Header Ads

মতি মুন্সি

মতি মুন্সি। বিরাট কামেল লোক। তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে মানুষের যাবতীয় সকল মুশকিল আসান করেন। জ্বীন-পরীর আছর, বদ বাতাস, খারাপ দৃষ্টি, কালা জ্বর, তাবিজ-কবজ, স্বপ্নদোষ, সংসারে অভাব, স্বামী-স্ত্রীতে অমিল, বেকারত্ব, বউ-গার্লফ্রেন্ড বসকরাসহ আরো ৩৩ পদের সমস্যার সমধান তার নখদর্পনে। সব সমস্যার ঔষধের বোতল একটাই। ১০ বার ঝাকিয়ে সকালে ২০ ফোটা, রাতে ২০ ফোটা খালি পেটে। ফোটায় কমবেশী হয়ে রোগ সারা না গেলে মতি মুন্সি দায়ী না। :p

রাজ্জাকের চা দোকানের সামনে বসে সিগারেট টানছি। সামনে মতি মুন্সির ৩৩ পদের রোগ সারানোর বিশাল বিলবোর্ড। ভাবছি মতি মুন্সির মন্ত্র দিয়ে এই পেটে ভাত নেই সাহিত্যিক জীবনের কি হাল করা যায়? এমন সময় অনুরিমার ফোন.....
প্রথম কলেই মেয়েদের ফোন ধরতে নেই। ধরলে খেলা জমেনা। ধরতে হয়ে ২,৩ বার কল দেওয়ার পর। সুন্দরী মেয়েরা তাকালেই মোমের মত গলে-ঢলে পড়া ছেলেদের মেয়েরা পছন্দ করেনা। সুন্দরী মেয়েরা অহংকারী থাকে বলে পুরুষের অতি নিষ্কন্টক, নির্লোভ মনোযোগ বুঝতে পারেনা। সুন্দরী ভাবে সব পুরুষ ই বাজে ধান্দা নিয়ে ঘুরে। পুরুষদের ভালভাবে বুঝতেই অনেক সুন্দরীর জীবন চলে যায়, বুঝা হয়না। তাই তাদের কে বার বার বাজাতে হয়। আমি বাজানোর চেষ্টা করলাম।

গুনে গুনে ৩ বার কল করার পর আমি অনুরিমার ফোন রিসিভ করলাম।

-হ্যালো...
-এই তুমি ফোন ধরোনি কেন এতক্ষণ? কি করছিলে? কার সাথে ছিলে?
রাজ্জাকের সাথে।
-রাজ্জাক কে?
চায়ের দোকানদার।
-তুমি কি চা বানানোর কারিগরী শিখতেছো নাকি? চা দোকান দিবা?
শিখছিনা, দেখছি। জগতের অন্যতম সুন্দর ও শৈল্পিক দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে চা বানানোর দৃশ্য। কিন্তু এই দৃশ্য কেউ মনোযোগ দিয়ে দেখেনা। তাই আমি দেখছি। তুমিও মনোযোগ দিয়ে দেখো, দেখবে চা বানানোর দৃশ্যও তোমার কাছে চমৎকার লাগছে।
- বাজে বকো না। বসে বসে আর কি করছিলে সত্য করে বল?
কিছুনা। বিড়ি খাচ্ছিলাম।
-আবার বিড়ি। তোমার না বিড়ি খাওয়া নিষেধ। খাচ্ছো কেন, হুম?
খাইনি তো। গুনে গুনে ২৪ ঘন্টা ৩২ মিনিট বিড়ি না খেয়ে ছিলাম। আর পারছিলাম না। দম বন্ধ হয়ে আসছিল, তাই একটা ধরিয়েছি :)
- বিড়ি ছাড়া খাওয়ার আর ভাল কিছু পাওনা তুমি?
বিড়ির মত ভাল কিছু হয়? বাজি ধরে বলতে পারি বিড়ির উপর আর কিছু নেই। চিকেন বিরানী বা বিফ তেয়ারীর এর কাছে ফেইল। অনলি বিড়ি ইজ রিয়েল। এই গোলকধাঁধাঁময় জীবনে বিড়ি না খেয়ে বেঁচে থাকা অক্সিজেনহীন বাঁচার মত, বুঝচ্ছো?
-তুমি আর কক্ষনো বিড়ি খাবে না। যদি খাও তবে ঐ ঠোট দিয়ে আমায় আর চুমু খেতে পারবেনা। আগুন কে খেয়ো। এরপরও যদি খাও তাহলে তোমার সাথে ব্রেকাপ। :(
অনুরিমা ফোন কেটে দিল।
ভাবনায় পরে গেলাম। ভাবনার বিষয় 'গার্লফ্রেন্ড বড় না বিড়ি বড়'?
মাথায় ঝট লেগে গেছে। এত শক্ত ঝট বিড়ি ছাড়া ছুটার কথা না। কিন্তু বিড়ি খাওয়া যাবেনা। প্রেমিকার নিষেধ। প্রেমিকাদের সব কথা শুনতে হয়না। সব কথা শোনা প্রেমিকরা বেরসিক হয়। প্রেমিকারা চায় তাদের প্রেমিকরা একটু আধটু অবাধ্য হোক। একটু বেখেয়ালী, মনভুলোটাইপ হোক। তাহলে রাগে, আদুরে আদুরে কড়া শাসনে টাইট রাখার সুযোগ পাওয়া যাবে।

রাজ্জাক কে চা দিতে বলে আমি মতি মুন্সির বহুবিদ গুণ বিষয়ে ভাবছি। এত বড় বুজুর্গ লোক বাংলাদেশে থাকতে আমাদের এই দু:র্গতি কেন? দলে দলে সবাই মতি মুন্সির কাছে এসে ইচ্ছাপূরণ করে কামিয়াব হয়ে গেলেই পারে।

আমার মাথা ঝিম ধরে গেছে। জটিল বিষয় বেশীক্ষণ চিন্তা করতে নেই। এসব চিন্তা করবে গবেষকরা। তাদের মাথামোটা এবং তাদের কাজই চিন্তা করা। তারা খায় আর চিন্তা করে। এই দায়িত্ব তাদের দিয়ে আমি মতি মুন্সির বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।

মতি মুন্সির বাড়ি দেখে আমি টাস্কি খাইলাম। মন্ত্রবাজ বাবার নিজের লোটাটাও নেই অবস্থা। এক চিলতে জমির উপর টিনশেড দুচালা ঘর। বাশের বেড়া, যায়গায় যায়গায় ভাঙ্গা। বাবার বাড়িতে ভাগ্য কামনাকারী মানুষের ঢল। বাবা একে একে লোক দেখছেন আর পানিপড়ার শিশি দিয়ে বিদায় করছেন। মানুষ খুশি হয়ে বাবাকে এনাম দিয়ে যাচ্ছে।
আমি বাবার খাস কামরায় গিয়ে বসলাম।
-বৎস তোমার নাম কি?
জি বাবা, নাম মোতালেব।
-কি সমস্যা তোমার?
বাবা, আমি একজনকে ভালোবাসি। কিন্তু......
-বুঝতে পারছি। এই পানিপড়া নিয়ে যা কাজ হয়ে যাবে।
বাবা আমার সমস্যা তো অন্য যায়গায়।
-এটাতেই সব কাজ হয়ে যাবে। ছুউউউউউ... যা।

বিড়ি আর গার্লফ্রেন্ড দুই একসাথে রক্ষা বাবার পানিতে হবে কিনা ভাবছি। বাবার পানির ক্ষমতায় বিড়ি কাচ্চি বিরিয়ানী হয়ে দেখা যাবে প্রেমিকার কাছে। আমি বিড়িতে আগুন জ্বালিয়ে সুখটান দিচ্ছি প্রেমিকা ভাবছে বিরিয়ানী খাচ্ছি, ভাবতেই শিহরনে গায়ের লোম কাটা দিয়ে যাচ্ছে। লোম কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাত ফসকে বাবার অলৌকিক পানিপড়া শিশির বোতল পড়ে পানিয়ে বালিয়ে একাকার। মুহুর্তেই হতাশ হয়ে গেলাম। এই দৃশ্য দেখে হৃদয় ভেঙে আমার খান খান। এ যেন সাধারণ কোন পানি নয়, শিশাবন্ধি আমার প্রেম পড়ে গেল। খুব অসয়হায় বোধ হতে লাগলো। অনুরিমাকে হারাতে হবে তাহলে?
না, এ হতেই পারে না। এ বড়ই নিষ্ঠুর। এর থেকেও বড় নিষ্ঠুরতা যখন প্রেমিকারা প্রেমিকের বিড়ির খাওয়ার মর্ম বুঝে না। দীর্ঘদিনের তপস্যালব্ধ অভ্যেস প্রেমের জন্য জ্বলাঞ্জলি দিব? আর কখনোই বিড়ি খেতে পারবোনা ভাবতেই হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। যেন আমি বাংলা ছবির ওমর সানির ভুমিকায়। বউ বাঁচাবো না পরিবার টাইপ পরীক্ষার মুখোমুখি। যেকোন একটাকে বেঁচে নিতেই হবে।

চট করে সিদ্ধান্ত নিলাম, বিড়ি ই ছাড়বো। শাহজান প্রেমের জন্য তাজমহল বানাতে পারলে আমি তুচ্ছ বিড়ি ছাড়তে পারবো না? কিন্তু কিভাবে? প্রেম এখানেও তো কম নয়। বিড়ি ছাড়ার অতিরিক্ত চিন্তা আমার মাথা ধরিয়ে দিল। কিভাবে ছাড়া যায় উপায় মিলছে না। দেখি একটা বিড়ি জ্বালিয়ে চিন্তা করা যাক.... :) :)

© আব্দুল্লাহ আল মামুন

No comments

Theme images by fpm. Powered by Blogger.