* সাধের বাসর *
---------------------
-----------ক্যাটাগরী-
সাহিত্য।
-----------------তাহমিনা নাহার।
১৮-৩-২০১৭
--------------------
বাসর ঘর, বাসর ঘরের স্বপ্নের ছবি কে না আঁকে? কিশোর কিশোরী বয়স থেকেই সব
ছেলে মেয়েই বাসরের স্বপ্ন সাজায়। কারো
বাসর স্বপ্নের সাথে মিলে যায়, কারোটা স্বপ্নের চেয়ে বেশী সুন্দর হয়, কারো বাসর
হয়ে যায় তিক্ত। সবই নিয়তির বিধান।
কিন্তু এটা কেউ বলতে পারবেনা যে বাসরের স্বপ্ন কেউ দেখেনি। সে বাসর যদি ভালোবাসার কিংবা পছন্দের মানুষটির সাথে হয় তাহলেতো আনন্দের সীমাই নেই।
বিয়ের দিন আনন্দে বিয়ে করেও যদি কিছু অযাচিত কারণে বাসর হয়ে যায় সারাজীবনের নিমতিতা স্মৃতি তাহলে এই দুঃখ রাখার আর স্থান হয়না। তেমনি
আমাদের সুজন মিয়া আর মাধবীর বাসর হলো নিমতিতা স্মৃতি।
* সুজনের জন্মটা লন্ডনে, খুব বেশী বাংলা বলতে পারেনা। লেখাপড়া ইংলিশে করেছে। বাংলা যতটুকু ঘরে বাবা,মা বলেছে সেটুকু শিখেছে। লেখাপড়া শেষ করেছে, একটা জবও করছে। বাবা,মা ভাবছে এবার ছেলের বিয়ে দিতে হবে।
সেই উদ্দেশ্য তারা সবাই বাংলাদেশে গেলো। সুজন দেখতে ভালো, লন্ডনে জন্ম তারজন্য সেইরকমই একটি পাত্রী খোঁজা হচ্ছে। পাওয়াও গেলো। মাধবী নামের এক
শিক্ষিতা, সুন্দরী মেয়েকে সুজনের জন্য ঠিক করা হলো। সুজনের বেশ পছন্দ হলো
মাধবীকে। সুজনকে পছন্দ নয় এমন মেয়ে
খুব কমই আছে।
* বিদেশী বিয়েগুলোতে তাড়াহুড়ো থাকে।
দেরী শুধু পাত্রী খুঁজে পেতে। পাত্রী পেয়ে গেলে বিয়েটা খুব জলদির ভেতর হয়ে
যায়। সুজন আর মাধবীকে এক ঘন্টার সময় দেয়া হয়েছে মনের ভাব আদান প্রদান করতে, একঘন্টা পরে তারা জানালো,
তাদের কোন আপত্তি নেই। ছেলে পক্ষ আংটি পড়িয়ে বিয়ের ডেট করে গেলো।
তিনদিন পর বিয়ে। এই তিনদিন তারা
ফোনে কথাবার্তা বলে নিজেদের পছন্দটা
আরেকটু গাঢ় করে নিয়েছে। তাদেরও আজন্ম লালিত বাসর বাস্তবে রুপ নিতে
যাচ্ছে, যতদিন তারা বাঁচবে এই দিনটিকে
স্মরণে আনবে।
তো যাই হোক, বিয়েতো হলো। কিন্তু বাসর
হয়ে গেলো তিক্ততায় ভরা। সুজন মিয়ার পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া। বাইরের খাবার দাবার খেয়ে বড় হওয়া ছেলে মেয়েরা বাংলাদেশে গেলে দেশী খাবার খেয়ে
অসুস্থ্য হয়ে যায়। এদের শরীর দেশের খাওয়া আর আবহাওয়ায় ঠিক হতে মাস খানেকের মতো লেগে যায়। সুজনকে সে সময় টুকু দেয়া হয়নি। বাসর ঘরে বর কনেকে ঢুকিয়ে যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়েছে। এদিকে সুজন বাসরে ঢুকার পর
থেকেই সারারাত টয়লেট আর রুমই পড়ে
রয়েছে। রুমে আসার সাথে সাথেই আবার
টয়লেট। লন্ডনে বড় হওয়া ছেলের শ্বশুড় বাড়ীর টয়লেটটাও এতো পছন্দ হয়নি।
পছন্দ না হলেই বা কি করা! ঠেলার নাম
বাবাজি। আবার টয়লেট ভিজা থাকলে
চলবেনা, বেচারী মাধবী সারারাত টয়লেটই
মুছলো বাসররাতে। আবার কাউকে ডাকাও মানা, সুজন চায়না কেউ জানুক।
কমপক্ষে তিরিশবার টয়লেটে গিয়ে বেচারা কাহিল হয়ে গেছে। সকাল বেলা ফার্মেসী
খুলার পর তাকে ঔষধ আর স্যালাইন এনে
খাওয়ানো হয়। এই ছিলো আমাদের সুজন আর মাধবীর সাধের বাসর।
নতুন জামাই তারউপর আবার বিদেশী
জামাই, আবার লন্ডনে ফিরে আসবে তাড়াতাড়ি, সেজন্য আত্মীয় স্বজনরা জামাইকে দাওয়াত খাওয়ানোর প্রতিযোগিতায় যেন উঠে পড়ে লেগেছে।
অন্যদিকে জামাই ভয়ে আর মুখে কিছু
তুলছেই না। আবার বিয়ের একদিন পরই
ছিলো জামাইর ফুপু শ্বাশুড়ীর বাসায় দাওয়াত,দাওয়াত না জুলুম! কাহিল জামাই গিয়েই শুয়ে পড়েছে, আর সাথে সাথে টয়লেটের প্রয়োজন হলো, টয়লেটে যাওয়ার সময়টা পায়নি, বিছানাতেই-------
পরে নিজের হাতে বিছানার চাদরও ধুয়েছে। মাধবী অবশ্য ধুয়ে দিতে চেয়েছিলো, সুজন জোড় করে নিজেই
ধুয়েছে।
* বার বছর হয় তাদের বিয়ে হয়েছে,
বিবাহ বার্ষিকী ঘুরে এলেই তারা তাদের তিক্ত বাসরের স্মৃতি মনে করে, আর হাসে।
এটাও বলে, "ভালো হয়েছে, দিনটা হেসে কাটানো যায়।"
---------------------
-----------ক্যাটাগরী-
সাহিত্য।
-----------------তাহমিনা নাহার।
১৮-৩-২০১৭
--------------------
বাসর ঘর, বাসর ঘরের স্বপ্নের ছবি কে না আঁকে? কিশোর কিশোরী বয়স থেকেই সব
ছেলে মেয়েই বাসরের স্বপ্ন সাজায়। কারো
বাসর স্বপ্নের সাথে মিলে যায়, কারোটা স্বপ্নের চেয়ে বেশী সুন্দর হয়, কারো বাসর
হয়ে যায় তিক্ত। সবই নিয়তির বিধান।
কিন্তু এটা কেউ বলতে পারবেনা যে বাসরের স্বপ্ন কেউ দেখেনি। সে বাসর যদি ভালোবাসার কিংবা পছন্দের মানুষটির সাথে হয় তাহলেতো আনন্দের সীমাই নেই।
বিয়ের দিন আনন্দে বিয়ে করেও যদি কিছু অযাচিত কারণে বাসর হয়ে যায় সারাজীবনের নিমতিতা স্মৃতি তাহলে এই দুঃখ রাখার আর স্থান হয়না। তেমনি
আমাদের সুজন মিয়া আর মাধবীর বাসর হলো নিমতিতা স্মৃতি।
* সুজনের জন্মটা লন্ডনে, খুব বেশী বাংলা বলতে পারেনা। লেখাপড়া ইংলিশে করেছে। বাংলা যতটুকু ঘরে বাবা,মা বলেছে সেটুকু শিখেছে। লেখাপড়া শেষ করেছে, একটা জবও করছে। বাবা,মা ভাবছে এবার ছেলের বিয়ে দিতে হবে।
সেই উদ্দেশ্য তারা সবাই বাংলাদেশে গেলো। সুজন দেখতে ভালো, লন্ডনে জন্ম তারজন্য সেইরকমই একটি পাত্রী খোঁজা হচ্ছে। পাওয়াও গেলো। মাধবী নামের এক
শিক্ষিতা, সুন্দরী মেয়েকে সুজনের জন্য ঠিক করা হলো। সুজনের বেশ পছন্দ হলো
মাধবীকে। সুজনকে পছন্দ নয় এমন মেয়ে
খুব কমই আছে।
* বিদেশী বিয়েগুলোতে তাড়াহুড়ো থাকে।
দেরী শুধু পাত্রী খুঁজে পেতে। পাত্রী পেয়ে গেলে বিয়েটা খুব জলদির ভেতর হয়ে
যায়। সুজন আর মাধবীকে এক ঘন্টার সময় দেয়া হয়েছে মনের ভাব আদান প্রদান করতে, একঘন্টা পরে তারা জানালো,
তাদের কোন আপত্তি নেই। ছেলে পক্ষ আংটি পড়িয়ে বিয়ের ডেট করে গেলো।
তিনদিন পর বিয়ে। এই তিনদিন তারা
ফোনে কথাবার্তা বলে নিজেদের পছন্দটা
আরেকটু গাঢ় করে নিয়েছে। তাদেরও আজন্ম লালিত বাসর বাস্তবে রুপ নিতে
যাচ্ছে, যতদিন তারা বাঁচবে এই দিনটিকে
স্মরণে আনবে।
তো যাই হোক, বিয়েতো হলো। কিন্তু বাসর
হয়ে গেলো তিক্ততায় ভরা। সুজন মিয়ার পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া। বাইরের খাবার দাবার খেয়ে বড় হওয়া ছেলে মেয়েরা বাংলাদেশে গেলে দেশী খাবার খেয়ে
অসুস্থ্য হয়ে যায়। এদের শরীর দেশের খাওয়া আর আবহাওয়ায় ঠিক হতে মাস খানেকের মতো লেগে যায়। সুজনকে সে সময় টুকু দেয়া হয়নি। বাসর ঘরে বর কনেকে ঢুকিয়ে যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়েছে। এদিকে সুজন বাসরে ঢুকার পর
থেকেই সারারাত টয়লেট আর রুমই পড়ে
রয়েছে। রুমে আসার সাথে সাথেই আবার
টয়লেট। লন্ডনে বড় হওয়া ছেলের শ্বশুড় বাড়ীর টয়লেটটাও এতো পছন্দ হয়নি।
পছন্দ না হলেই বা কি করা! ঠেলার নাম
বাবাজি। আবার টয়লেট ভিজা থাকলে
চলবেনা, বেচারী মাধবী সারারাত টয়লেটই
মুছলো বাসররাতে। আবার কাউকে ডাকাও মানা, সুজন চায়না কেউ জানুক।
কমপক্ষে তিরিশবার টয়লেটে গিয়ে বেচারা কাহিল হয়ে গেছে। সকাল বেলা ফার্মেসী
খুলার পর তাকে ঔষধ আর স্যালাইন এনে
খাওয়ানো হয়। এই ছিলো আমাদের সুজন আর মাধবীর সাধের বাসর।
নতুন জামাই তারউপর আবার বিদেশী
জামাই, আবার লন্ডনে ফিরে আসবে তাড়াতাড়ি, সেজন্য আত্মীয় স্বজনরা জামাইকে দাওয়াত খাওয়ানোর প্রতিযোগিতায় যেন উঠে পড়ে লেগেছে।
অন্যদিকে জামাই ভয়ে আর মুখে কিছু
তুলছেই না। আবার বিয়ের একদিন পরই
ছিলো জামাইর ফুপু শ্বাশুড়ীর বাসায় দাওয়াত,দাওয়াত না জুলুম! কাহিল জামাই গিয়েই শুয়ে পড়েছে, আর সাথে সাথে টয়লেটের প্রয়োজন হলো, টয়লেটে যাওয়ার সময়টা পায়নি, বিছানাতেই-------
পরে নিজের হাতে বিছানার চাদরও ধুয়েছে। মাধবী অবশ্য ধুয়ে দিতে চেয়েছিলো, সুজন জোড় করে নিজেই
ধুয়েছে।
* বার বছর হয় তাদের বিয়ে হয়েছে,
বিবাহ বার্ষিকী ঘুরে এলেই তারা তাদের তিক্ত বাসরের স্মৃতি মনে করে, আর হাসে।
এটাও বলে, "ভালো হয়েছে, দিনটা হেসে কাটানো যায়।"
No comments