গল্প : নিয়তির বিড়ম্বনা
.
(একজন দুখিনী আপুর জীবনের গল্প)
.
যদিও আমি লেখক নই তবুও মাঝে মাঝে গল্প লেখার চেষ্টা করি। লেখাগুলো ভালো করে সাজাতে পারি না। তবে এলোমেলো লেখাগুলো পাঠকের মন কিভাবে জয় করে বুঝতেই পারি না। কিছু পাঠকদের সাথে নিয়মিত চ্যাটে কথা হয়। অনেকেই তাদের জীবনের গল্প শোনায়। বেশিরভাগ গল্প অনেক কষ্টের হয়। একদিন নিলিমা নামের এক মেয়ে মেসেজ দেয়-
- কেমন আছেন ?
- ভালো। আপনি ?
- মোটামুটি ভালো। আপনার লেখাগুলো খুব ভালো লাগে। পড়ে মনে হয় যেন বাস্তব। সবগুলো কি বাস্তব ?
- লেখকরা কল্পবিলাসী। তাই গল্পগুলো বেশিরভাগ কাল্পনিক হলেও বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
- হুম। লেখালেখি ছাড়া আর কি করেন ?
- দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ি এবং টিউশনি করি। আপনি ?
- এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি তবে বিবাহিতা ।
- কি বলেন আপু পড়ালেখা শেষ না করেই বিয়ে ?
- আমার বর্তমান বয়স ২৭ আর ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে।
- মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে ? কেন ?
- বুঝবেন না। শারীরিক সমস্যার কারনে ডাক্তারের পরামর্শে বাবা বিয়ে দিতে বাধ্য ছিলেন।
- ও। তাহলে প্রোফাইলের ছবিটা নিশ্চই আপনার ছেলের ?
- সবার মতো আপনিও আমার সাথে মজা করলেন।
- কি বলছেন কিছুই বুঝতে পারছি না ? কি মজা করলাম ?
- ছবিটা আমার ফুফাতো ভাইয়ের। আমার কোনোদিন বাচ্চা হবেনা।
- দুঃখিত আপু। আমি বুঝতে পারিনি।
- না কিছু না।
- আপনার সম্পর্কে খুবই কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। কেন মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হবে ? আর কেন জীবনে মা হতে পারবেন না ?
- আচ্ছা সবকিছু বলছি।
তারপর আপু তার জীবনের গল্প শোনালেন শুনে চোখের জল আটকাতে পারলাম না। আসলে জীবনটাই এরকম।
ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রীর প্রতি এমনিতেই সবার আকর্ষণ থাকে। বিশেষ করে ছেলেদের। তার উপর যদি সে অপরূপ সুন্দরী আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুয়া চাশমিশ হয় ছেলেদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু নিশ্চই থাকবে। এই মেয়েটাই নিলীমা। অনেকেই আপুকে প্রপোজ করতো। কিন্তু আপু কারো ডাকে সাড়া দিতেন না। কারণ আপু বিশ্বাস করতেন যে ভালবাসা চেহারা দেখে আসে না। ভালবাসা আত্মিক বিষয়। কিভাবে কখন আসে কিছুই বুঝা যায়না। তবে অনুভব করা যায়।
ইমন নামের এক ছেলে ছিলো আপুর ছোটবেলার বন্ধু। বন্ধু বললে কম হবে বন্ধু থেকে বেশী কিছু। দুজনে কেউ কাউকে ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করতে পারতেন না । সেই প্রাইমারি স্কুল থেকে তাদের বন্ধুত্ব। যত দিন যেত তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক তত গাঢ় হতো । তাদের বাসাও পাশাপাশি। তাই দিনের অধিকাংশ সময় দুজন দুজনের কাছে থাকার সুযোগ পেতেন ।
ভালবাসা এক উড়ন্ত পাখি। কখন কোথায় বাসা বাঁধবে তার ঠিক নেই। তাদের জীবনেও পাখিটি বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু দুজনের কেউ কাউকে বলতেই পারেন নি। দুজনেই ভাবতেন ভালোবাসার কথা বললে যদি বন্ধুত্ব নষ্ট হয় ?
এইভাবে পার হয়ে যায় কয়েক বছর। যখন দুজনে নবম শ্রেণিতে উঠলেন তখন হঠাৎ আপু অন্য রকম হয়ে যান। কারো সাথে ভালো করে কথা বলতেন না। সবসময় চুপচাপ থাকতেন। সারাক্ষণ হাসিতে মেতে থাকা মেয়েটি হঠাৎ কিভাবে এতো বিষন্ন হয়ে গেল ? আপুর মুখের দিকে তাকালে মনে হতো যেন মনের মধ্যে অনেক বড় ঝড় হচ্ছে যা সব কিছু ধ্বংস করে দিয়ে যাচ্ছে।
কিছু দিন ধরে ইমনের সাথে দেখা হচ্ছিলো না। ছেলেটা খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন । প্রিয় মানুষের হঠাৎ এতো পরিবর্তন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। যে মেয়ে থাকে ছাড়া এক মূহুর্তও থাকতে পারতো না সে মেয়ে কিভাবে এতো পরিবর্তিত হতে পারে ? যেভাবেই হোক মেয়েটাকে ভালোবাসার কথা বলতেই হবে।
পরের দিন ইমন সোজা আপুর বাসায় চলে যায়। গিয়েই দরজার সামনে আপুকে দেখতে পেয়েছিলেন। আপু খুবই শুকিয়ে গিয়েছিলেন । আগের সেই মেয়ে আর এই মেয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। আপু দেখে আনন্দে হাসছিলেন। তবে হাসিটা একটু অন্য রকম। আনন্দের মাঝেও লুকিয়ে ছিলো অনেক কষ্ট। যা সবাই বুঝতে পারে না। তখন আপুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন-
- খুব অসুস্থ মনে হচ্ছে ?
- না। কোথায় অসুস্থ ?
- স্কুল কেন যাওনা ? আমার সাথে যোগাযোগ কেন বন্ধ ?
- আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
- কি ? তোমার বয়স তো মাত্র ১৫ ?
- তবুও। সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ে।
- কেন এতো অল্প বয়সে বিয়ে দিতে হবে ?
- বুঝবেনা। আমার জীবন বাঁচাতে ডাক্তারের পরামর্শে বাবা বিয়ে দিচ্ছে।
- কি এমন সমস্যা ?
- বললাম তো বুঝবেনা।
- ভালো। আশা করি অনেক সুখে থাকবে।
বলেই ছেলেটা ফিরে গিয়েছিল । চোখ দিয়ে অনবরত জল ঝরছিলো। মনে সৃষ্টি হয়েছে প্রলয়ংকরী ঝড় যা সহজে থামবে নাম। আর আপু, তিনিও কাঁদছিলেন। আপুর জীবনে আরও বড় ঝড় সৃষ্টি হয়েছিলো। যা খুব কম মেয়ের জীবনে আসে এবং সহ্য করা খুবই কষ্টকর।
আজ ১৫ বছরের সেই আপু ২৭ বছরের। ১২ বছরের দাম্পত্য জীবনে মুহূর্তের জন্যও সুখ খুজে পাননি। আর কোনোদিন পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
মা হওয়ার স্বাদ সব মেয়েই চায়। যে কোনোদিন হতে পারে না সে বুঝে এটা কতটুকু কষ্টের। প্রতিনিয়ত নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। অনেকে যুদ্ধে হেরে আত্মহত্যার পথ নেয়। কিন্তু আপু দীর্ঘ ১২ বছর যুদ্ধ করেছেন। অনেক চিকিৎসা করার পরও কোনো ফল আসেনি । স্বপ্ন ছিলো জীবনে বড় কিছু হবে। বড় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা বড়ই নিষ্ঠুর। সবাইকে সে সুযোগ দেন না।
১৫ বছর সময়েই তার ঋতুস্রাবে সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা হলে মেয়েরা কোনোদিন মা হওয়ার সুখ অনুভব করতে পারে না। তবে ডাক্তার বলেছিলো তখন বিয়ে দিলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। তাই মেধাবী আপুর পড়ালেখা বন্ধ করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।
তবে আপু অন্যদিক দিয়ে খুবই ভাগ্যবান। খুব ভালো স্বামী পেয়েছে। যার অনুপ্রেরণায় এখনও বেঁচে আছেন। দু'বার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বামীর জন্য পারেননি। তিনি আর কোনো বিয়ে করেননি যেখানে অন্য কেউ হলে নিজের সন্তান পাওয়ার জন্য নিশ্চিত বিয়ে করতেন। কিন্তু আপুর কষ্টের কথা চিন্তা করে তিনি বিয়ে করেননি আর ভবিষ্যতেও করবেন না।
কিন্তু পরিবার থেকে আপুকে তালাক দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। যে মেয়ে কোনোদিন মা হতে পারবে না তাকে রেখে কি লাভ ? শাশুড়ির এমন কথায় আপু ১২ বছর ধরে নিয়মিত চোখের জল ফেলছেন।
যদি আপুর স্বামী তাকে অনুপ্রেরণা না দিতো হয়তো অনেক আগেই একটা ফুল পৃথিবীনামক বৃক্ষ থেকে ঝরে যেতো। আপুর কষ্ট বুঝে খেয়াল অন্যদিকে নেওয়ার জন্য তিনি আপুকে আবার পড়াচ্ছেন। এখন বাচ্চা দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে শাশুড়ি তা কোনো মতেই মেনে নিতে চান না। আপুর উপর করেন অকথ্য নির্যাতন। যা আপু মুখ বুঝে সহ্য করে আসছেন ১২ বছর ধরে।
একজন মানুষ ঠিক কতটুকু কষ্ট সহ্য করতে পারে ? হয়তো এক সময় জীবনের প্রতি তিক্ততা চরম পর্যায়ে পৌছাবে। তখন হয়তো আত্মহত্যা মহাপাপ ভয়টাও থাকবে না।।
.
লেখা : সজীব সূত্রধর (মৃতকল্প)
.
.
লেখকের কিছু কথা : গল্পের পুরোটা না হলেও মূল বিষয়টা একজন আপুর জীবন থেকে নেওয়া। লিখার মাঝে ভুল থাকতে পারে, আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপুকে কিছু বলতে চাইলে কমেন্ট এ বলতে পারেন। ধন্যবাদ
.
(একজন দুখিনী আপুর জীবনের গল্প)
.
যদিও আমি লেখক নই তবুও মাঝে মাঝে গল্প লেখার চেষ্টা করি। লেখাগুলো ভালো করে সাজাতে পারি না। তবে এলোমেলো লেখাগুলো পাঠকের মন কিভাবে জয় করে বুঝতেই পারি না। কিছু পাঠকদের সাথে নিয়মিত চ্যাটে কথা হয়। অনেকেই তাদের জীবনের গল্প শোনায়। বেশিরভাগ গল্প অনেক কষ্টের হয়। একদিন নিলিমা নামের এক মেয়ে মেসেজ দেয়-
- কেমন আছেন ?
- ভালো। আপনি ?
- মোটামুটি ভালো। আপনার লেখাগুলো খুব ভালো লাগে। পড়ে মনে হয় যেন বাস্তব। সবগুলো কি বাস্তব ?
- লেখকরা কল্পবিলাসী। তাই গল্পগুলো বেশিরভাগ কাল্পনিক হলেও বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
- হুম। লেখালেখি ছাড়া আর কি করেন ?
- দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ি এবং টিউশনি করি। আপনি ?
- এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি তবে বিবাহিতা ।
- কি বলেন আপু পড়ালেখা শেষ না করেই বিয়ে ?
- আমার বর্তমান বয়স ২৭ আর ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে।
- মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে ? কেন ?
- বুঝবেন না। শারীরিক সমস্যার কারনে ডাক্তারের পরামর্শে বাবা বিয়ে দিতে বাধ্য ছিলেন।
- ও। তাহলে প্রোফাইলের ছবিটা নিশ্চই আপনার ছেলের ?
- সবার মতো আপনিও আমার সাথে মজা করলেন।
- কি বলছেন কিছুই বুঝতে পারছি না ? কি মজা করলাম ?
- ছবিটা আমার ফুফাতো ভাইয়ের। আমার কোনোদিন বাচ্চা হবেনা।
- দুঃখিত আপু। আমি বুঝতে পারিনি।
- না কিছু না।
- আপনার সম্পর্কে খুবই কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। কেন মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হবে ? আর কেন জীবনে মা হতে পারবেন না ?
- আচ্ছা সবকিছু বলছি।
তারপর আপু তার জীবনের গল্প শোনালেন শুনে চোখের জল আটকাতে পারলাম না। আসলে জীবনটাই এরকম।
ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রীর প্রতি এমনিতেই সবার আকর্ষণ থাকে। বিশেষ করে ছেলেদের। তার উপর যদি সে অপরূপ সুন্দরী আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুয়া চাশমিশ হয় ছেলেদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু নিশ্চই থাকবে। এই মেয়েটাই নিলীমা। অনেকেই আপুকে প্রপোজ করতো। কিন্তু আপু কারো ডাকে সাড়া দিতেন না। কারণ আপু বিশ্বাস করতেন যে ভালবাসা চেহারা দেখে আসে না। ভালবাসা আত্মিক বিষয়। কিভাবে কখন আসে কিছুই বুঝা যায়না। তবে অনুভব করা যায়।
ইমন নামের এক ছেলে ছিলো আপুর ছোটবেলার বন্ধু। বন্ধু বললে কম হবে বন্ধু থেকে বেশী কিছু। দুজনে কেউ কাউকে ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করতে পারতেন না । সেই প্রাইমারি স্কুল থেকে তাদের বন্ধুত্ব। যত দিন যেত তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক তত গাঢ় হতো । তাদের বাসাও পাশাপাশি। তাই দিনের অধিকাংশ সময় দুজন দুজনের কাছে থাকার সুযোগ পেতেন ।
ভালবাসা এক উড়ন্ত পাখি। কখন কোথায় বাসা বাঁধবে তার ঠিক নেই। তাদের জীবনেও পাখিটি বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু দুজনের কেউ কাউকে বলতেই পারেন নি। দুজনেই ভাবতেন ভালোবাসার কথা বললে যদি বন্ধুত্ব নষ্ট হয় ?
এইভাবে পার হয়ে যায় কয়েক বছর। যখন দুজনে নবম শ্রেণিতে উঠলেন তখন হঠাৎ আপু অন্য রকম হয়ে যান। কারো সাথে ভালো করে কথা বলতেন না। সবসময় চুপচাপ থাকতেন। সারাক্ষণ হাসিতে মেতে থাকা মেয়েটি হঠাৎ কিভাবে এতো বিষন্ন হয়ে গেল ? আপুর মুখের দিকে তাকালে মনে হতো যেন মনের মধ্যে অনেক বড় ঝড় হচ্ছে যা সব কিছু ধ্বংস করে দিয়ে যাচ্ছে।
কিছু দিন ধরে ইমনের সাথে দেখা হচ্ছিলো না। ছেলেটা খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন । প্রিয় মানুষের হঠাৎ এতো পরিবর্তন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। যে মেয়ে থাকে ছাড়া এক মূহুর্তও থাকতে পারতো না সে মেয়ে কিভাবে এতো পরিবর্তিত হতে পারে ? যেভাবেই হোক মেয়েটাকে ভালোবাসার কথা বলতেই হবে।
পরের দিন ইমন সোজা আপুর বাসায় চলে যায়। গিয়েই দরজার সামনে আপুকে দেখতে পেয়েছিলেন। আপু খুবই শুকিয়ে গিয়েছিলেন । আগের সেই মেয়ে আর এই মেয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। আপু দেখে আনন্দে হাসছিলেন। তবে হাসিটা একটু অন্য রকম। আনন্দের মাঝেও লুকিয়ে ছিলো অনেক কষ্ট। যা সবাই বুঝতে পারে না। তখন আপুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন-
- খুব অসুস্থ মনে হচ্ছে ?
- না। কোথায় অসুস্থ ?
- স্কুল কেন যাওনা ? আমার সাথে যোগাযোগ কেন বন্ধ ?
- আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
- কি ? তোমার বয়স তো মাত্র ১৫ ?
- তবুও। সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ে।
- কেন এতো অল্প বয়সে বিয়ে দিতে হবে ?
- বুঝবেনা। আমার জীবন বাঁচাতে ডাক্তারের পরামর্শে বাবা বিয়ে দিচ্ছে।
- কি এমন সমস্যা ?
- বললাম তো বুঝবেনা।
- ভালো। আশা করি অনেক সুখে থাকবে।
বলেই ছেলেটা ফিরে গিয়েছিল । চোখ দিয়ে অনবরত জল ঝরছিলো। মনে সৃষ্টি হয়েছে প্রলয়ংকরী ঝড় যা সহজে থামবে নাম। আর আপু, তিনিও কাঁদছিলেন। আপুর জীবনে আরও বড় ঝড় সৃষ্টি হয়েছিলো। যা খুব কম মেয়ের জীবনে আসে এবং সহ্য করা খুবই কষ্টকর।
আজ ১৫ বছরের সেই আপু ২৭ বছরের। ১২ বছরের দাম্পত্য জীবনে মুহূর্তের জন্যও সুখ খুজে পাননি। আর কোনোদিন পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
মা হওয়ার স্বাদ সব মেয়েই চায়। যে কোনোদিন হতে পারে না সে বুঝে এটা কতটুকু কষ্টের। প্রতিনিয়ত নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। অনেকে যুদ্ধে হেরে আত্মহত্যার পথ নেয়। কিন্তু আপু দীর্ঘ ১২ বছর যুদ্ধ করেছেন। অনেক চিকিৎসা করার পরও কোনো ফল আসেনি । স্বপ্ন ছিলো জীবনে বড় কিছু হবে। বড় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা বড়ই নিষ্ঠুর। সবাইকে সে সুযোগ দেন না।
১৫ বছর সময়েই তার ঋতুস্রাবে সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা হলে মেয়েরা কোনোদিন মা হওয়ার সুখ অনুভব করতে পারে না। তবে ডাক্তার বলেছিলো তখন বিয়ে দিলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। তাই মেধাবী আপুর পড়ালেখা বন্ধ করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।
তবে আপু অন্যদিক দিয়ে খুবই ভাগ্যবান। খুব ভালো স্বামী পেয়েছে। যার অনুপ্রেরণায় এখনও বেঁচে আছেন। দু'বার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বামীর জন্য পারেননি। তিনি আর কোনো বিয়ে করেননি যেখানে অন্য কেউ হলে নিজের সন্তান পাওয়ার জন্য নিশ্চিত বিয়ে করতেন। কিন্তু আপুর কষ্টের কথা চিন্তা করে তিনি বিয়ে করেননি আর ভবিষ্যতেও করবেন না।
কিন্তু পরিবার থেকে আপুকে তালাক দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। যে মেয়ে কোনোদিন মা হতে পারবে না তাকে রেখে কি লাভ ? শাশুড়ির এমন কথায় আপু ১২ বছর ধরে নিয়মিত চোখের জল ফেলছেন।
যদি আপুর স্বামী তাকে অনুপ্রেরণা না দিতো হয়তো অনেক আগেই একটা ফুল পৃথিবীনামক বৃক্ষ থেকে ঝরে যেতো। আপুর কষ্ট বুঝে খেয়াল অন্যদিকে নেওয়ার জন্য তিনি আপুকে আবার পড়াচ্ছেন। এখন বাচ্চা দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে শাশুড়ি তা কোনো মতেই মেনে নিতে চান না। আপুর উপর করেন অকথ্য নির্যাতন। যা আপু মুখ বুঝে সহ্য করে আসছেন ১২ বছর ধরে।
একজন মানুষ ঠিক কতটুকু কষ্ট সহ্য করতে পারে ? হয়তো এক সময় জীবনের প্রতি তিক্ততা চরম পর্যায়ে পৌছাবে। তখন হয়তো আত্মহত্যা মহাপাপ ভয়টাও থাকবে না।।
.
লেখা : সজীব সূত্রধর (মৃতকল্প)
.
.
লেখকের কিছু কথা : গল্পের পুরোটা না হলেও মূল বিষয়টা একজন আপুর জীবন থেকে নেওয়া। লিখার মাঝে ভুল থাকতে পারে, আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আপুকে কিছু বলতে চাইলে কমেন্ট এ বলতে পারেন। ধন্যবাদ
No comments