আমার বৃত্ত
ব্লেড টা হাতে নিয়ে বসে আছি সন্ধ্যা থেকে, কিছুই করতে পারলাম না। মরার সাহসটা ও নেই আমার। টাওয়েল টা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। প্রায় দেড় ঘন্টা শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে এসে দেখি রিজভী বিছানার উপর পা ছড়িয়ে শুয়ে ফোনে গেম খেলছে। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, শৈলী এক কাপ চা করে দাও তো।
আমি ওর দিকে একবার তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলাম।
আশ্চর্য্য লোক তো। এতক্ষণ ধরে শাওয়ার নিলাম তার কোন মাথা ব্যথা নেই??
আমি এক কাপ চা করে এনে বললাম, এই যে আপনার চা।
রিজভী উঠে বসতেই আমি চা এর কাপ টা সামনে রেখে বারান্দায় চলে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর রিজভী পেছনে এসে দাঁড়াল। হাতে টাওয়েল নিয়ে আমার ভেজা চুল গুলো মুছে দিতে দিতে বলল, "এই সন্ধ্যা বেলায় কেউ এতক্ষণ ধরে শাওয়ার নেয়?? চুলগুলোও তো মোছো নি। এসব এর যত্ন না নিলে বাবু কি ভাববে বলো তো?? বলবে, আমার আম্মু নিজের ই যত্ন নিতে পারে না, আমার যত্ন কি নিবে??
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। রিজভী আমার চুলগুলো মুছে দিতে দিতে "রাদ" এসে রিজভীর পায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল, বাবা, বাবা আমার কার্টুন চ্যানেল টা বের করে দাও।
রিজভী বলল, "দিচ্ছি বাবা। মা এর চুল গুলো আগে মুছে দেই। দেখো না, মা ঠিক করে চুল ই মুছতে পারে না।"
রাদ খিলখিল করে হেসে বলল, "মা তুমি চুল মুছতে পারো না?? তুমি চুলগুলো কেটে ফেলো, তাহলে আর মুছতে হবে না।"
৪ বছর বয়সের বাচ্চা এত পাকা পাকা কথা কিভাবে বলে ভাবতেই আমি হেসে দিলাম।
রিজভী রুমে চলে গেল রাদ কে কোলে নিয়ে।
মাঝ রাতে "রাদ" এর কান্না শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। আমি এক রুমে শুই, পাশের রুমে "রাদ" আর ওর বাবা ঘুমায়। আমি উঠে যেয়ে দেখি রাদ ঘুমের মধ্যে একটু কান্না করছিল তাই রিজভী ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে।
আমি চুপ করে চলে এলাম। জগৎ এর সব মায়া ত্যাগ করা যায়, একটা নিষ্পাপ বাচ্চার মায়া হয়তো এড়িয়ে যাওয়া যায় না। নিজের ভেতর অপরাধবোধ হতে লাগল। বাচ্চাটাকে আমার কাছে নিয়ে ঘুমানো উচিত ছিল।
পরদিন সকালে ৭ টা বাজতেই, রাদ এসে কাছে বসে ডাকতে থাকল, "আম্মু, আম্মু আমাকে রেডী করিয়ে দিবে না?? স্কুলে যাবো। আমি চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসতেই দেখি, রিজভী, রাদ এর স্কুল ড্রেস হাতে নিয়ে এ ঘরে চলে এসেছে।
আমি বললাম, দিন আমার কাছে, আমি রেডী করিয়ে দিচ্ছি। রিজভী বলল, আহা সমস্যা নেই তো। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও, আজ না হয় আমিই রেডী করিয়ে দেই।
রিজভী রাদ কে রেডী করাতে লাগল। আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
যতক্ষণে আমি এসেছি, ততক্ষণে রিজভী, রাদ কে নিয়ে স্কুলে চলে গিয়েছে। ডাইনিং টেবিল এর উপর দেখলাম পাউরুটি, জেলী, আর অর্ধেক সেদ্ধ ডিম ঢাকা দেয়া। নিশ্চয়ই রাদ খায় নি পুরোটা। বাচ্চাকাচ্চার কাজ ই এমন। খেতে গেলেই তাদের বিপদ।
আমি নিজের জন্য এক কাপ কফি করে খেতে বসলাম। কিছুক্ষণ পর ই রিজভী চলে এলো। অফিস থেকে ক'দিন এর ছুটি নেয়া, এখন হয়তো বাসায় ই থাকবে। আমি বললাম, চা করে দিবো?
রিজভী বলল, এক কাপ দিলে ভালো হয়।
আমি চা করে এনে দেখি, রিজভী সব ঘরের বিছানার চাদর টানটান করে, রাদ এর এলোমেলো বই-খাতা, খেলনা, সব গুছিয়ে রাখছে।
আমি বললাম, আপনি করছেন কেন?? আমি ই করতাম।
রিজভী হেসে বলল, "শৈলী" তুমি কি ভাবো বলো তো আমাকে?? আমি কিচ্ছু পারি না?? তুমি দেখোই না, আমি কি কি পারি।
আমি বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ দেখতে লাগলাম। দুপুরের রান্নাটা রিজভী নিজেই করল, আমি শুধু পাশে দাঁড়িয়ে দেখলাম।
একবার মাঝে বললাম, আমি তরকারী কেটে দেই। রিজভী বলল, আর কিছুদিন পর নিজেই সব করো। কিন্তু যখন আমি রান্না করবো তখন তুমি কিচ্ছু করতে পারবে না। তবে, হ্যাঁ একটা কাজ ই করতে পারো।
বললাম, কি কাজ??
মাঝে মাঝে আমি ঘেমে গেলে, তোমার শাড়ীর আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে দিতে পারো।
আমি কথাটা শুনে কিঞ্চিত লজ্জা পেলাম। কিছু বললাম না।
রাদ কে দুপুরে আমিই নিজে হাতে ভাত খাইয়ে, ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। বাচ্চাটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় আরো নিষ্পাপ লাগে। রিজভী এসে পাশে শুয়ে পড়ল। আমি উঠে যেতে গেলে রাদ নড়েচড়ে উঠল। রাদ ঘুমের মধ্যেও বারবার উঠে পরে। ওর বুকের ওপর হাত রাখলে আবার, চুপচাপ ঘুমায়। বাচ্চাগুলো খুব মায়া জাগায়।
পরদিন এক আত্মীয়ের বাসায় দাওয়াত ছিল।
আমি আলমারি থেকে ডার্ক ব্লু রঙ এর হাফ সিল্ক শাড়ী টা বের করলাম। শাড়ী পরতে পরতে দেখলাম রিজভী এসে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি তাকালে ও বলল, দেখি এদিকে ঘুড়ো তো। আমি বললাম, কেন??
রিজভী নিজেই আমার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে, শাড়ীর কুচি ঠিক করে দিল। আমার ভীষণ অস্থির লাগছে, প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।
আমি বললাম, আপনি কেন বারবার অধিকার খাটাতে আসেন??
রিজভী বলল, ভালোবাসার সুযোগ টা তো অন্তত দিবে। না' কি সারা জীবন আমাকে দোষী করে রাখবে??
আমি আর কিচ্ছু বললাম না, ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে রাগে ফুলতে থাকলাম। রিজভী চলে গেল।
ভেবেছিলাম দাওয়াতে যাবো না। তারপর ও যেতে হল।
মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে বসতেই টের পেলাম মাথাটা ভার হয়ে আছে। সারা শরীরে কেমন যেন একটা চিনচিনে ব্যথা। সারা শরীর ঘেমে নেয়ে উঠেছে আমার। পাশে রাখা পানির বোতল টা থেকে পানি খেলাম। খুব অস্থির লাগছে আমার। সেই মূহুর্তে ফারাবীর কথা খুব মনে পড়ল। খুব বেশী মনে পড়ছে ওকে। ও ছিল অন্য ডিপার্টমেন্ট এ, আর আমি অন্য ডিপার্টমেন্ট এ। তারপর ও ফ্রেন্ড সার্কেল এর কানেকশন এ ওর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আস্তে আস্তে ওর প্রতি আমি দূর্বল হতে শুরু করি। একদিন নিরুপায় হয়ে বলেই ফেলি ওর প্রতি আমার ভালো লাগার কথা। আমাকে আশ্চর্য্য করে দিয়ে ফারাবীও আমাকে প্রপোজ করে বসে।
ফারাবী বলে, আমি তোমায় আগে থেকেই পছন্দ করতাম, তুমি ব্যাপারটা কিভাবে নাও, তাই বলার সাহস পাই নি।
বেশ ভালোই চলছিল আমাদের নতুন নতুন প্রেম। প্রেমে পরলে না কি সব রঙ্গীন লাগে চোখে, মানুষ আকাশে উড়তে শুরু করে কল্পনায়। আমার ও ঠিক সে সব ই হচ্ছিল। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর একদিন হঠাৎ ফারাবী বলল, ও না কি দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছে। আমার পৃথিবী টা তখন সবে একটু রঙ দিয়ে সাজাতে শুরু করেছিলাম, আর এই যেন সব শেষ হয়ে গেল।
আমি তখন বড্ড অবুঝ ছিলাম। ফারাবী কে আমি কোনমতেই হারাতে পারবো না এই ভেবে, নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিন-রাত কান্নাকাটি করতে লাগলাম। ফারাবী আমাকে অনেক বুঝিয়ে, ফিরে এসে আমার বাসায় বিয়ের কথা বলবে এসব বলে চলে গেল।
ফারাবী চলে যাওয়ার পরের তিন- চার মাস বেশ ভালোই কাটছিল। ও প্রায় প্রায় ই সময় করে আমার সাথে কথা বলত। কিন্তু আস্তে আস্তে টের পেলাম আমাদের মধ্যে ভালোবাসাটা আর আগের মতো নেই। ও কেমন যেন ছাড়া ছাড়া ভাব দেখায়। আর কেমন যেন বিরক্তি ফুটে ওঠে ওর কথাবার্তায়। আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম, আসলে কি সমস্যা?? আমার ভালোবাসায় ই কি কোন ঘাটতি আছে??
আস্তে আস্তে ও যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। এক সপ্তাহ যায়, দু সপ্তাহ যায়, এক মাস, দু মাস, ফারাবী আর খোঁজ নেয় না। না কোন ফোন কল, না টেক্সট। আমার টেক্সট এর রিপ্লাই ও দেয়না। আমার নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগল। রোজ ভাবতাম, আজ বুঝি ও কল করবে, নাহ, ও আর আমার খবর ই নেয় না।
একদিন ও কল করল। আমাকে বলল, ওকে যেন ভুলে যাই।
আমি তখন নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছিলাম। ওকে কিছুই বলি নি, কোন অভিযোগ ও রাখি নি। কিন্তু ভুলে যাওয়া কি এতই সহজ??
এত্ত সহজে একটা মানুষকে ভুলে ফেলা যায়?? শুনেছিলাম দূরে থাকলে না কি ভালোবাসা বাড়ে, আরো মায়া বাড়ে একে অন্যের প্রতি। আমার তো পুরোই মিথ্যে হয়ে গেল।
দূরে যেয়ে তো আমার ভালোবাসা আমাকে এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিল, যেখানে আমি রোজ ভাবতে শুরু করি কিভাবে আমি মরবো? বাহ, জীবন আমাদের কত কিছুই শেখায়।
নাহ, আমি আর কিচ্ছু ভাবতে পারছি না। আমার জাস্ট মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ব্লেড টা কোথায়?? কোথায় রেখেছিলাম যেন??
এই তো, এই তো ব্লেড টা।
আমার হাত কাঁপতে শুরু করল। ব্লেডটা হাতে নিয়ে মনে হচ্ছে আমার সারা শরীর ঝিমঝিম করছে। নাহ, কোন আবেগ না আর। আজকে আমি মরবোই। ব্লেড টা বাম হাতের কব্জি বরাবর বসিয়ে দিতেই, রাদ কেঁদে উঠল। মা ও মা।
আমি ব্লেড টা আর বেশী জোর দিতে পারলাম না। কনসেন্ট্রেট দিতে না পারায় হাত কাঁপা শুরু হয়ে গেল, আর ব্লেড টাও পড়ে গেল। তবে পোচ মারাতে হাতটা কেঁটে গেছে।
রাদ এর কান্না শুনে পাশের রুম থেকে রিজভী এসে ঘরের লাইট জ্বালায়। রিজভী আমাকে ফ্লোরে বসে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো বোধহয়।
রিজভী, রাদ কে আবার শুইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল। আমি তখনও ওভাবেই বসে আছি। হাতটা অনেকখানি কেটে গেছে। রক্ত পরে শাড়ীর বেশ খানিকটা রক্ত লেগে গেছে। রিজভী আমার ডান হাতটা ধরে টেনে পাশের রুমে নিয়ে গেল।
আমি যেন আমার মধ্যে নেই। কি হচ্ছে কিছুই যেন আমাকে কোনভাবে নাড়া দিচ্ছে না।
রিজভী ফাস্ট এইড বক্স টা এনে আমার হাতটা ব্যান্ডেজ করে দিল।
এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দিল। আমি পানি টা খেয়ে চুপ করেই বসে রইলাম। রিজভী একটা ভেজা টাওয়েল এনে আমার মুখটা মুছে দিল, চুলগুলো একটা পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে আটকে দিল। এতক্ষণ পর যেন আমার হুশ এলো।
আমি হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ব্যান্ডেজ করা। অস্থির ভাবটা অনেকখানি কেটে গেছে। এই মানুষটার উপর হঠাৎ একটা মায়া জন্মাতে লাগল। কি করতে যাচ্ছিলাম আমি?
রিজভী কে ছেড়ে, রাদ কে ছেড়ে মরতে যাচ্ছিলাম??
কার জন্য? ফারাবীর জন্য?? যে কি না আমার কথা ভাবেই নি।
যখন আমি একেবারে ভেঙ্গে পরেছিলাম তখন তো ফারাবী একবারের জন্যেও আমার খোঁজ নেয় নি।
অথচ, আজ আমি একটা ভুল কিছু করে ফেলতে পারতাম। হয়তো মরেই যেতাম। এই মানুষ টা না থাকলে, রাদ কেঁদে না উঠলে হয়তো কিছু একটা অঘটন ঘটেই যেত আজ।
আমি কে এই মানুষটার??
আমার জন্য তার এত ভালোবাসা কেন, যেখানে আমার সাথে তার কোন প্রেম ছিল ই না। আমি তার সন্তানের মা ও না।
আমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী হওয়া সত্বেও এত ভালোবাসা কেন আমার জন্য?
রাদ, ছোট নিষ্পাপ বাচ্চাটা, ওর ই বা কি দোষ? ও কেন বারবার মা হারাবে?
ওর নিজের মা মারা যাওয়ার পর আমিই তো ওর মা হয়ে এসেছি। বোধ হওয়ার পর থেকে তো বাচ্চাটা আমাকেই মা বলে জানে। আমিও যদি আকাশের তারা হয়ে যাই, তাও এসব ফালতু কারণে, বাচ্চাটা একা একা কিভাবে বড় হবে??
হ্যাঁ, ওর বাবা ঠিক ওকে সামলে নিবে, কিন্তু স্রষ্টা কি আমায় ক্ষমা করবেন??
কত বড় পাপ করতে যাচ্ছিলাম আমি, ভাবতেই নিজের প্রতি ঘৃণা জন্মাচ্ছে।
আর, রিজভীর ও তো কোন দোষ নেই। আমি তো সব জেনেই বিয়েটা করেছি। তাহলে, কেন এসব করছি?
একজন মানুষ কি তার স্ত্রী এর কাছ থেকে একটুখানি ভালোবাসা এক্সপেক্ট করতে পারে না??
প্রথম স্ত্রী এর প্রতি হয়তো ভালোবাসা বেশি থাকে। তার জীবনের প্রথম নারী, তার জীবন টা গোছানোর পেছনে যার অবদান এত বেশি, তার প্রথম সন্তানের মা, এসবের জন্যে হলেও প্রথম স্ত্রী এর জায়গা টা অন্য কেউ নিতে পারে না।
তারপর ও তো রিজভী আমায় আপন করে নিয়েছে। সবসময় আমায় সুযোগ দিয়েছে ওকে ভালোবাসার। আমিই অন্ধ সেজে ছিলাম। আমিই বারবার ওকে অবহেলা করেছি।
বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর রিজভী বলল, আচ্ছা শৈলী তোমার বয়স কত বলো তো??
আমি একটু অবাক হলাম। নির্লিপ্ত ভাবে বললাম, ২২ হবে।
রিজভী বলল, আমার বয়স ৩০। তুমি আমার সংসারে এসেছো, আমার ঘর আলো করেছো এটাই আমার কাছে অনেক। বয়স কখনও দুজন মানুষ এর বোঝাপড়া তে বাঁধা সৃষ্টি করে না। তুমি শুধু আমাকে একটু তোমায় ভালোবাসার সুযোগ দাও। দেখবে, সব ঠিক হয়ে গেছে। পৃথিবীটা যে কতটা সুন্দর তা তুমি জানো না শৈলী।
আমি তোমায় দেখাবো। আমি তোমায় আর কিছু না দিতে পারি, খুব করে ভালোবাসতে পারবো। কি, সেই সুযোগটা দিবে না আমায়??
আমার চোখ ভিজে গেল। আমি কিচ্ছু বলতে পারলাম না। রিজভী দু হাত বাড়িয়ে আমায় কাছে টেনে নিল, আমি প্রথম বারের মতো ওর বুকে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করলাম।
রিজভী ওর হাত দিয়ে আমার কপালে আসা চুলগুলো সরিয়ে, আমার কপালে আলতো করে ওর ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। আমার কাছে মনে হল, জীবনটা আসলেই অদ্ভুত রকম সুন্দর। আমরা নিজেরাই বাঁচার মানে খুজি না। কিছু অযথা কারণ মনের মাঝে পুষে রেখে আমরা শুধু মরতে বসি।
কারো বিশাল হৃদয়ের ভালোবাসা উপেক্ষা করে, স্বার্থপরের মতো মরে গেলে যে ভীষণ পাপ হয় এই সহজ সত্যটা আমরা মানতেই চাই না। এসব ভাবতে ভাবতেই মনে হল, রিজভী আর রাদ কে ঘিরেই আমার ছোট্ট পৃথিবী সাজাবো। যেই পৃথিবীর পুরোটা থাকবে অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়ে সাজানো। ভাবতে ভাবতে চোখে ঘুম নেমে এলো।
রিজভীর বুকে মাথা রেখেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। ঘুম জড়ানো গলায় বললাম, "রিজভী আমি বড্ড ক্লান্ত, এবার আমি একটু ঘুমোবো, একটা শান্তির ঘুম।"
#আমার_বৃত্ত
#অণুগল্প
-Sabiha mou
আমি ওর দিকে একবার তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলাম।
আশ্চর্য্য লোক তো। এতক্ষণ ধরে শাওয়ার নিলাম তার কোন মাথা ব্যথা নেই??
আমি এক কাপ চা করে এনে বললাম, এই যে আপনার চা।
রিজভী উঠে বসতেই আমি চা এর কাপ টা সামনে রেখে বারান্দায় চলে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর রিজভী পেছনে এসে দাঁড়াল। হাতে টাওয়েল নিয়ে আমার ভেজা চুল গুলো মুছে দিতে দিতে বলল, "এই সন্ধ্যা বেলায় কেউ এতক্ষণ ধরে শাওয়ার নেয়?? চুলগুলোও তো মোছো নি। এসব এর যত্ন না নিলে বাবু কি ভাববে বলো তো?? বলবে, আমার আম্মু নিজের ই যত্ন নিতে পারে না, আমার যত্ন কি নিবে??
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। রিজভী আমার চুলগুলো মুছে দিতে দিতে "রাদ" এসে রিজভীর পায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল, বাবা, বাবা আমার কার্টুন চ্যানেল টা বের করে দাও।
রিজভী বলল, "দিচ্ছি বাবা। মা এর চুল গুলো আগে মুছে দেই। দেখো না, মা ঠিক করে চুল ই মুছতে পারে না।"
রাদ খিলখিল করে হেসে বলল, "মা তুমি চুল মুছতে পারো না?? তুমি চুলগুলো কেটে ফেলো, তাহলে আর মুছতে হবে না।"
৪ বছর বয়সের বাচ্চা এত পাকা পাকা কথা কিভাবে বলে ভাবতেই আমি হেসে দিলাম।
রিজভী রুমে চলে গেল রাদ কে কোলে নিয়ে।
মাঝ রাতে "রাদ" এর কান্না শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। আমি এক রুমে শুই, পাশের রুমে "রাদ" আর ওর বাবা ঘুমায়। আমি উঠে যেয়ে দেখি রাদ ঘুমের মধ্যে একটু কান্না করছিল তাই রিজভী ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে।
আমি চুপ করে চলে এলাম। জগৎ এর সব মায়া ত্যাগ করা যায়, একটা নিষ্পাপ বাচ্চার মায়া হয়তো এড়িয়ে যাওয়া যায় না। নিজের ভেতর অপরাধবোধ হতে লাগল। বাচ্চাটাকে আমার কাছে নিয়ে ঘুমানো উচিত ছিল।
পরদিন সকালে ৭ টা বাজতেই, রাদ এসে কাছে বসে ডাকতে থাকল, "আম্মু, আম্মু আমাকে রেডী করিয়ে দিবে না?? স্কুলে যাবো। আমি চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসতেই দেখি, রিজভী, রাদ এর স্কুল ড্রেস হাতে নিয়ে এ ঘরে চলে এসেছে।
আমি বললাম, দিন আমার কাছে, আমি রেডী করিয়ে দিচ্ছি। রিজভী বলল, আহা সমস্যা নেই তো। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও, আজ না হয় আমিই রেডী করিয়ে দেই।
রিজভী রাদ কে রেডী করাতে লাগল। আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
যতক্ষণে আমি এসেছি, ততক্ষণে রিজভী, রাদ কে নিয়ে স্কুলে চলে গিয়েছে। ডাইনিং টেবিল এর উপর দেখলাম পাউরুটি, জেলী, আর অর্ধেক সেদ্ধ ডিম ঢাকা দেয়া। নিশ্চয়ই রাদ খায় নি পুরোটা। বাচ্চাকাচ্চার কাজ ই এমন। খেতে গেলেই তাদের বিপদ।
আমি নিজের জন্য এক কাপ কফি করে খেতে বসলাম। কিছুক্ষণ পর ই রিজভী চলে এলো। অফিস থেকে ক'দিন এর ছুটি নেয়া, এখন হয়তো বাসায় ই থাকবে। আমি বললাম, চা করে দিবো?
রিজভী বলল, এক কাপ দিলে ভালো হয়।
আমি চা করে এনে দেখি, রিজভী সব ঘরের বিছানার চাদর টানটান করে, রাদ এর এলোমেলো বই-খাতা, খেলনা, সব গুছিয়ে রাখছে।
আমি বললাম, আপনি করছেন কেন?? আমি ই করতাম।
রিজভী হেসে বলল, "শৈলী" তুমি কি ভাবো বলো তো আমাকে?? আমি কিচ্ছু পারি না?? তুমি দেখোই না, আমি কি কি পারি।
আমি বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ দেখতে লাগলাম। দুপুরের রান্নাটা রিজভী নিজেই করল, আমি শুধু পাশে দাঁড়িয়ে দেখলাম।
একবার মাঝে বললাম, আমি তরকারী কেটে দেই। রিজভী বলল, আর কিছুদিন পর নিজেই সব করো। কিন্তু যখন আমি রান্না করবো তখন তুমি কিচ্ছু করতে পারবে না। তবে, হ্যাঁ একটা কাজ ই করতে পারো।
বললাম, কি কাজ??
মাঝে মাঝে আমি ঘেমে গেলে, তোমার শাড়ীর আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে দিতে পারো।
আমি কথাটা শুনে কিঞ্চিত লজ্জা পেলাম। কিছু বললাম না।
রাদ কে দুপুরে আমিই নিজে হাতে ভাত খাইয়ে, ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। বাচ্চাটাকে ঘুমন্ত অবস্থায় আরো নিষ্পাপ লাগে। রিজভী এসে পাশে শুয়ে পড়ল। আমি উঠে যেতে গেলে রাদ নড়েচড়ে উঠল। রাদ ঘুমের মধ্যেও বারবার উঠে পরে। ওর বুকের ওপর হাত রাখলে আবার, চুপচাপ ঘুমায়। বাচ্চাগুলো খুব মায়া জাগায়।
পরদিন এক আত্মীয়ের বাসায় দাওয়াত ছিল।
আমি আলমারি থেকে ডার্ক ব্লু রঙ এর হাফ সিল্ক শাড়ী টা বের করলাম। শাড়ী পরতে পরতে দেখলাম রিজভী এসে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি তাকালে ও বলল, দেখি এদিকে ঘুড়ো তো। আমি বললাম, কেন??
রিজভী নিজেই আমার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে, শাড়ীর কুচি ঠিক করে দিল। আমার ভীষণ অস্থির লাগছে, প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।
আমি বললাম, আপনি কেন বারবার অধিকার খাটাতে আসেন??
রিজভী বলল, ভালোবাসার সুযোগ টা তো অন্তত দিবে। না' কি সারা জীবন আমাকে দোষী করে রাখবে??
আমি আর কিচ্ছু বললাম না, ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে রাগে ফুলতে থাকলাম। রিজভী চলে গেল।
ভেবেছিলাম দাওয়াতে যাবো না। তারপর ও যেতে হল।
মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে বসতেই টের পেলাম মাথাটা ভার হয়ে আছে। সারা শরীরে কেমন যেন একটা চিনচিনে ব্যথা। সারা শরীর ঘেমে নেয়ে উঠেছে আমার। পাশে রাখা পানির বোতল টা থেকে পানি খেলাম। খুব অস্থির লাগছে আমার। সেই মূহুর্তে ফারাবীর কথা খুব মনে পড়ল। খুব বেশী মনে পড়ছে ওকে। ও ছিল অন্য ডিপার্টমেন্ট এ, আর আমি অন্য ডিপার্টমেন্ট এ। তারপর ও ফ্রেন্ড সার্কেল এর কানেকশন এ ওর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আস্তে আস্তে ওর প্রতি আমি দূর্বল হতে শুরু করি। একদিন নিরুপায় হয়ে বলেই ফেলি ওর প্রতি আমার ভালো লাগার কথা। আমাকে আশ্চর্য্য করে দিয়ে ফারাবীও আমাকে প্রপোজ করে বসে।
ফারাবী বলে, আমি তোমায় আগে থেকেই পছন্দ করতাম, তুমি ব্যাপারটা কিভাবে নাও, তাই বলার সাহস পাই নি।
বেশ ভালোই চলছিল আমাদের নতুন নতুন প্রেম। প্রেমে পরলে না কি সব রঙ্গীন লাগে চোখে, মানুষ আকাশে উড়তে শুরু করে কল্পনায়। আমার ও ঠিক সে সব ই হচ্ছিল। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর একদিন হঠাৎ ফারাবী বলল, ও না কি দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছে। আমার পৃথিবী টা তখন সবে একটু রঙ দিয়ে সাজাতে শুরু করেছিলাম, আর এই যেন সব শেষ হয়ে গেল।
আমি তখন বড্ড অবুঝ ছিলাম। ফারাবী কে আমি কোনমতেই হারাতে পারবো না এই ভেবে, নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিন-রাত কান্নাকাটি করতে লাগলাম। ফারাবী আমাকে অনেক বুঝিয়ে, ফিরে এসে আমার বাসায় বিয়ের কথা বলবে এসব বলে চলে গেল।
ফারাবী চলে যাওয়ার পরের তিন- চার মাস বেশ ভালোই কাটছিল। ও প্রায় প্রায় ই সময় করে আমার সাথে কথা বলত। কিন্তু আস্তে আস্তে টের পেলাম আমাদের মধ্যে ভালোবাসাটা আর আগের মতো নেই। ও কেমন যেন ছাড়া ছাড়া ভাব দেখায়। আর কেমন যেন বিরক্তি ফুটে ওঠে ওর কথাবার্তায়। আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম, আসলে কি সমস্যা?? আমার ভালোবাসায় ই কি কোন ঘাটতি আছে??
আস্তে আস্তে ও যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। এক সপ্তাহ যায়, দু সপ্তাহ যায়, এক মাস, দু মাস, ফারাবী আর খোঁজ নেয় না। না কোন ফোন কল, না টেক্সট। আমার টেক্সট এর রিপ্লাই ও দেয়না। আমার নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগল। রোজ ভাবতাম, আজ বুঝি ও কল করবে, নাহ, ও আর আমার খবর ই নেয় না।
একদিন ও কল করল। আমাকে বলল, ওকে যেন ভুলে যাই।
আমি তখন নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়েছিলাম। ওকে কিছুই বলি নি, কোন অভিযোগ ও রাখি নি। কিন্তু ভুলে যাওয়া কি এতই সহজ??
এত্ত সহজে একটা মানুষকে ভুলে ফেলা যায়?? শুনেছিলাম দূরে থাকলে না কি ভালোবাসা বাড়ে, আরো মায়া বাড়ে একে অন্যের প্রতি। আমার তো পুরোই মিথ্যে হয়ে গেল।
দূরে যেয়ে তো আমার ভালোবাসা আমাকে এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিল, যেখানে আমি রোজ ভাবতে শুরু করি কিভাবে আমি মরবো? বাহ, জীবন আমাদের কত কিছুই শেখায়।
নাহ, আমি আর কিচ্ছু ভাবতে পারছি না। আমার জাস্ট মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ব্লেড টা কোথায়?? কোথায় রেখেছিলাম যেন??
এই তো, এই তো ব্লেড টা।
আমার হাত কাঁপতে শুরু করল। ব্লেডটা হাতে নিয়ে মনে হচ্ছে আমার সারা শরীর ঝিমঝিম করছে। নাহ, কোন আবেগ না আর। আজকে আমি মরবোই। ব্লেড টা বাম হাতের কব্জি বরাবর বসিয়ে দিতেই, রাদ কেঁদে উঠল। মা ও মা।
আমি ব্লেড টা আর বেশী জোর দিতে পারলাম না। কনসেন্ট্রেট দিতে না পারায় হাত কাঁপা শুরু হয়ে গেল, আর ব্লেড টাও পড়ে গেল। তবে পোচ মারাতে হাতটা কেঁটে গেছে।
রাদ এর কান্না শুনে পাশের রুম থেকে রিজভী এসে ঘরের লাইট জ্বালায়। রিজভী আমাকে ফ্লোরে বসে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো বোধহয়।
রিজভী, রাদ কে আবার শুইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল। আমি তখনও ওভাবেই বসে আছি। হাতটা অনেকখানি কেটে গেছে। রক্ত পরে শাড়ীর বেশ খানিকটা রক্ত লেগে গেছে। রিজভী আমার ডান হাতটা ধরে টেনে পাশের রুমে নিয়ে গেল।
আমি যেন আমার মধ্যে নেই। কি হচ্ছে কিছুই যেন আমাকে কোনভাবে নাড়া দিচ্ছে না।
রিজভী ফাস্ট এইড বক্স টা এনে আমার হাতটা ব্যান্ডেজ করে দিল।
এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দিল। আমি পানি টা খেয়ে চুপ করেই বসে রইলাম। রিজভী একটা ভেজা টাওয়েল এনে আমার মুখটা মুছে দিল, চুলগুলো একটা পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে আটকে দিল। এতক্ষণ পর যেন আমার হুশ এলো।
আমি হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ব্যান্ডেজ করা। অস্থির ভাবটা অনেকখানি কেটে গেছে। এই মানুষটার উপর হঠাৎ একটা মায়া জন্মাতে লাগল। কি করতে যাচ্ছিলাম আমি?
রিজভী কে ছেড়ে, রাদ কে ছেড়ে মরতে যাচ্ছিলাম??
কার জন্য? ফারাবীর জন্য?? যে কি না আমার কথা ভাবেই নি।
যখন আমি একেবারে ভেঙ্গে পরেছিলাম তখন তো ফারাবী একবারের জন্যেও আমার খোঁজ নেয় নি।
অথচ, আজ আমি একটা ভুল কিছু করে ফেলতে পারতাম। হয়তো মরেই যেতাম। এই মানুষ টা না থাকলে, রাদ কেঁদে না উঠলে হয়তো কিছু একটা অঘটন ঘটেই যেত আজ।
আমি কে এই মানুষটার??
আমার জন্য তার এত ভালোবাসা কেন, যেখানে আমার সাথে তার কোন প্রেম ছিল ই না। আমি তার সন্তানের মা ও না।
আমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী হওয়া সত্বেও এত ভালোবাসা কেন আমার জন্য?
রাদ, ছোট নিষ্পাপ বাচ্চাটা, ওর ই বা কি দোষ? ও কেন বারবার মা হারাবে?
ওর নিজের মা মারা যাওয়ার পর আমিই তো ওর মা হয়ে এসেছি। বোধ হওয়ার পর থেকে তো বাচ্চাটা আমাকেই মা বলে জানে। আমিও যদি আকাশের তারা হয়ে যাই, তাও এসব ফালতু কারণে, বাচ্চাটা একা একা কিভাবে বড় হবে??
হ্যাঁ, ওর বাবা ঠিক ওকে সামলে নিবে, কিন্তু স্রষ্টা কি আমায় ক্ষমা করবেন??
কত বড় পাপ করতে যাচ্ছিলাম আমি, ভাবতেই নিজের প্রতি ঘৃণা জন্মাচ্ছে।
আর, রিজভীর ও তো কোন দোষ নেই। আমি তো সব জেনেই বিয়েটা করেছি। তাহলে, কেন এসব করছি?
একজন মানুষ কি তার স্ত্রী এর কাছ থেকে একটুখানি ভালোবাসা এক্সপেক্ট করতে পারে না??
প্রথম স্ত্রী এর প্রতি হয়তো ভালোবাসা বেশি থাকে। তার জীবনের প্রথম নারী, তার জীবন টা গোছানোর পেছনে যার অবদান এত বেশি, তার প্রথম সন্তানের মা, এসবের জন্যে হলেও প্রথম স্ত্রী এর জায়গা টা অন্য কেউ নিতে পারে না।
তারপর ও তো রিজভী আমায় আপন করে নিয়েছে। সবসময় আমায় সুযোগ দিয়েছে ওকে ভালোবাসার। আমিই অন্ধ সেজে ছিলাম। আমিই বারবার ওকে অবহেলা করেছি।
বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর রিজভী বলল, আচ্ছা শৈলী তোমার বয়স কত বলো তো??
আমি একটু অবাক হলাম। নির্লিপ্ত ভাবে বললাম, ২২ হবে।
রিজভী বলল, আমার বয়স ৩০। তুমি আমার সংসারে এসেছো, আমার ঘর আলো করেছো এটাই আমার কাছে অনেক। বয়স কখনও দুজন মানুষ এর বোঝাপড়া তে বাঁধা সৃষ্টি করে না। তুমি শুধু আমাকে একটু তোমায় ভালোবাসার সুযোগ দাও। দেখবে, সব ঠিক হয়ে গেছে। পৃথিবীটা যে কতটা সুন্দর তা তুমি জানো না শৈলী।
আমি তোমায় দেখাবো। আমি তোমায় আর কিছু না দিতে পারি, খুব করে ভালোবাসতে পারবো। কি, সেই সুযোগটা দিবে না আমায়??
আমার চোখ ভিজে গেল। আমি কিচ্ছু বলতে পারলাম না। রিজভী দু হাত বাড়িয়ে আমায় কাছে টেনে নিল, আমি প্রথম বারের মতো ওর বুকে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করলাম।
রিজভী ওর হাত দিয়ে আমার কপালে আসা চুলগুলো সরিয়ে, আমার কপালে আলতো করে ওর ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। আমার কাছে মনে হল, জীবনটা আসলেই অদ্ভুত রকম সুন্দর। আমরা নিজেরাই বাঁচার মানে খুজি না। কিছু অযথা কারণ মনের মাঝে পুষে রেখে আমরা শুধু মরতে বসি।
কারো বিশাল হৃদয়ের ভালোবাসা উপেক্ষা করে, স্বার্থপরের মতো মরে গেলে যে ভীষণ পাপ হয় এই সহজ সত্যটা আমরা মানতেই চাই না। এসব ভাবতে ভাবতেই মনে হল, রিজভী আর রাদ কে ঘিরেই আমার ছোট্ট পৃথিবী সাজাবো। যেই পৃথিবীর পুরোটা থাকবে অফুরন্ত ভালোবাসা দিয়ে সাজানো। ভাবতে ভাবতে চোখে ঘুম নেমে এলো।
রিজভীর বুকে মাথা রেখেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। ঘুম জড়ানো গলায় বললাম, "রিজভী আমি বড্ড ক্লান্ত, এবার আমি একটু ঘুমোবো, একটা শান্তির ঘুম।"
#আমার_বৃত্ত
#অণুগল্প
-Sabiha mou
No comments