* অবিশ্বাস *
-----------------
ক্যাটাগরি-
সাহিত্য।
-----------
২-৪-২০১৭
-------------------
-- "এমন চরিত্রহীনা,নষ্টা মেয়ে মানুষ নিয়ে আর সংসার করা যায়না।"
ঘরভর্তি লোকের সামনে বাবুল চিৎকার
করে বলছে, কথা গুলো শুধু ঘরের লোকেরাই শুনছেনা, আশেপাশের দু' এক
বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে গেছে তার গলার আওয়াজ। যেহেতু পাড়ার মানুষ আগে থেকে একটু আধটু জানে ঘটনাটা কি, তাই
কৌতুহলী মানুষগুলো বাবুলদের বাড়ীতে
বাড়তি কিছু লোকের আনাগুনা দেখে ঐ
বাড়ীর দিকেই কান পেতে আছে।
বাবুলের স্ত্রী রত্না পাথরের মতো বসে শুধু
শুনেই যাচ্ছে, কোন প্রতিবাদও করছেনা, আজকাল আর কাঁদেওনা।
--বাবুল লেখাপড়া জানা,একজন
চাকরীজীবি পুরুষ। রত্না আর বাবুল
ভালোবেসেই বিয়ে করেছে। সুখের সংসার তাদের, বিশ্বাসে আর ভালোবাসায় মুড়ানো সংসার। রত্না শ্বশুড়,শ্বাশুড়ী, স্বামী নিয়ে বেশ আছে। তাদের ভালোবাসার ফসল
তিন,তিনটি লক্ষীমেয়েও আছে। প্রথম মেয়েটির জন্মের পর দ্বিতীয়টি ছেলে
আশা করেছিলো। হয়নি, তিন নম্বরটিও মেয়ে হলো। এরপর আর চার নম্বর কিছু
আশা করেনি। আর সংসার বাড়াতে চায়না
তারা। দু'জনে মিলে পরামর্শ করে এই
সিদ্ধান্ত নিলো যে,বাবুল একটা কিছু জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি নিবে। তাই করলো।
ভালোই কাটছে জীবন তাদের। কোন অভাব নেই, অভিযোগ নেই।
--ছ' মাস পর জানা গেলো রত্না আবার
প্র্যাগন্যান্ট হলো। বাবুল যখন জানলো
রাগে ফেটে পড়লো। বাবুলের রাগ দেখে
রত্না হাসতো। বাবুলের পদ্ধতির কথা তারা
দু'জন ছাড়া আর কেউ জানতোনা।
কাজেই বাবুলের চুপিচুপি রাগ আর ঝগড়া
কেবল রত্নার সাথেই ছিলো। রত্নার কাছে চুপিচুপি জানতে চায়,
" ভালো চাওতো বলো তোমার পেটের
এই সন্তানের বাবা কে?
" আর কেউ নয়, তুমিই। তুমি বরং আবার
ডাক্তারের কাছে যাও, গিয়ে দেখো সমস্যাটা কোথায়?
বলেই রত্না হাসে, বাবুলের হাসি আসেনা।
উল্টো রাগ হয় বউয়ের হাসি দেখে।
আস্তে আস্তে ব্যপারটা খুব খারাপের দিকেই যাচ্ছে। বাবুল কোনভাবেই মানতে
রাজী নয়, প্র্যাগনেন্সীর দিন যতো বাড়ছে বাবুলের মনমেজাজ ততই বিগড়ে যাচ্ছে, চুপি চুপি ঝগড়া একটু একটু প্রকাশ পেতে লাগলো। বাবুল আজকাল আর বাড়ীতে
এতো সময় দেয়না, এমনকি মেয়েদেরও
তেমন সময় দেয়না। কাজের পরেও বাইরে
সময় কাটায় বেশী। এবার যেন রত্না শঙ্কিত
হলো।
বাবুল আর রত্নার মঝে কিছু ঘটেছে, এমনটা শ্বাশুড়ী সন্দেহ করে একদিন
বউকে জিজ্ঞেস করলেন, ব্যপারটা কি?
আর চুপ থাকা ঠিক নয় ভেবে রত্না লজ্জ্বা
সরম ভেঙ্গে শ্বাশুড়ীকে খুলে বলেছে সব।
শ্বাশুড়ী আগের যুগের মানুষ, বউয়ের
কথায় বিশ্বাস, অবিশ্বাসের দোলায় দুলছেন। ছেলের সাথে কথা বলেন।
ছেলের এক কথা, এ'সন্তান তার নয়।
রত্নাকে সে ডিভোর্স দেবে।
আস্তে আস্তে পাড়া প্রতিবেশী জানলো।
শেষে রত্নার বাবা,ভাইদের ডেকে আনা
হলো, তাদের মেয়ের কুকীর্তি কথা জানিয়ে সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে, যাদের মেয়ে তাদের কাছেই ফিরিয়ে দেবে বলে।
তো,-বাবুল এইভাবেই যা তা বলে রত্নাকে
আঘাত করছে।
রত্নার বাবা, ভাইদেরও মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো এসব শুনে। ভাই রত্নার কাছে জানতে চাইলো, ব্যপারটা কি?
রত্না শুধু বললো,
" যা শাস্তি হয়, আমি সব মাথা পেতে নেবো। তবে এখন নয়, আমার শাস্তির
আগে সে যেন একবার ডাক্তারের কাছে
যায়, আমার অনুরোধ সবার কাছে, তাকে
ডাক্তারের কাছে পাঠান।
বাবুল মানতে রাজী নয়। সবার অনুরোধে
রাজী হলো। এতোটুকুর পর রত্নার বাবা
ভাইরা লজ্জ্বিত হয়ে ফিরে গেলো।
মেয়েকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো, মেয়ে
বলেছে,
"আমি এর শেষ দেখে তবেই যাবো।"
বাবুল এ' কথা শুনে রত্নার দিকে কটাক্ষভাবে তাকালো শুধু।
ইচ্ছে না থাকলেও বাবুল পরদিন ডাক্তারের
কাছে গেলো। জেনে এলো তার পদ্ধতি তিনমাস ঠিক ছিলো। এরপর বাবুল নিজেই যেন লজ্জ্বায় মরে যেতে চাইলো।
বাড়ী যাওয়ার আর মুখ যেন নেই,
মনে পড়তে লাগলো একে একে গত তিনমাস সে কি দুর্ব্যবহারটাই না রত্নার
সাথে করে এসেছে। কিভাবে মুখ দেখাবে
রত্নাকে, কেন বউয়ের কথা শুনে আগে
ডাক্তারের কাছে আসেনি!
এসব নানা কিছু ভাবতে ভাবতে বাড়ী
এসে পৌঁছালো।
মা এসে প্রথমে জানতে চাইলেন, ব্যপারটা
আসলে কি!
মাথাটা নীচু করে জানালো, ডাক্তার যা
বলেছেন।
রত্নাও সামনে এলো, শুনলো, এতোদিনের
বুকভরা অভিমান, স্বামীর অনাদর, অহেতুক সন্দেহের কষ্ট, সব, সব যেন বাঁধ
ভাঙ্গা চোখের জলে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।
এরপর, বাবুল ক্ষমা চেয়ে নিলো, রত্নাও
আদর্শ স্ত্রী হয়ে ক্ষমা করে দিলো।
-- চার নম্বর সন্তানটি তাদের ছেলে হয়েছিল।
----------------------------------------------
আমি শুধু একজন রত্নার কথা বলেছি।
এমনি আরো রত্নারা আছে, অহেতুক সন্দেহের স্বীকার হয়, অনেক অপ্রিতীকর
ঘটনার জন্ম হয় তাদের জীবনে অথবা
সেই সন্তান বৈধ হয়েও পিতৃ পরিচয় পায়না।
-----------------
ক্যাটাগরি-
সাহিত্য।
-----------
২-৪-২০১৭
-------------------
-- "এমন চরিত্রহীনা,নষ্টা মেয়ে মানুষ নিয়ে আর সংসার করা যায়না।"
ঘরভর্তি লোকের সামনে বাবুল চিৎকার
করে বলছে, কথা গুলো শুধু ঘরের লোকেরাই শুনছেনা, আশেপাশের দু' এক
বাড়ী পর্যন্ত পৌঁছে গেছে তার গলার আওয়াজ। যেহেতু পাড়ার মানুষ আগে থেকে একটু আধটু জানে ঘটনাটা কি, তাই
কৌতুহলী মানুষগুলো বাবুলদের বাড়ীতে
বাড়তি কিছু লোকের আনাগুনা দেখে ঐ
বাড়ীর দিকেই কান পেতে আছে।
বাবুলের স্ত্রী রত্না পাথরের মতো বসে শুধু
শুনেই যাচ্ছে, কোন প্রতিবাদও করছেনা, আজকাল আর কাঁদেওনা।
--বাবুল লেখাপড়া জানা,একজন
চাকরীজীবি পুরুষ। রত্না আর বাবুল
ভালোবেসেই বিয়ে করেছে। সুখের সংসার তাদের, বিশ্বাসে আর ভালোবাসায় মুড়ানো সংসার। রত্না শ্বশুড়,শ্বাশুড়ী, স্বামী নিয়ে বেশ আছে। তাদের ভালোবাসার ফসল
তিন,তিনটি লক্ষীমেয়েও আছে। প্রথম মেয়েটির জন্মের পর দ্বিতীয়টি ছেলে
আশা করেছিলো। হয়নি, তিন নম্বরটিও মেয়ে হলো। এরপর আর চার নম্বর কিছু
আশা করেনি। আর সংসার বাড়াতে চায়না
তারা। দু'জনে মিলে পরামর্শ করে এই
সিদ্ধান্ত নিলো যে,বাবুল একটা কিছু জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি নিবে। তাই করলো।
ভালোই কাটছে জীবন তাদের। কোন অভাব নেই, অভিযোগ নেই।
--ছ' মাস পর জানা গেলো রত্না আবার
প্র্যাগন্যান্ট হলো। বাবুল যখন জানলো
রাগে ফেটে পড়লো। বাবুলের রাগ দেখে
রত্না হাসতো। বাবুলের পদ্ধতির কথা তারা
দু'জন ছাড়া আর কেউ জানতোনা।
কাজেই বাবুলের চুপিচুপি রাগ আর ঝগড়া
কেবল রত্নার সাথেই ছিলো। রত্নার কাছে চুপিচুপি জানতে চায়,
" ভালো চাওতো বলো তোমার পেটের
এই সন্তানের বাবা কে?
" আর কেউ নয়, তুমিই। তুমি বরং আবার
ডাক্তারের কাছে যাও, গিয়ে দেখো সমস্যাটা কোথায়?
বলেই রত্না হাসে, বাবুলের হাসি আসেনা।
উল্টো রাগ হয় বউয়ের হাসি দেখে।
আস্তে আস্তে ব্যপারটা খুব খারাপের দিকেই যাচ্ছে। বাবুল কোনভাবেই মানতে
রাজী নয়, প্র্যাগনেন্সীর দিন যতো বাড়ছে বাবুলের মনমেজাজ ততই বিগড়ে যাচ্ছে, চুপি চুপি ঝগড়া একটু একটু প্রকাশ পেতে লাগলো। বাবুল আজকাল আর বাড়ীতে
এতো সময় দেয়না, এমনকি মেয়েদেরও
তেমন সময় দেয়না। কাজের পরেও বাইরে
সময় কাটায় বেশী। এবার যেন রত্না শঙ্কিত
হলো।
বাবুল আর রত্নার মঝে কিছু ঘটেছে, এমনটা শ্বাশুড়ী সন্দেহ করে একদিন
বউকে জিজ্ঞেস করলেন, ব্যপারটা কি?
আর চুপ থাকা ঠিক নয় ভেবে রত্না লজ্জ্বা
সরম ভেঙ্গে শ্বাশুড়ীকে খুলে বলেছে সব।
শ্বাশুড়ী আগের যুগের মানুষ, বউয়ের
কথায় বিশ্বাস, অবিশ্বাসের দোলায় দুলছেন। ছেলের সাথে কথা বলেন।
ছেলের এক কথা, এ'সন্তান তার নয়।
রত্নাকে সে ডিভোর্স দেবে।
আস্তে আস্তে পাড়া প্রতিবেশী জানলো।
শেষে রত্নার বাবা,ভাইদের ডেকে আনা
হলো, তাদের মেয়ের কুকীর্তি কথা জানিয়ে সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে, যাদের মেয়ে তাদের কাছেই ফিরিয়ে দেবে বলে।
তো,-বাবুল এইভাবেই যা তা বলে রত্নাকে
আঘাত করছে।
রত্নার বাবা, ভাইদেরও মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো এসব শুনে। ভাই রত্নার কাছে জানতে চাইলো, ব্যপারটা কি?
রত্না শুধু বললো,
" যা শাস্তি হয়, আমি সব মাথা পেতে নেবো। তবে এখন নয়, আমার শাস্তির
আগে সে যেন একবার ডাক্তারের কাছে
যায়, আমার অনুরোধ সবার কাছে, তাকে
ডাক্তারের কাছে পাঠান।
বাবুল মানতে রাজী নয়। সবার অনুরোধে
রাজী হলো। এতোটুকুর পর রত্নার বাবা
ভাইরা লজ্জ্বিত হয়ে ফিরে গেলো।
মেয়েকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো, মেয়ে
বলেছে,
"আমি এর শেষ দেখে তবেই যাবো।"
বাবুল এ' কথা শুনে রত্নার দিকে কটাক্ষভাবে তাকালো শুধু।
ইচ্ছে না থাকলেও বাবুল পরদিন ডাক্তারের
কাছে গেলো। জেনে এলো তার পদ্ধতি তিনমাস ঠিক ছিলো। এরপর বাবুল নিজেই যেন লজ্জ্বায় মরে যেতে চাইলো।
বাড়ী যাওয়ার আর মুখ যেন নেই,
মনে পড়তে লাগলো একে একে গত তিনমাস সে কি দুর্ব্যবহারটাই না রত্নার
সাথে করে এসেছে। কিভাবে মুখ দেখাবে
রত্নাকে, কেন বউয়ের কথা শুনে আগে
ডাক্তারের কাছে আসেনি!
এসব নানা কিছু ভাবতে ভাবতে বাড়ী
এসে পৌঁছালো।
মা এসে প্রথমে জানতে চাইলেন, ব্যপারটা
আসলে কি!
মাথাটা নীচু করে জানালো, ডাক্তার যা
বলেছেন।
রত্নাও সামনে এলো, শুনলো, এতোদিনের
বুকভরা অভিমান, স্বামীর অনাদর, অহেতুক সন্দেহের কষ্ট, সব, সব যেন বাঁধ
ভাঙ্গা চোখের জলে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।
এরপর, বাবুল ক্ষমা চেয়ে নিলো, রত্নাও
আদর্শ স্ত্রী হয়ে ক্ষমা করে দিলো।
-- চার নম্বর সন্তানটি তাদের ছেলে হয়েছিল।
----------------------------------------------
আমি শুধু একজন রত্নার কথা বলেছি।
এমনি আরো রত্নারা আছে, অহেতুক সন্দেহের স্বীকার হয়, অনেক অপ্রিতীকর
ঘটনার জন্ম হয় তাদের জীবনে অথবা
সেই সন্তান বৈধ হয়েও পিতৃ পরিচয় পায়না।
No comments