#অতৃপ্ত_কেউ
খুব ছোট বেলা থেকেই আমি সচরাচর ভয় পাওয়ার মানুষ না। গরম কালে শত চেষ্টা করেও যখন ঘুম আসত না তখন, ঘুমন্ত গ্রামের নিশ্চুপ পথে হেটে বেড়াতাম একা একা। মানুষের বলা ভৌতিক কিছুতে কখনও ভয় পেয়েছি কিনা তাও স্মরনে নেই। বয়স তখন হবে হয়ত ষোল কি সতেরো। কয়েল আনতে দোকানে গেলাম রাত পৌনে ১টার দিকে। কয়েল নিয়েই বাড়ীর দিকে রওনা হলাম। মাঝ পথে টের পেলাম কেউ আমার পিছু নিচ্ছে অদৃশ্য ভাবেই যেন।
কারণ, পেছন ফিরে টর্চ মেরে কাউকেই আমি দেখতে পেলাম না। যাক, হয়ত ভুল শুনেছি বা অন্যমনস্ক ভাবে পাতার শব্দে হয়ত এমন মনে হয়েছে। কিছুক্ষণ হাটার পর আবারও সে একই শব্দ। আমি দাঁড়িয়ে পরলাম এবং এবার আর পেছন ফিরে তাকাচ্ছি না। কারণ হলো, কেউ যদি আমাকে পেছন থেকে আক্রমন করার চেষ্টা করে আর কিভাবে তা করতে চাচ্ছে তা আন্দাজ করার চেষ্টা করছি। আক্রমন করতেও পারে কেননা গত মাসে বি.এন.পি'র এক সেক্রেটারিকে উত্তম-মধ্যম দিয়েছিলাম। কাহিনী হলো, বাইরে থেকে মাতাল হয়ে আমাদের উঠনে এসে চিৎকার করছিল। ব্যাস আমিও দিলাম তিন মাসের নামে হসপিটালে পাঠিয়ে। যেটা অন্যায় সেটা কোন দল, সভাপতি বা সেক্রেটারি যেই হোক সেটা অন্যায়ই...
যাক সে কথা। পরে, দাঁড়িয়েই রইলাম ক'য়েক সেকেন্ড। হঠাৎ করে পেছন থেকে শীতল কিন্তু ভারি একটা দীর্ঘশ্বাস এসে আমার ঘাড়ে এসে পড়ল। পেছনে টর্চ মেরে দেখলাম কেউ নেই। পরোক্ষণেই মনে পড়ল, আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি ঠিক সে জায়গাতেই পাকিস্তান আমলের একটা পুরাতন কালী মন্দির ছিল। এর আগেও নাকি আমার প্রতিবেশী এক মামাকে এই জায়গা থেকেই মন্ডু কাটা মানে, মাথা ছাড়া আকাশ চুম্বী ভূত তাকে তাড়া করেছিল। সে থেকেই সে বাড়ি-ঘর এবং কি গ্রাম ছেড়েই নিরুদ্দেশ। এখন পর্যন্ত কেউ তার খোজ দিতে পারেননি। এদিকে বাসায় এসে দেখি আমার নানী এক পাশ হয়ে খোলা জানলার দিকে শুয়ে আছে। জানলার পেছনে একটা সেগুন বাগান ছিল। তারপরেই আমাদের টয়লেট এবং পাশে একটা মাঝারি সাইজের কাঠাল গাছ। সে জানলার দিকে তাকিয়ে নানী কাকে যেন বকছে আর রীতিমত তাড়াচ্ছে। বলছে, "তুই যাবি নাকি, রড পুড়ে লাল টকটকে করে নিয়ে আসবো!"
নানীকে ডেকে বললাম, নানী কয়েল জ্বালিয়ে দিয়ে গেলাম আর আমি বারান্দায় ঘুমাবো। বারান্দায় এসে পাটিতে লম্বা হয়ে শুয়ে আছি, এমন সময় ঘুমন্ত অবস্থায় আমার দু'পা খাবলে ধরে কে যেন হিচড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দৌড়ে দৌড়ে। অদ্ভুত রকম গায়ের জোড় তার আর লম্বা-লম্বা ঘন লোম এ ভরা সারা শরীর। তাকিয়ে দেখি যত জঙ্গল ঘুরে এবং ভেঙ্গে-চূড়ে আমাকে তার আস্তানায় মানে একটা কবর খানার দিকে উলটো ভাবে খুব দ্রুত টেনে নিয়ে যাচ্ছে! চার পাঁচটা ক্রুশ দেখে বুঝতে দেরী হলো না, এটা আমাদের প্রতিবেশীদের কবর খানা।
বিদঘুটে সে জানোয়ারটা হয়ত তার কবরের গ্রাউন্ড ফ্লোরে নিয়ে গিয়ে আমাকে খাবলে খেতে চেয়েছিল। কিন্তু তার আগেই দ্রুত ওই কবরের ক্রুশ ভেঙ্গে আড়া-আড়ি ভাবে পেতে দিই। ফলে আমাকে নিয়ে কবরের নীচে লাফ দিয়ে নামার সময় ক্রুশে তার খুলিটা আটকে গিয়ে ছিড়ে সে নীচে পরে যায়। পরে বুক সমান দেবে যাওয়া নিজেকে খুব কষ্টে উপরে তুললাম। উফ, দুঃস্বপ্ন...!!
সকাল বেলায় নানীকে নাস্তা করার সময় জিজ্ঞাস করলাম, কাল রাতে কাকে গরম রড দিয়ে তাড়াচ্ছিলে...?
"আর বলিস না, ঘুম ভেঙ্গে যখনই জানলার দিকে চোখ যায়, হারামজাদি খালি একটা বাটি হাতে নিয়ে, হাত বাড়িয়ে ভাত খেতে চায়।" তুই বলতো রাত ১টা-২টার দিকে কেউ ভাত চায়লে আমি কোত্থেকে দেবো?
আমি বললাম_ এক কাজ করো নানী আমরা তো কারেন্ট আসার পর খেতে বসি, তুমি প্রতিদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই জানলায় একটু ভাত আর তরকারি দিয়ে আসবা। জানই তো, আমাদের এলাকার সব ক'টা ঘরবাড়ী একাত্তরের কবরের উপর। তৎকালিন সময়ে শত শত মানুষ তো ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা গেছেন তাইনা। তাদের তো ক্ষুধা লাগতেই পারে। আর জানলাটা সন্ধ্যার পর খোলা রেখো না। নানীও প্রতিদিন তাই করতেন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, যে থালায় খাবার দিয়ে আসা হতো, বরাবরই তা সকাল বেলায় খালি পেতাম...
</>
__চন্দ্রবিন্দু
খুব ছোট বেলা থেকেই আমি সচরাচর ভয় পাওয়ার মানুষ না। গরম কালে শত চেষ্টা করেও যখন ঘুম আসত না তখন, ঘুমন্ত গ্রামের নিশ্চুপ পথে হেটে বেড়াতাম একা একা। মানুষের বলা ভৌতিক কিছুতে কখনও ভয় পেয়েছি কিনা তাও স্মরনে নেই। বয়স তখন হবে হয়ত ষোল কি সতেরো। কয়েল আনতে দোকানে গেলাম রাত পৌনে ১টার দিকে। কয়েল নিয়েই বাড়ীর দিকে রওনা হলাম। মাঝ পথে টের পেলাম কেউ আমার পিছু নিচ্ছে অদৃশ্য ভাবেই যেন।
কারণ, পেছন ফিরে টর্চ মেরে কাউকেই আমি দেখতে পেলাম না। যাক, হয়ত ভুল শুনেছি বা অন্যমনস্ক ভাবে পাতার শব্দে হয়ত এমন মনে হয়েছে। কিছুক্ষণ হাটার পর আবারও সে একই শব্দ। আমি দাঁড়িয়ে পরলাম এবং এবার আর পেছন ফিরে তাকাচ্ছি না। কারণ হলো, কেউ যদি আমাকে পেছন থেকে আক্রমন করার চেষ্টা করে আর কিভাবে তা করতে চাচ্ছে তা আন্দাজ করার চেষ্টা করছি। আক্রমন করতেও পারে কেননা গত মাসে বি.এন.পি'র এক সেক্রেটারিকে উত্তম-মধ্যম দিয়েছিলাম। কাহিনী হলো, বাইরে থেকে মাতাল হয়ে আমাদের উঠনে এসে চিৎকার করছিল। ব্যাস আমিও দিলাম তিন মাসের নামে হসপিটালে পাঠিয়ে। যেটা অন্যায় সেটা কোন দল, সভাপতি বা সেক্রেটারি যেই হোক সেটা অন্যায়ই...
যাক সে কথা। পরে, দাঁড়িয়েই রইলাম ক'য়েক সেকেন্ড। হঠাৎ করে পেছন থেকে শীতল কিন্তু ভারি একটা দীর্ঘশ্বাস এসে আমার ঘাড়ে এসে পড়ল। পেছনে টর্চ মেরে দেখলাম কেউ নেই। পরোক্ষণেই মনে পড়ল, আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি ঠিক সে জায়গাতেই পাকিস্তান আমলের একটা পুরাতন কালী মন্দির ছিল। এর আগেও নাকি আমার প্রতিবেশী এক মামাকে এই জায়গা থেকেই মন্ডু কাটা মানে, মাথা ছাড়া আকাশ চুম্বী ভূত তাকে তাড়া করেছিল। সে থেকেই সে বাড়ি-ঘর এবং কি গ্রাম ছেড়েই নিরুদ্দেশ। এখন পর্যন্ত কেউ তার খোজ দিতে পারেননি। এদিকে বাসায় এসে দেখি আমার নানী এক পাশ হয়ে খোলা জানলার দিকে শুয়ে আছে। জানলার পেছনে একটা সেগুন বাগান ছিল। তারপরেই আমাদের টয়লেট এবং পাশে একটা মাঝারি সাইজের কাঠাল গাছ। সে জানলার দিকে তাকিয়ে নানী কাকে যেন বকছে আর রীতিমত তাড়াচ্ছে। বলছে, "তুই যাবি নাকি, রড পুড়ে লাল টকটকে করে নিয়ে আসবো!"
নানীকে ডেকে বললাম, নানী কয়েল জ্বালিয়ে দিয়ে গেলাম আর আমি বারান্দায় ঘুমাবো। বারান্দায় এসে পাটিতে লম্বা হয়ে শুয়ে আছি, এমন সময় ঘুমন্ত অবস্থায় আমার দু'পা খাবলে ধরে কে যেন হিচড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দৌড়ে দৌড়ে। অদ্ভুত রকম গায়ের জোড় তার আর লম্বা-লম্বা ঘন লোম এ ভরা সারা শরীর। তাকিয়ে দেখি যত জঙ্গল ঘুরে এবং ভেঙ্গে-চূড়ে আমাকে তার আস্তানায় মানে একটা কবর খানার দিকে উলটো ভাবে খুব দ্রুত টেনে নিয়ে যাচ্ছে! চার পাঁচটা ক্রুশ দেখে বুঝতে দেরী হলো না, এটা আমাদের প্রতিবেশীদের কবর খানা।
বিদঘুটে সে জানোয়ারটা হয়ত তার কবরের গ্রাউন্ড ফ্লোরে নিয়ে গিয়ে আমাকে খাবলে খেতে চেয়েছিল। কিন্তু তার আগেই দ্রুত ওই কবরের ক্রুশ ভেঙ্গে আড়া-আড়ি ভাবে পেতে দিই। ফলে আমাকে নিয়ে কবরের নীচে লাফ দিয়ে নামার সময় ক্রুশে তার খুলিটা আটকে গিয়ে ছিড়ে সে নীচে পরে যায়। পরে বুক সমান দেবে যাওয়া নিজেকে খুব কষ্টে উপরে তুললাম। উফ, দুঃস্বপ্ন...!!
সকাল বেলায় নানীকে নাস্তা করার সময় জিজ্ঞাস করলাম, কাল রাতে কাকে গরম রড দিয়ে তাড়াচ্ছিলে...?
"আর বলিস না, ঘুম ভেঙ্গে যখনই জানলার দিকে চোখ যায়, হারামজাদি খালি একটা বাটি হাতে নিয়ে, হাত বাড়িয়ে ভাত খেতে চায়।" তুই বলতো রাত ১টা-২টার দিকে কেউ ভাত চায়লে আমি কোত্থেকে দেবো?
আমি বললাম_ এক কাজ করো নানী আমরা তো কারেন্ট আসার পর খেতে বসি, তুমি প্রতিদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই জানলায় একটু ভাত আর তরকারি দিয়ে আসবা। জানই তো, আমাদের এলাকার সব ক'টা ঘরবাড়ী একাত্তরের কবরের উপর। তৎকালিন সময়ে শত শত মানুষ তো ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা গেছেন তাইনা। তাদের তো ক্ষুধা লাগতেই পারে। আর জানলাটা সন্ধ্যার পর খোলা রেখো না। নানীও প্রতিদিন তাই করতেন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, যে থালায় খাবার দিয়ে আসা হতো, বরাবরই তা সকাল বেলায় খালি পেতাম...
</>
__চন্দ্রবিন্দু
No comments