Header Ads

ক্যাটাগরিঃ সাহিত্য।
সাব-ক্যাটাগরিঃ ডিটেকটিভ।
গল্পঃ প্ল্যানচেট।
লেখকঃ হাসনাত জাহান।
পর্বঃ প্রথম।
___
বিকেলবেলা নামাজ পড়েই জানালার পাশে আরামকেদারায় বসে আছি।বাম হাতে চায়ের কাপ,ডান হাতে জার্মানি কবি 'হেলমাট হাইসেনবাটেলের' কবিতার বই পড়তেছি।হঠাৎ চোখ আকাশের দিকে গেলো।সন্ধ্যার আগেই আজ পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যাবে।পশ্চিমের আকাশে এখনো খানিকটা জায়গা জুড়ে অস্তগত সূর্যের বুকের রক্ত-মাখানো আলো ছড়ানো আছে বটে,কিন্তু তার চিহ্ন তাড়াতাড়ি মুছে ফেলবার জন্য বিদ্যুৎ গতিতে হু হু করে বিশাল আকৃতির কালো মেঘ ভড় করেছে আকাশের বুকে।চারদিকে ছোট-বড় পাহাড় আর বনজঙ্গল;মাঝখানে উঁচু-নিচু পথে দিয়ে একটা মোটরগাড়ি ছুটে এসে আমার বাড়ির গেইটে থামল।হুট-হুট করে তিনজন যুবক গাড়ি থেকে নেমে নিচ তলার সিঁড়ি বেয়ে উঠে আমার ঘরে ঢুকল।ঘরে ঢুকেই আমার টেবিলে একটা পত্রিকা রেখেই বলে উঠলো,

___দেশে কি শান্তিতে বসবাস করতে পারবোনা নাকি!!

___এই গোধূলি সন্ধ্যায় মেজাজ গরম কেন ডিটেকটিভ রয়?

___গরম কেনই বা হবে না!আজকে দুই-দুইটা খুন হয়েছে।প্রতিদিন যদি এভাবে চলতে থাকে,তাহলে তো আর বাহিরে চলাচল করাটা অপরাধ হয়ে যাবে।

___এটা তো নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়।আর এখনকার 'খবরের কাগজ' গুলাতে তো এসব ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়না।তো খুন হয়েছে কোথায় সেটা একটু খুলে বলুন।

___গতকাল সন্ধ্যায় 'ঢাকা উত্তরা ৪ নাম্বার সেকশন' একটা বাড়িতে একটা মেয়েকে খুন করা হয়েছে।কিন্তু আশ্চর্যকথা হলো কিভাবে খুব হয়েছে সেটা এখনো জানা যায়নি।কোন চিহ্ন আবিষ্কার করা যায়নি এখন পর্যন্ত।তাই উপর থেকে 'কেস' টা আপনার কাছে দেয়া হলো।ডিপার্টমেন্ট সব চেয়ে দক্ষ ডিটেকটিভ তো আপনি ছাড়া আর কেউ নেই।

___ঠিক আছে ফাইলটা রেখে দিন।কিছুদিন সময় দিবেন।কাজ শেষ হলে জানাবো।এখন আসুন।
__
চা টা ঠাণ্ডা হয়ে গেলো।চা টা রেখে ফাইন নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলাম।ফাইল খুলে চোখ বুলিয়ে নিলাম।কিছুই আশাকর জনক ইঙ্গিত পেলমনা।মাথায় কিছু কাজ করছেনা।মাথার ভিতরে স্নায়ু গুলো কেমন জেন স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে।মনে হয় তারাও আজ বৃদ্ধ হয়ে গেছে।সাস্থহীনতায় ভুগছে মাথার স্নায়ু গুলো।

ভার্সিটি লাইফের কিছু ডিটেকটিভ বই বের করে হাতের কাছে নিলাম।আমার একটা অভ্যাস আছে,বিদ্যালয় জীবনে যত বই-কিতাব পড়েছি,সব গুলো আমি যত্ন করে রেখে দেই।কখন কোনটা কাজে লেগে যায় বলা যায়না।আমি ছোটবেলায় মক্তবে পড়া 'কায়দা','কোরআন শরিফ' এমনকি ছোটবেলার মায়ের হাতে 'বর্ণমালা' বইটাও খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছি।ডিটেকটিভ বই গুলা নিয়ে বসলাম।একটা বই হাতে নিলাম।বইটার নাম ছিল 'দারোগার দপ্তর'।বইটি 'প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়' এর লেখা অসাধারণ একটি ডিটেকটিভ বই।বইটি অবশ্যই প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৯২ সালে।বইটিতে 'পুলিশী বিবরণমূলক' কিছু কাহিনী উল্লেখ ছিল।বইটি পড়ে জ্ঞান বৃদ্ধি পেলেও খুনের রহস্য কিছু জানা গেলনা।তারপর 'বাংলা সাহিত্যের' প্রথম মৌলিক ডিটেকটিভ গল্প 'পাঁচকেড়ি দে' বইটা নিয়ে কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করলাম।মনে হচ্ছে জ্ঞানের সাগরের মাঝখানে বসে আছি।বাংলায় একটা কথা আছে,"বাতির নিচে(তলায়) আলো থাকেনা।"ঠিক এত জ্ঞানের সাগরে বসেও আমার ভিতরে জ্ঞান কমতি মনে হচ্ছে।
__
তারপর দৌড়ে লাইব্রেরী'তে গেলাম।সেখানে গিয়ে অনেকগুলা ডিটেকটিভ গল্পের বই খুঁজতে লাগলাম।দোকানের সেলস ম্যান আমাকে বললো,আপনি 'দীনেন্দ্রকুমার' স্যার এর জনপ্রিয় গোয়েন্দা কাহিনী 'রহস্য লহরী' সিরিজটা পড়ে দেখুন।কিছু অন্যরকম খুনের রহস্য ও গোয়েন্দার অভাবনীয় পদ্ধতি জানতে পারবেন।তার কথামতো বইটা নিয়ে বাড়ি চলে গেলাম।বই পড়তে-পড়তে আমার ছোটবেলার একটা ঘটনা মনে পড়ে গেছে।আমি প্রায় দেখতাম আমার দাদা ঘরের দরজা বন্ধ করে কার সাথে জেনো কথা বলতো।জিজ্ঞেসবাদ করলে কখনওই কিছু বলতোনা।মায়ের মুখে শুনেছি,দাদা নাকি মৃত মানুষের আত্মার সাথে কথা বলে।এটা শুনে আমার খুব হাসি পেয়েছিল।এমনকি এটা নিয়ে আমার বন্ধু-বান্ধবের সাথে খুব হাসা-হাসি করতাম।আমার বন্ধুরা বলতো,"তোর দাদা গাঞ্জা খাইয়া ঘরে ধুকে বকবক করে'।অন্যজন বলে 'তোর দাদা মনে হয় মাল খেয়ে লোড হয়ে থাকে।তখন মৃত আত্মাগো লগে একটু সুখ-দুঃখের আলাপসালাপ কইরা লয়'।তখন হাস্যকর বিষয়টা যে আমার এত কাজে লাগবে বুঝিনি।
__
মৃত মানুষের আত্মার সাথে কথা বলার পদ্ধতি হচ্ছে প্ল্যানচেট।১৮৮৩ সালে ইউরোপীয় দেশগুলোতে সর্বপ্রথম প্ল্যানচেটের গবেষণা শুরু হয়।ফরাসির পরলোকগত তত্ত্ব বিশেষজ্ঞ 'এফ সে প্ল্যাঁশেত' সারাজীবন আত্মার সঙ্গে জীবিত মানুষের যোগাযোগ ঘটানোর চেষ্টা করে জান।এবং এই যোগাযোগ এর জন্য তিনি অনেক ধরণের নিয়মকানুন তৈরী করেন।তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তার নামের সাথে মিল রেখে তত্ত্বটার নাম 'প্ল্যানচেট' দেয়া হয়।

ক্যাটাগরিঃ সাহিত্য।
সাব-ক্যাটাগরিঃ ডিটেকটিভ।
গল্পঃ প্ল্যানচেট
লেখকঃ হাসনাত জাহান।
পর্বঃ দ্বিতীয়।
__
পড়ার টেবিলে প্ল্যানচেট করার কথা ভাবছি।প্ল্যানচেট করলে কি সত্যি খুনের রহস্যটা পরিষ্কার হবে!মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।আর প্ল্যানচেট করতে হলে যে বাসায় খুন হয়েছে সেই বাসায় গিয়ে প্ল্যানচেট করলে হয়তো বেশী উপকৃত হবে।কিন্তু প্ল্যানচেট করার নিয়ম তো আমার জানা নেই।সঠিক নিয়ম না জেনে করলে হয়তো উল্টো আমার উপরে আঘাত আসতে পারে।বিশ্ববিদ্যালয়ের এক স্যার কে ফোন দিলাম।তাকে জিজ্ঞেস করলাম,প্ল্যানচেট করার সঠিক নিয়ম কি আবিষ্কার হয়েছে!উত্তরে তিনি বললেন,এখনো সঠিক নিয়ম জানা যায়নি।তবে একটা নিয়ম ফলো করে নাকি সেটা করা যায়।স্যার আমাকে যা বললেন,তা নিম্নরূপ।

প্ল্যানচেট করার জন্য অন্ততপক্ষে বিজোড় সংখ্যা লাগে।বিজোড় সংখ্যা যে কোন হতে পারে।তবে কমপক্ষে ৩(তিন)জন হলে ভাল।তিনজন হলে দুইজন পুরুষ,একজন নারী হতে হবে।আর বা দুইজন নারী,একজন পুরুষ।প্ল্যানচেট করার জন্য একটি বোর্ড লাগে।বোর্ডটির মাঝখানে একটি ছিদ্র থাকে।এবং বোর্ডটির মাঝখানে একটা 'ক্যাস্টরদানা' থাকে,যার জন্য বোর্ডটি চক্রাকারে ঘুরতে পারে।যে ঘরে প্ল্যানচেট হবে সেই ঘরের এক কোণে একটি 'মোমবাতি' বা একটি 'হারিকেন' জালিয়ে রাখতে হবে।যদি হারিকেন,মোমবাতি নিভে যায়,বুঝতে হবে আত্মা ঘরে প্রবেশ করেছে।আর যে তিনজন প্ল্যানচেট করবে,তাদের একজনের হাতে আরেকজনের হাত থাকবে।আত্মা প্রতিজনের দেহ ভেদ করে উল্লেখিত প্রশ্ন গুলো লিখে নিবে এবং উত্তর দিয়ে যাবে।

যদিও বিষয়টার সাথে আমি কখনো সম্পর্কিত নয়,তাই বিষয়টা বিশ্বাস-অবিশ্বাস এর প্রশ্ন মাথায় আসতেছেনা।আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়,"আপনি ভুতে বিশ্বাসী? আমি এক কথায় উত্তর দিবো 'না'।কারণ এই বিষয় সম্পর্ক'এ আজ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব পাওয়া যায়নি।বিজ্ঞান এই বিষয় সম্পর্কে অনিশ্চিত।কতিপয় মানুষ এটা বিশ্বাসী,আবার কতিপয় এটা অবিশ্বাসী।তবে একটা তথ্যের মধ্যে জানতে পেরেছি,"মানুষ মারা যাবার পরে,কিছু মানুষের আত্মা চলে যায়;আবার কিছু মানুষের আত্মা আবার ফিরে আসে।তাও সেটা প্ল্যানচেট এর মাধ্যমে।সেই চলে আসা স্প্রিরিটর মাধ্যমে অনেক অজানা তথ্য হয়তো মানুষ জানতে পারে।

অনেক আগে জার্মানি এক ব্যক্তি 'সম্রাট আশোকের' বুদ্ধমুর্তি 'তক্ষশীলার' তৈরী করার রহস্য জানার জন্য প্ল্যানচেট করছিলেন।কিন্তু অতিশয় ভয় পাওয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

আমার এক দাদামশাই।তিনি পরলোক সম্পর্কে ভীত।কোরআন শরীফের কবরের আজাবের বর্ণনা শুনে তিনি প্রায়শই পরলোক বিষয়ে প্ল্যানচেট এর মাধ্যমে খুব জানার ইচ্ছা।একদিন তিনি পরকালের বৃত্তান্ত শুনার জন্য প্ল্যানচেট করতে বসছেন।প্ল্যানচেট করে জিজ্ঞেস করলেন,"পরকালের অবস্থা সম্পর্ক নিয়ে কিছু বল?প্ল্যানচেট উত্তর দিলেন,"যে কথা আমি মরে জেনেছি,সে কথা বেঁচে থেকে ফাঁকি দিয়ে জেনে নিবে তা হতে পারেনা।"ঐ দিনের পর থেকে দাদামশায় আর কোনদিন প্ল্যানচেট করে কিছু জানার ইচ্ছা হয়নি।

সেদিন রাতে আমি আর আমার তিনজন কলিগ মিলে প্ল্যানচেট করলাম উক্ত খুনের রহস্য জানার জন্য।প্ল্যানচেট এর মাধ্যমে সবটা পরিষ্কার না হলেও কিছু ইঙ্গিত জানা গেলো।মেয়েটির বাসায় কাগজপত্র খুঁজে জানতে পারলাম মেয়েটিত শ্বাসকষ্ট ছিল।আর মেয়েটিত রুমে এক সাথে তিনটি বড় টেবিল ফ্যান দেখতে পেলাম।এক সাথে এতগুলা টেবিল ফ্যান দেখে একটু আশ্চর্যবোধ জাগলো।যাইহোক তারপর সেখান থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।বাসা একটু দূরে তাই বাসে উঠলাম।বাসে উঠে জানার পাশে বসলাম।বৃষ্টি হওয়াতে আবহাওয়া একটু শান্ত প্রকৃতির।তবে প্রচুর পরিমাণে বাতাস বইছে।বাসের জানালা খুলে দিয়ে বাতাস খাচ্ছি।একটুপর আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতেছে।তারপর জানালা বন্ধ করার পর স্বাভাবিক মনে হলো।

বাসায় যাওয়ার পর কেসটা নিয়ে বসলাম।মৃত্যুর কোন অস্বাভাবিক কারণ নেই।কি এমন হতে পারে,যার কোন চিহ্ন থাকবেনা।হঠাৎ বাসের ঘটনা মনে পড়ে গেলো।নাকের সামনে অতিরিক্ত বায়ু প্রবাহে কি মানুষের শ্বাস বন্ধ হতে পারে!! হ্যাঁ সত্যি মনে হয় রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছি।আমার বাসার সব টেবিল ফ্যান চালু করে,একটা শিঙ্গা বাতাসের সম্মুখে রেখে সিঙ্গার অপর মুখ আমার নাকের সামনে রেখে দেখলাম,সত্যি আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতেছে।আবার মেয়েটির শ্বাসকষ্ট ছিল।আমার মত একজন স্বাভাবিক মানুশের যদি শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে,তাহলে একজন শ্বাসকষ্ট রোগীর অবশ্যই শ্বাস বন্ধ হতে পারে।আমার কথায় বিশ্বাস না হলে আপনি একটু পরীক্ষা করে নিতে পারেন।উত্তর আপনি পেয়ে যাবেন।

No comments

Theme images by fpm. Powered by Blogger.