা এসে আমাকে নিয়ে গেলো সাথে করে বাসায়।
রাহুল তখন ছিলোনা সেখানে। ফিরে
এসে আমাকে না পেয়ে আমার বাবার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে আমাকে ডাকছে তার সাথে ফিরে যাবার
জন্য। সাড়া না পেয়ে কিছুক্ষন পর ফিরে
গিয়েছে।
এরপর থেকে আমি লজ্জ্বায়, ঘৃনায় মুখ
লুকাতাম নিজের বাবা,মার কাছেও। বাইরে
বেরুতে লজ্জ্বা পেতাম, মনে হতো সবাই
আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কেমন যেন
আর বাঁচার আগ্রহ জাগতোনা। দু'বার
মরতে চেয়েও পারিনি। বাবা,মা চোখে
চোখে রাখতো, তাই পারিনি। একবার
ঘুমের ঔষধের জন্য হসপিটালে ছিলাম।
প্রায় মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছি।
এরপর থেকে প্রতিটাক্ষন মা আমার সাথে
থাকতো। প্রচন্ড আদরের মেয়েটাকে আরো
আদর দিয়ে তার ভিতরের আত্মবিশ্বাস
ফিরিয়ে দিতে থাকলো একটু একটু করে।
এইচ,এস,সি রেজাল্ট হলো আমার,
খুব ভালো হলো, অনার্স করেছি এরপর।
একটা ব্যংকে জব নিলাম। পুরোপুরি
ভুলতে পারছিনা বিগত জীবনের কথা।
অন্যদিকে বাবা,মা বিয়ের কথা বলেন,
আমার দিক থেকে কোনই সাড়া নেই।
ভাবি, কাকে আমি ঠকাবো! কে আমাকে
নেবে সবজেনে! নেবার পরও এসব নিয়ে
কথা বলবেনা? তাই আর বাবা, মার কথা
রাখতে পারছিনা। তাদের বলে দিয়েছি,
" আর নয়, আমি তোমাদের কাছেই থাকব।
আমার এক কলিগ আমাকে পছন্দ করতো, আমাকে জানিয়েছে, কোন কথা
বলিনি, এরপর একদিন মানা করেছি।
সে আমার বাবা,মার কাছে প্রস্তাব নিয়ে
গেছে। সেদিন তাকে আমি বলেছি আমার
জীবনের ঘটে যাওয়া কালো ঘটনার কথা।
" আপনি সুখী হতে পারবেননা, আমারও
বিশ্বাস নিঃশেষ হয়ে গেছে পুরুষের উপর
থেকে।
" সব পুরুষ এক হয়না, আরেকটাবার
বিশ্বাস করেই দেখুননা!
তারপর? বাবা,মায়ের আকুতির কাছে
হার মানলাম। রাজী হলাম শুধু তাদের
জন্য।
বিয়ের পর আমার স্বামী অস্ট্রলিয়া যাবার
চেষ্টা করলো, তার কাগজ পত্র হয়েও গেলো, কিছুদিন পর আমারও হলো।
আমিও চলে এলাম অস্ট্রলিয়া। ভালো
আছি, সুখে আছি, তিনটি সুইট বেবীর
মা,বাবা হয়েছি আমরা।
-----------------------------------------------------
আমার জবানীতে আমি মাঝে মাঝে
গল্প, কবিতা লিখি। কেউ ভুল করেও
ভাববেননা আমার জীবনের গল্প,প্লীজ।
ক্যাটাগরী- সাহিত্য।
-------------------তাহমিনা নাহার।
২৯-৪-২০১৭
-------------------
* একদিন ছিলো, এই আমি যে এতো সুখী
আজ,সেই আমি প্রতিটা মুহুর্ত কাটিয়েছি
নিজেকে শেষ করে দেয়ার চিন্তায়। শুধু
চিন্তাই নয় দু' একবার সে পথে পা ও
বাড়িয়েছি। সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে
ফিরিয়ে এনেছে আমার বাবা, মা।
তাদের একমাত্র মেয়ে ছিলাম আমি।
আমার কোন কিছুর অভাব ছিলোনা,
ভালোবাসারতো নয়ই,সে ভালোবাসার
জোড়েই হয়তো আমি জীবন ফিরে
পেয়েছি।
---- একমাত্র মেয়ে বলে বাবা,মার ছেলে
বলতেও আমি ছিলাম,মেয়েও আমি।
আমাকে দিয়ে পুরণ করতে চেয়েছে
তারা তাদের সখ আহ্লাদ। সেটা আমি
বুঝতাম, নিজেকে খুব সুখী ভাবতাম,
আমার বাবা,মার স্বপ্ন পূরণের জন্য
বদ্ধপরিকরও ছিলাম। কোথা থেকে যে
কি হয়ে গেলো! আমি প্রেমে পড়লাম
আমার শহরের ছেলে রাহুলের সাথে, দু'জনই একই ক্লাসে, ভিন্ন স্কুলে পড়ি।
স্কুলের পর প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও আধা ঘন্টার জন্য হলেও
রাহুলের সাথে দেখা করতে গিয়েছি।
এত অল্প সময়ের দেখা রাহুল মেনে
নিতে পারতোনা, আমাকে জোর করে
আটকে রাখতে চাইতো,আমি তার কাছ
থেকে জোর করে ফিরে আসতাম বাসায়।
কিন্তু মনটা পরে থাকতো রাহুলের কাছে।
খুব কষ্ট হতো, ভাবতাম আর একটু সময়
থাকলেও পারতাম। এমনি করে করে
দিনের পর দিন আমাদের সম্পর্ক গাঢ়
হতে থাকে। এরমধ্যে আমাদের এস,এস,
সি পরীক্ষা হয়ে গেলো। আমার রেজাল্ট
ছিলো বেশ ভালো, তবে রাহুল কোনরকম
পাশ করেছে, ভর্তি হলাম কলেজে আমরা।
কিন্তু কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছি রাহুল
যেন আগের মতো নেই। পড়াশুনা যে
একেবারেই করেনা সেটা বুঝা যায়।
কোথায় যেন খুইয়ে থাকে আমার সাথে
বসে থেকেও। জান্তে চাই একদিন,
" কি হয়েছে তোমার?
" কই, কিছু নাতো! ঠিক আছি আমি।
মলিন একটা হাসি দিয়ে ভালো আছে বলে
কিন্তু আমার মন বলে সে ভালো নেই।
এমনি করে আমাদের দিন যাচ্ছে, আমি
পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি, রাহুল দেখা যাচ্ছে
মাঝে মাঝে ক্লাসেই আসেনা।
এমনি তিনদিন ক্লাসে এলোনা, চারদিনের
দিন এলো খুব উদাস হয়ে, এসেই আমাকে
খোঁজ করছিলো, আমার বান্ধবী এসে
বল্লো সে আমাকে খুঁজছে, এগিয়ে গিয়ে
যা দেখলাম, সে যেন রাহুল নয়, অন্য কেউ। কেমন যেন ছন্নছাড়া লাগছে।
আমাকে দেখেই বল্লো,
" কিছু টাকা দাও, খুব দরকার।
" কোথায় ছিলে, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে
কেন?
" পরে বলবো সব, আগে টাকা দাও।
" দেখো, এই মুহুর্তে টাকা নেই, বিকেলে
দেই?
আমতা, আমতা,করছিলো, তবুও করার
কিছু ছিলোনা। বল্লাম,
" বিকেলে প্রাইভেট স্যারের বাসার কাছাকাছি থেকো।
দ্রুত চলে গেলো আর কিছু না বলে।
আসবে কি আসবেনা সেটাও বলে গেলোনা। কি হলো, ভাবতে ভাবতে বিকেল
হলো। আব্বুর দেয়া প্রাইভেট স্যারের টাকাটা দিবো ভাবছি। কিন্তু পরে স্যারের
টাকা কোথা থেকে দেবো? প্রেমের জন্য
মিথ্যে বলতে হলো,
" আম্মু টাকাটা এইখানে রেখেছিলাম খুঁজে
পাচ্ছিনা।
" যাবে আর কোথায়, ঘরেই তো থাকবে।
আম্মুও আমার সাথে খুঁজলো, না পেয়ে
আবার টাকা দিলো। স্যারের বাসার কাছে
রাহুলকে দেখতে পেলাম, এগিয়ে এলো।
কোনকিছু না বলেই হাত বাড়িয়ে বলে,
" দাও টাকাটা।
দিতে দিতে জান্তে চাইলাম,
" ক্লাসে আসছোনা কেন?
কোনরকম জবাব কিছু একটা দিয়েই
খুব তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো। পেছন
থেকে চিৎকার করে বলে দিলাম,
"ক্লাসে এসো।
জবাব দিলোনা, ফিরেও দেখেনি।
এরপর আরো দু'বার টাকা চেয়ে নিয়েছে।
কম করে হলেও দিয়েছি, ভালো যে বাসি!
দু'তিন দিন পর পর ক্লাসে আসে। এমনি
করে আমাদের এইচ, এস,সি পরীক্ষার
সময় ঘনিয়ে এলো, পরীক্ষার ফিস দেওয়ার সময় সে এসে বলছে,
" ফিস হারিয়ে ফেলেছি, দিতে পারবোনা
পরীক্ষা।
আমি আর কিভাবে দেবো বাসা থেকে।
শেষপর্যন্ত আমার গলার চেইনটা বিক্রি
করে তার হাতে টাকাটা দিলাম। যেন
পরীক্ষাটা দেয়।
পরীক্ষার সময় দেখা গেলো সে হলেই
এলোনা। ফোন করলে ধরেনা। পরীক্ষার
শেষে তার দেখা পেলাম, কেমন উদভ্রান্তের
মতো চেহারা হয়েছে, দেখে খুব মায়া হচ্ছে।
হঠাৎ করেই আমার কাছে এসে কান্নায়
ভেঙ্গে পড়ে বলছে,
" আমাকে বাঁচাও তুমি।
" কি হয়েছে তোমার, বলো!
যা বল্লো, আমার পা থেকে মাথা অবদি দুলে উঠলো, সে ড্রাগ আসক্ত। খুব
অনুনয় করে বলছে, সে বাঁচতে চায়।
কি করবো, ভালো যে বাসি প্রচন্ড!
এক মুহুর্তও চিন্তা না করে বিয়ে করার
সিদ্ধন্ত নিয়ে নিলাম, তার কাছাকাছি থেকে
তাকে সুস্থ্য করে তোলার জন্য। নিজের
কিছু গহনা ছিলো, সেগুলো নিয়ে পরের
দিনই বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলাম। বিয়ে
করলাম। ভুল করেছি চরম, ভালো সে
হয়নি, বরং তার ব্যবহার, মেজাজ হয়ে
গেছে খিটখিটে, কথায় কথায় হাত তুলে
আমার গায়ে, টাকার জন্য। গয়না বেচার
টাকা প্রায় শেষ দু' মাসে। সংসারতো জুড়েছি, চলবে কিভাবে? অন্যদিকে তার
মারধোরতো আছেই। আর যেন টিকতে
পারছিলামনা। আমার বাবা, মা ও আমার
ব্যপারে আর খোঁজ নেয়না। যখন অবস্থা
খুব খারাপ তখন আমার এক বান্ধবীর
মাধ্যমে সব জেনে আমার মা এসে আমাকে নিয়ে গেলো সাথে করে বাসায়।
রাহুল তখন ছিলোনা সেখানে। ফিরে
এসে আমাকে না পেয়ে আমার বাবার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে আমাকে ডাকছে তার সাথে ফিরে যাবার
জন্য। সাড়া না পেয়ে কিছুক্ষন পর ফিরে
গিয়েছে।
এরপর থেকে আমি লজ্জ্বায়, ঘৃনায় মুখ
লুকাতাম নিজের বাবা,মার কাছেও। বাইরে
বেরুতে লজ্জ্বা পেতাম, মনে হতো সবাই
আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কেমন যেন
আর বাঁচার আগ্রহ জাগতোনা। দু'বার
মরতে চেয়েও পারিনি। বাবা,মা চোখে
চোখে রাখতো, তাই পারিনি। একবার
ঘুমের ঔষধের জন্য হসপিটালে ছিলাম।
প্রায় মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছি।
এরপর থেকে প্রতিটাক্ষন মা আমার সাথে
থাকতো। প্রচন্ড আদরের মেয়েটাকে আরো
আদর দিয়ে তার ভিতরের আত্মবিশ্বাস
ফিরিয়ে দিতে থাকলো একটু একটু করে।
এইচ,এস,সি রেজাল্ট হলো আমার,
খুব ভালো হলো, অনার্স করেছি এরপর।
একটা ব্যংকে জব নিলাম। পুরোপুরি
ভুলতে পারছিনা বিগত জীবনের কথা।
অন্যদিকে বাবা,মা বিয়ের কথা বলেন,
আমার দিক থেকে কোনই সাড়া নেই।
ভাবি, কাকে আমি ঠকাবো! কে আমাকে
নেবে সবজেনে! নেবার পরও এসব নিয়ে
কথা বলবেনা? তাই আর বাবা, মার কথা
রাখতে পারছিনা। তাদের বলে দিয়েছি,
" আর নয়, আমি তোমাদের কাছেই থাকব।
আমার এক কলিগ আমাকে পছন্দ করতো, আমাকে জানিয়েছে, কোন কথা
বলিনি, এরপর একদিন মানা করেছি।
সে আমার বাবা,মার কাছে প্রস্তাব নিয়ে
গেছে। সেদিন তাকে আমি বলেছি আমার
জীবনের ঘটে যাওয়া কালো ঘটনার কথা।
" আপনি সুখী হতে পারবেননা, আমারও
বিশ্বাস নিঃশেষ হয়ে গেছে পুরুষের উপর
থেকে।
" সব পুরুষ এক হয়না, আরেকটাবার
বিশ্বাস করেই দেখুননা!
তারপর? বাবা,মায়ের আকুতির কাছে
হার মানলাম। রাজী হলাম শুধু তাদের
জন্য।
বিয়ের পর আমার স্বামী অস্ট্রলিয়া যাবার
চেষ্টা করলো, তার কাগজ পত্র হয়েও গেলো, কিছুদিন পর আমারও হলো।
আমিও চলে এলাম অস্ট্রলিয়া। ভালো
আছি, সুখে আছি, তিনটি সুইট বেবীর
মা,বাবা হয়েছি আমরা।
-----------------------------------------------------
আমার জবানীতে আমি মাঝে মাঝে
গল্প, কবিতা লিখি। কেউ ভুল করেও
ভাববেননা আমার জীবনের গল্প,প্লীজ।
No comments