Header Ads

সুপ্ত ভালোবাসা।

আজমল সাহেব কখনো উনার স্ত্রীকে বাপের বাড়িতে কিংবা কোথাও বেশি দিনের জন্য বেড়াতে দেন না।বলতে গেলে তিনি তার স্ত্রীকে ঘর থেকে বের হতেই দেননা।উনার খুব অসুবিধে হয়ে যায় স্ত্রী কোথাও গেলে।আজমল সাহেব সব কিছু সময় মতো করা পছন্দ করেন।তার এই সময়ানুবর্তিতা একমাত্র উনার স্ত্রী রেনুবেগম মেনে চলে।আজমল সাহেবের কন্যা পুত্ররাও পারেননা আজমল সাহেবকে মনমতো সেবা করতে।।।

ইদানিং রেনুবেগমের কাজের চাপ খুব বেড়েছে।আজমল সাহেবের মেয়ে এসেছে বেড়াতে।মেয়ে প্রেগনেন্ট তাই আজমল সাহেবের কড়া আদেশ মেয়ের যত্নের কোনোরকম হেরফের যাতে না হয়।আজমল সাহেবের রগে রগে রাগ,তাই রেনু বেগম খুব ভয়ে থাকেন পান থেকে চুন খসলেই রেনু বেগমের উপর চড়া হবেন আজমল সাহেব।আজমল সাহেব মেয়ে জামাইকে কড়া ভাবে বলে দিয়েছেন উনার প্রথম নাতি/নাতনি উনার বাড়িতেই হবে।

সারাদিনের দৌড়ঝাপে রেনু বেগম একদম নিজের জন্য সময় পাননা।রাতে যখন ঘুমাতে আসেন ক্লান্তিতে হাত পা অবশ হয়ে আসে রেনুবেগমের।আজমল সাহেব খুব বিরক্ত হয়ে বলেন টাকা পয়সাতো কম দিইনা তোমার হাতে ডাক্তার দেখাওনা কেনো?রেনু বেগম আস্তে করে জবাব দেয় আমিতো একা যেতে পারিনা টাকা থাকলে কি লোকতো নেই যে ডাক্তার দেখাবো সাথে গিয়ে।আজমল সাহেব খেকিয়ে উঠেন।বলেন তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাবো? ফ্যানফ্যান করোনাতো যাও ঘুমাও।রেনুবেগম বালিশটা হাতে নিয়ে ছোটমেয়ের ঘরে শুতে আসেন।মেয়ে বলে মা তুমি যে কেনো এই লোকটার এত সেবা করো তাও বুঝিনা।রেনু বেগম চেচিয়ে উঠে বলে তোকে বুঝতে হবেনা,সরে যা জায়গা দেয় আমাকে।মেয়ে সরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

রেনুবেগম ছোটমেয়ের কথায় মনে মনে হাসেন।বড্ড বোকা মেয়েটা।প্রেম ভালোবাসা বুঝেনা।বাপের রাগ একদম সহ্য করতে পারেনা মেয়েটা।অথচ মেয়েটা হয়েছে ঠিক বাপের মতোন।মায়ের জন্য মেয়েটা কষ্টপায়।রেনুবেগমকে মেয়েটা বুঝে অনেক।কিন্তু বোকা মেয়েটা বুঝেনা কেনো রেনু বেগম আজমল সাহেবের এত্ত যত্ন নেন।এইযে আজন্মের বাঁধন,এই বাঁধনে যে মায়া থাকে অটুট।

রেনু বেগমের ২৮ বছর আগের কথা মনে পড়েযায়।আজমল সাহেব রেনুবেগমকে পাগলের মতোন ভালোবাসতেন।রেনুবেগমকে পাবার জন্য কত্ত ঝড়ঝাপটা সামলেছেন।মনে করেই রেনু বেগমের চোখে জল চলে আসে।আজমল সাহেব রেনুবেগমকে বিয়ে করেছেন অনেক ঝামেলা করে।রেনুবেগম এত লজ্জা পায় মনে পড়লে উনার মনে হয় যেনো এ কথা ছেলে- মেয়ে জানলে খুব সর্বনাশ হয়ে যাবে।মুখ দেখাতে পারবেন না তারা সন্তানদের। আচ্ছা তাদের সন্তানরা কি বিশ্বাস করবে আজমল সাহেব একসময় রেনু বেগমকে নিয়ে দেশান্তরি হয়েছিলেন প্রেমের টানে?? রাগি আজমল সাহেব যে ভালোবাসতে পারেন তা কি তাদের সন্তানরা মানবে??

ভাবতে ভাবতে রাত গভীর হয়।রেনু বেগম বুকে কেমন যেনো চিনচিন ব্যাথা অনুভব করেন।পাশে ঘুমানো মেয়েকে তিনি ঘুম থেকে জাগাতে চান না।রেনু বেগমের কেনো যেনো আজমল সাহেবকে দেখতে ইচ্ছে করে।তিনি আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠেন।আজমল সাহেবের বিছানার পপাশে গিয়ে রেনুবেগম আজমল সাহেবের পায়ের কাছে বসে পড়েন।

রেনুবেগমের মনে হচ্ছে তিনি ২৮ বছর আগে ফিরে গেছেন।আজমল সাহেব চিঠির পর চিঠি লিখে উত্তর না পেয়ে রেনু বেগমের পড়ার ঘরের জানালায় দাড়িয়ে আছেন,আর রেনু বেগম ভয়ে দৌড় দিলেন মায়ের কাছে।খুব কষ্ট হচ্ছে রেনু বেগমের তার ইচ্ছে করছে আজমল সাহেবকে ভালোবাসার সে নাম "আজু" বলে ডাকতে।রেনুবেগমের গলা দিয়ে গড়গড় শব্দ বের হতে লাগলো।ডেকে ফেললেন আআআজুজুজু।।।

আজমল সাহেব ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসলেন।ভিড়ভিড় করে বললেন রেনু কি হয়েছে তোমার!!!আজমল সাহেব কিন্তু পায়ের কাছে রেনুবেগমকে দেখেনি।তার মনে হয়েছিলো রেনুবেগম তাকে ডাকছে অনেক দূর থেকে।তিনি ভাবলেন হয়তো সপ্নছিলো  তাই তিনি আবার শুয়ে পড়তে গিয়েছিলেন,কিন্তু পায়ের কাছে রেনুবেগমকে পড়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন।রেনু রেনু করে চিৎকার শুরু করে দিলেন।তার মেয়েরা ছুটে আসলো।পিতার মুখে এই নাম প্রথম শুনলো তারা।প্রথম সন্তান হবার পর থেকে আজমল সাহেব রেনুবেগমকে রেনু ডাকতেন না আর।সবাই আপাতত রেনুবেগমের এ অবস্থা দেখে সবাই রেনুবেগমকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।।

ডাক্তার জানালো রেনু বেগম মাইনর স্ট্রোক করেছেন।অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে এমন হয়েছে।রেস্ট নিতে হবে।অদ্ভুত ব্যাপার বাড়ি থেকে শুরুকরে হাসপাতাল-ডাক্তার দেখানো পুরা সময় আজমল সাহেব রেনু বেগমের হাত আকড়ে ধরে রইলেন।আর রেনু বেগমের কপালে মাথায় হাত বুলাচ্ছেন।ছেলেমেয়েদের বলেদিলেন তিনি আছেন কাউকে কিছু করতে হবেনা।রেনু বেগমকে দুদিন হাসপাতাল থাকতে হবে।আজমল সাহেব সবাইকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন,জানিয়ে দিলেন তিনি থাকবেন রেনুবেগমের কাছে।

রেনু বেগম খুব লজ্জা পাচ্ছেন।আজমল সাহেব তার সমস্ত কাজ করে দিচ্ছে।প্রতিটা সন্তান পেটে আসলে যেরকম খুশি হয়ে কাজকর্মে সাহায্য আর সেবা করতো সেরকম।ছেলেমেয়েরা মাকে দেখতে আসে।তাদেরকে আজমল সাহেব বেশীক্ষন থাকতে দেননা হাসপাতালে।ছেলেমেয়েরা কখনো বুঝতে পারেনি আজমল সাহেবের মন এত নরম।তার মনে রেনুবেগম এত বিশাল জায়গা করে আছে।নিয়মাবর্তী আজমল সাহেব তিনদিন ধরে রেনু বেগমের সেবা করতে এত মগ্ন যে নিজের যত্ন নিতে ভুলে গেছেন।রেনুবেগম বারবার বলেন যান নিজে বিশ্রাম নিন কিন্তু আজমল সাহেবের এককথা রেনু তুমি ভালো হও।তারপর আমার কথা ভেবো।রেনু বেগমের চোখে জল গড়িয়ে পড়ে,আর আজমল সাহেব পরম ভালোবাসায় সে জল মুছে দেয়।আজমল সাহেব সেবার জন্যনয় রেনুবেগমকে চোখের আড়াল করতে চাননা বলেই কোথাও যেতে দেননা।২৮ বছর আগের মতোই লোকটা রেনুবেগমকে ভালোবাসে,সময়ের সাথে সাথে এই ভালোবাসা বদলায়নি শুধু প্রকাশ্য থেকে সুপ্ত হয়েছে।।।

তাকলিমা_মুনিয়া।

No comments

Theme images by fpm. Powered by Blogger.