"অনন্ত ভালবাসার উপ্যাখ্যান"
Writer-Sazia Afrin Sapna
আমি মরে গেছি দু' বছর হলো। ইচ্ছে করে মরিনী বরং বাধ্য হয়েই মরেছি। Poison খেয়ে ছিলাম। Poison খাওয়ার পর আমার বুক আর পেটের ভেতরে তীব্র জ্বলছিল। তবুও আমি দাঁতে দাঁত চেপে সয়ে যাচ্ছিলাম। সেই মুহূর্তে বিচ্ছেদের যন্ত্রণার কাছে এই বিষের জ্বালাটাকে তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। মনে মনে আমি বেশ খুশি ছিলাম এই ভেবে যে, এবার আমি তৌসিফ কে ভুলে যেতে পারবো। ওকে দেখতে আমার আর ইচ্ছে করবে না। ওর ignore সহ্য করে আমার আর কাঁদতে হবে না। এই সব যা-তা ভেবেই আমি চুপচাপ রুমে শুয়ে আছি। বিষের তীব্র জ্বালা চরমে পৌছে গেলো, আমার সহনীয় ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে শুরু করলো। আমি ঘন্টা খানেক বিছানায় ছটফট করতে করতে তারপর মেঝেতে পড়ে গেলাম। তারপর কি লেগে খাটের পাশে রাখা ল্যাম্পটা মেঝেতে পড়ে গেলো ঠিক মনে নেই। ল্যাম্পটা মেঝেতে পড়ে ভেঙে গেছে। আমার ছটফট করা শরীরে ল্যাম্পের কাঁচ ঢুকে গেছে। বুকের ভেতরটা এতটাই জ্বলছিল যে কাঁচ ঢুকে যাবার ব্যাথা অনুভব করতে পারছিলাম না। এমন কি কাঁচ গুলো শরীরের কোন অংশে ঢুকছে সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। সম্ভবত ল্যাম্প পড়ে যাবার শব্দে আম্মু আমার রুমে চলে এলো। আমাকে এই বিভৎস রূপে দেখে আম্মু চিৎকার করে উঠলো। ততোক্ষণে বাসার সবাই জেগে গেছে।
এম্বুলেন্স এলো, আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। মুখের ভেতরে নল ঢুকিয়ে আমার পেট থেকে বিষ বের করা হলো। তারপর শরীর থেকে কাঁচের টুকরা গুলোও বের করা হলো। কিন্তু রক্তের সাথে মিশে যাওয়া বিষ গুলো থেকেই গেলো। আমাকে আই সি ইউ তে দু দিন রাখা হলো। তারপর হঠাৎ মাঝ রাতে দেখলাম আমি সুস্থ হয়ে গেছি। আমি উঠে বসলাম এবং হাটতেও পারছি। কিন্তু শরীরটা অস্বাভাবিক পাতলা অনুভব হচ্ছে। আমি বাহিরে বেরিয়ে দেখলাম বাবা মা সবাই চেয়ারে বসে ঘুমোচ্ছে। কিছুক্ষণ পর এক জন ডাক্তার রুমে ঢুকলেন তারপর বেরিয়ে এসে বাবা মাকে জাগিয়ে বললেন-"she is no more"
বাবা মা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। আমি ওদের জিজ্ঞেস করছি যে তারা কেনো কাঁদছে কিন্তু কেউ যেনো আমাকে দেখতেই পাচ্ছ না আর আমার কথাও শুনতে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর ঐ রুম থেকে দু জন ওয়ার্ডবয় কাপড়ে ঢাকা কার যেনো বডি বের করে আনলো। মনে হলো কেউ মারা গেছে। আম্মু এগিয়ে গিয়ে ঐ বডির মুখ থেকে কাপড় সরাতেই আমি চমকে উঠলাম। ঐ মৃত মানুষটা হুবহু আমার মতই দেখতে। কিন্তু আমি তো এখানে তাহলে ওটা কে?
আমি বুঝতে পারলাম যে আমি আর বেঁচে নেই। আমি মরে গেছি। এই কথাটা মেনে নিতে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
আমার শরীরটাকে বাসায় আনা হলো। আমি সাথে বাসায় এলাম। অনেক আত্মীয় পাড়া প্রতিবেশী আমাকে দেখতে এসেছে। আত্মীয়রা সবাই আমার দেহটাকে ঘিরে ধরে কাঁদছে। এটা দেখে আমারও খুব কান্না পাচ্ছিল। আমি ওদের সামনে গিয়ে শান্তনা দিতে থাকলাম কিন্তু কেউ আমাকে দেখতে পেলো না। অনেকেই আবার আমাকে নিয়ে অনেক খারাপ মন্তব্যও করছে সে গুলো শুনে আমার খুব রাগ হলো কিন্তু কিছু করার নেই।
বাবার অনেক অনুরোধে আমার শরীরটাকে পোস্টমর্ট্যাম করানো হলো না বলে একটু স্বস্তি অনুভব করলাম। আমার শরীরটাকে ধুইয়ে কাফন পরিয়ে রেডী করা হলো। আম্মু আর আপা খাটিয়া আঁকড়ে ধরে কাঁদছে। কয়েক জন মহিলা তাদের টেনে ধরে রেখেছে। আমি আম্মুকে কাঁদতে বারণ করছি কিন্তু আম্মু আমার কথা শুনতেই পাচ্ছে না। হঠাৎ আম্মু অজ্ঞান হয়ে গেলো।
আমার শরীরটাকে একটা বদ্ধ কুটিরে রেখে আসা হলো। ওখানে দরজা জানালা কিচ্ছু নেই, আছে শুধু ভয়ানক অন্ধকার।
আমি ঐ অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এলাম, আমার নিথর দেহ ওখানেই পড়ে আছে। আমি বুঝে উঠতে পারছি না যে আমি এখন কোথায় যাবো। আমি বাসায় গেলাম, ওখানে গিয়ে দেখলাম আমার আম্মু এখনো খুব কাঁদছে, আব্বুর ব্লাডপ্রেসার বেড়ে গেছে বলে ডাক্তার আব্বুকে ঘুমের ইঞ্জেকশন করে স্যালাইন পুস করে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। আমার ভাইটা চুপচাপ ওর ঘরের মেঝেতে বসে আছে, আর কিছুক্ষণ পর পর চোখ মুছতেছে। আমার আপু আমার বাঁধাই করা ছবিটা বুকে নিয়ে আমার বিছানায় শুয়ে আছে। সারাটা দিন কেউ কিচ্ছু যে খায়নী সেটা কিচেনে ঢুকেই বুঝেছি।
আমি ওদের সাথে কথা বলতে চাইলাম কিন্তু কেউ শুনতেই পেলো না। খুব চেষ্টা করলাম বুঝাতে যে আমি ওদের সামনে কিন্তু কেউ দেখতেই পেলো না। এই আফসোসে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমি বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। হঠাৎ আমার তৌসিফের কথা মনে পড়লো। সে কি জানে যে আমি মরে গেছি? আমি তৌসিফের বাসায় গেলাম। ওর দরজা বন্ধ ছিল, আমি নক করতে গিয়েই বন্ধ দরজার ভেতরে ঢুকে পড়লাম। রুমে ঢুকে দেখলাম খাটের পাশে মেঝেতে তৌসিফ হাতপা ছড়িয়ে বসে আছে। ঘড়িতে দেখলাম রাত তিনটা বাজে। আমি ওর সামনে গিয়ে বললাম -"এই তুমি এখনো ঘুমাওনী কেনো?"
তৌসিফও আমার কথা শুনতে পেলো না। হঠাৎ তৌসিফের বেডে চোখ পড়তেই দেখলাম আমার এক গাদা ছবি সারা বেডে ছড়িয়ে আছে। আমি বুঝলাম তৌসিফ জেনে গেছে যে আমি মরে গেছি। কিন্তু ওকে কি করে বুঝাবো যে আমি ওর পাশেই আছি? বুঝাতে পারলাম না। অনেক আফসোস নিয়ে আল্লাহকে বললাম-"হে মাবুদ তুমি একটি বার তৌসিফকে বুঝিয়ে দাও যে আমি এখানেই আছি"
সারা রাত সে জেগেই কাটালো। আমিও সারা রাত ওর পাশে বসে ওকে দেখেই কাটালাম। ভালবাসার মানুষটাকে এভাবে দেখতে তো চাইনী আমি! চেয়ে ছিলাম ওর বধূ হয়ে ওর পাশে থেকে সারাটা জীবণ ওকে দেখবো।
রিলেশনের চার বছর পর হঠাৎ তৌসিফের কি হলো জানি না, সে এক দিন আমাকে বললো-" অর্নিতা আমাকে মুক্তি দাও, আমি আর পারছি না" এটা ছাড়াও সে আরো অনেক কিছুই বলে ছিল তাতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, বিচ্ছেদটাই তার প্রত্যাশিত ছিল।
কেনো মুক্তি চায় সেটা সে কিছুতেই বলেনী। আমার ভালবাসার মানুষটি মুখ ফুটে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি সেটা দেবো না, সেটা কি করে হয়? বেঁচে থেকে তো মুক্তি দিতে পারতাম না কারণ আমি ওকে বড্ড ভালবাসি, আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না তাই মরে গিয়ে ওকে মুক্তি দিতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু শেষমেষ সেটাও হলো না। আমি মরার পরে আরো বেশী ওর কাছেই থাকতে শুরু করলাম।
আমি সেই থেকে তৌসিফের সাথেই থাকি। এক রুমে একই বেডে। কিন্তু তৌসিফ সেটা জানে না। আমি ওর পাশে শুয়ে থেকে সারা রাত ওকে দেখি। মাঝে মাঝে ওর বুকে মাথাও রাখি। এর মধ্যেও একটা সুখ অনুভব হয়।
হঠাৎ একদিন শুনলাম তৌসিফের বিয়ে, আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। তৌসিফ প্রথমে রাজী না থাকলেও অবশেষে রাজী হলো। আমি আর এটা সহ্য করতেই পারছিলাম না। রাত দিন এক করে শুধু কাঁদছিলাম। এক দিন রাতে আমার ধাক্কাতে ফুলদানি পড়ে গেলো। আমি তো অবাক! আমার মরার পর কখনো কারো সাথে ধাক্কা লাগেনী আজ ধাক্কা লাগলো কেনো সেটা বুঝতে পারলাম না। তৌসিফ ঘুম থেকে জেগে উঠে লাইট দিল। তারপর কিছু দেখতে না পেয়ে আবার ঘুমিয়ে গেলো। সেই থেকে আমার এটা ওটার সাথে ধাক্কা লাগে। শুধু মানুষের সাথেই লাগে না।
তৌসিফ বিয়ে করলো, বাসর ঘরে বউ বসে আছে। ঐ রুমে আমিও বসে আছি, পার্থক্য হলো ওর বউ লাল শাড়ী পরে আছে আর আমি সাদা শাড়ী পরে আছি। জানি না এই সাদা শাড়ীটা কখন পরলাম।
অনেক রাতে তৌসিফ রুমে ঢুকলো। আমার বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। তৌসিফ ওর বউকে বললো-"তোমার সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠতে আমার একটু সময় লাগবে"
মেয়েটা লাজুক স্বরে বললো-"কেনো?"
মেয়েটার কথা শুনে আমার তো ওর গলা টিপে ধরতে ইচ্ছে করছিল। তৌসিফ বললো-"আমি একটা মেয়েকে ভালবাসতাম সেই মেয়েটা কয়েক মাস আগে সুইসাইড করেছে। তুমি কি বুঝতে পারছো যে আমার মনটা কতটা আহত হয়ে আছে? ওর স্মৃতি গুলো ঝাপসা হওয়া পর্যন্ত আমাকে সময় দাও"
মেয়েটা আর কিছু বললো না।
আমি বেশ স্বস্তি অনুভব করলাম। স্মৃতি ঝাপসা হবার আগেই আমাকে কিছু করতে হবে। মেয়েটাকে বিছানাতে শুতে বলে তৌসিফ সোফাতে শুয়ে পড়লো। আমিও ওর পাশে গিয়ে ওর বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম। তৌসিফ সারা রাত ঘুমালো না। ওর বউ ঘুমানোর পরে তৌসিফ ফোন বের করে আমার ছবি গুলো দেখতে শুরু করলো। তারপর হঠাৎ তৌসিফের দু চোখ জলে ছলছল করে উঠলো। ওর চোখে জল দেখে আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। আমি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলাম। হঠাৎ তৌসিফ লাফ দিয়ে বসে বললো-"কে কাঁদছে এখানে?"
আমি তো হতভম্ব হয়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আছি। তৌসিফ মনের ভুল ভেবে আবার শুয়ে পড়লো। আমি বুঝতে পারলাম যে আমার কান্নার আওয়াজটা তৌসিফ শুনতে পেয়েছে। মনে মনে খুশিও হলাম।
তৌসিফের বউকে তাড়ানোর দায়িত্বটা আমি নিলাম। ওর রান্না করা খাবার গুলো নষ্ট করেই দায়িত্ব উদ্বোধন করলাম। চা বানানোর পরে আরো দু চামচ চিনি মেশালাম। তরকারী রান্নার পরে এম মুঠো লবণ আর মরিচের গুড়ো ছড়িয়ে দিলাম। ওর রান্নার জন্য সবাই ওর উপর ক্ষিপ্ত হলো।
মেয়েটা একা একা রুমে বসে কাঁদে, এটা দেখে আমারও খারাপ লাগে কিন্তু কি করবো আমি? তৌসিফ আর আমার মাঝে অন্য কাউকে বরদাস্ত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর মরা মানুষের আবার মনুষ্যত্ব থাকে নাকি?
কিন্তু তৌসিফ ধীরে ধীরে ঐ মেয়েটার প্রতি দূর্বল হতে শুরু করলো। আর এখানে আমার কিচ্ছু করার নেই।
আসলেই আমি খুব বোকা, বেঁচে থাকতেই যে মানুষটা আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, মরে যাবার পর সে কাছে টানবে কি করে? আমার ভালবাসার মানুষটি আমার সামনে অন্য কাউকে ভালবাসছে এটা সইবার ক্ষমতা যেমন জীবিত মানুষের নেই তেমনি মৃত মানুষেরও নেই। তাই ওকে মুক্তি দিয়ে ওর রুম থেকে বিদায় নিয়ে ওদের ছাদে গিয়ে থাকতে শুরু করলাম। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে তৌসিফ ছাদে আসে সিগারেট খেতে। ঐ সময় টুকু ওকে দেখবার জন্য আমি রোদ ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ছাদে বসে থাকি। সকালে যখন সে অফিসে বের হয় তখন আমি দৌড়ে ওদের সদর দরজার বাহিরে গিয়ে দাড়াই। ওর কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে চলে আসি। জানি না কেনো তৌসিফ সদর দরজার বাহিরে কয়েক মিনিট একা দাড়িয়ে থাকে। তারপর বের হয়ে যাবার পর একবার পিছনে তাকায়। আমি হাত নাড়িয়ে ওকে বিদায় জানাই। সারাটা দিন ছাদে দাড়িয়ে তৌসিফের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করি।
একদিন মাঝ রাতে ছাদে দাড়িয়ে তৌসিফ সিগারেট টানছিল। আমি ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম। সে হঠাৎ বললো-"এমনটা কেনো করলে অর্নিতা?"
ওর কথা শুনে আমি তো চমকে উঠলাম। আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না যে সে আমাকে দেখতে পেলো কি করে?
সে-"চুপ কেনো আছো? বলো আমি শুনবো"
আমি বলার ভাষা হারিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
সে এবার আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো-" প্রথম দিন থেকেই আমি তোমাকে দেখতে পাই। কিন্তু তোমাকে বুঝতে দিইনী। তুমি পাশে আছো জেনেও বিয়ে করেছি, এটা তোমার প্রতি আমার দ্বিতীয় অপরাধ। ক্ষমা চাইব না তবুও, আমাকে অভিশাপ দিয়ে ভষ্ম করে দাও অর্নিতা। এটাই আমার প্রাপ্য"
আমি চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে কাঁদছি। মানুষটার ভেতরটা যে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে সেটা আমি বুঝতে পারছি। ওকে সুখী দেখতে আমার এই বসতীটাও যে ছেড়ে দিতে হবে সেটা বুঝে গেছি। তাই বললাম-"ঠিক আছে চলে যাবো আমি, তুমি ভালো থেকো তৌসিফ"
তৌসিফ নিচে বসে পড়লো, তারপর ডুকরে ডুকরে কাঁদলো। এই দৃশ্যটা দেখার সামর্থ্য আমার ছিল না তাই ওখান থেকে সরে এলাম। তারপর থেকে ওদের বাসার কোণে একটা বকুল গাছের আড়ালে আমি বসে থাকি। দূর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তৌসিফকে দেখি। সে আমাকে দেখতে পায় না। কিন্তু রোজ রাতে সে ছাদে দাড়িয়ে আমাকে খুঁজে সেটা আমি রোজ দেখি। মাঝে মাঝে মনে হয় চুপি চুপি ওর রুমে গিয়ে ওর ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখখানা একটি বার দেখে আসি কিন্তু একটা বিবাহিত পুরুষের রুমে গিয়ে আমার কষ্ট ছাড়া যে আর কোনো প্রাপ্য নেই সেটা আমি জানি। তাই দূর থেকেই ওকে দেখে আমি খুশি থাকি।
একটা জীবণ জুড়েও ভালবেসে শেষ করা যায় না। হয়ত অনন্ত জীবণেও এ ভালবাসা শেষ হবে না। আমার এই উড়ে চলা জীবণের কোনো সীমানা নেই।
দিন রাত জুড়ে শুধু একটা মানুষকে আড়াল থেকে দেখবার পিপাসায় অনন্তকাল জুড়ে আমি তৃষ্ণার্ত জেগে থাকবো।
হারিয়ে গেছি, এ পৃথিবীর বুকে আরেকটি স্তুতি লেখা হলো অপ্রাপ্তির। আমি এমনই অভাগী যে, এ জনম পরজনম কোথাও তোকে পেলাম না। আমার অনুসিক্ত ভালবাসা তোকে ছুঁলো, দেখ আমি কতটা দূরে, যোজন যোজন দূরে রে! এক ফোটা ভালবাসার জন্য আকুলতা থেকে গেলো শুধু তোর কাছেই ......
Writer-Sazia Afrin Sapna
আমি মরে গেছি দু' বছর হলো। ইচ্ছে করে মরিনী বরং বাধ্য হয়েই মরেছি। Poison খেয়ে ছিলাম। Poison খাওয়ার পর আমার বুক আর পেটের ভেতরে তীব্র জ্বলছিল। তবুও আমি দাঁতে দাঁত চেপে সয়ে যাচ্ছিলাম। সেই মুহূর্তে বিচ্ছেদের যন্ত্রণার কাছে এই বিষের জ্বালাটাকে তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। মনে মনে আমি বেশ খুশি ছিলাম এই ভেবে যে, এবার আমি তৌসিফ কে ভুলে যেতে পারবো। ওকে দেখতে আমার আর ইচ্ছে করবে না। ওর ignore সহ্য করে আমার আর কাঁদতে হবে না। এই সব যা-তা ভেবেই আমি চুপচাপ রুমে শুয়ে আছি। বিষের তীব্র জ্বালা চরমে পৌছে গেলো, আমার সহনীয় ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে শুরু করলো। আমি ঘন্টা খানেক বিছানায় ছটফট করতে করতে তারপর মেঝেতে পড়ে গেলাম। তারপর কি লেগে খাটের পাশে রাখা ল্যাম্পটা মেঝেতে পড়ে গেলো ঠিক মনে নেই। ল্যাম্পটা মেঝেতে পড়ে ভেঙে গেছে। আমার ছটফট করা শরীরে ল্যাম্পের কাঁচ ঢুকে গেছে। বুকের ভেতরটা এতটাই জ্বলছিল যে কাঁচ ঢুকে যাবার ব্যাথা অনুভব করতে পারছিলাম না। এমন কি কাঁচ গুলো শরীরের কোন অংশে ঢুকছে সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। সম্ভবত ল্যাম্প পড়ে যাবার শব্দে আম্মু আমার রুমে চলে এলো। আমাকে এই বিভৎস রূপে দেখে আম্মু চিৎকার করে উঠলো। ততোক্ষণে বাসার সবাই জেগে গেছে।
এম্বুলেন্স এলো, আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। মুখের ভেতরে নল ঢুকিয়ে আমার পেট থেকে বিষ বের করা হলো। তারপর শরীর থেকে কাঁচের টুকরা গুলোও বের করা হলো। কিন্তু রক্তের সাথে মিশে যাওয়া বিষ গুলো থেকেই গেলো। আমাকে আই সি ইউ তে দু দিন রাখা হলো। তারপর হঠাৎ মাঝ রাতে দেখলাম আমি সুস্থ হয়ে গেছি। আমি উঠে বসলাম এবং হাটতেও পারছি। কিন্তু শরীরটা অস্বাভাবিক পাতলা অনুভব হচ্ছে। আমি বাহিরে বেরিয়ে দেখলাম বাবা মা সবাই চেয়ারে বসে ঘুমোচ্ছে। কিছুক্ষণ পর এক জন ডাক্তার রুমে ঢুকলেন তারপর বেরিয়ে এসে বাবা মাকে জাগিয়ে বললেন-"she is no more"
বাবা মা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। আমি ওদের জিজ্ঞেস করছি যে তারা কেনো কাঁদছে কিন্তু কেউ যেনো আমাকে দেখতেই পাচ্ছ না আর আমার কথাও শুনতে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর ঐ রুম থেকে দু জন ওয়ার্ডবয় কাপড়ে ঢাকা কার যেনো বডি বের করে আনলো। মনে হলো কেউ মারা গেছে। আম্মু এগিয়ে গিয়ে ঐ বডির মুখ থেকে কাপড় সরাতেই আমি চমকে উঠলাম। ঐ মৃত মানুষটা হুবহু আমার মতই দেখতে। কিন্তু আমি তো এখানে তাহলে ওটা কে?
আমি বুঝতে পারলাম যে আমি আর বেঁচে নেই। আমি মরে গেছি। এই কথাটা মেনে নিতে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
আমার শরীরটাকে বাসায় আনা হলো। আমি সাথে বাসায় এলাম। অনেক আত্মীয় পাড়া প্রতিবেশী আমাকে দেখতে এসেছে। আত্মীয়রা সবাই আমার দেহটাকে ঘিরে ধরে কাঁদছে। এটা দেখে আমারও খুব কান্না পাচ্ছিল। আমি ওদের সামনে গিয়ে শান্তনা দিতে থাকলাম কিন্তু কেউ আমাকে দেখতে পেলো না। অনেকেই আবার আমাকে নিয়ে অনেক খারাপ মন্তব্যও করছে সে গুলো শুনে আমার খুব রাগ হলো কিন্তু কিছু করার নেই।
বাবার অনেক অনুরোধে আমার শরীরটাকে পোস্টমর্ট্যাম করানো হলো না বলে একটু স্বস্তি অনুভব করলাম। আমার শরীরটাকে ধুইয়ে কাফন পরিয়ে রেডী করা হলো। আম্মু আর আপা খাটিয়া আঁকড়ে ধরে কাঁদছে। কয়েক জন মহিলা তাদের টেনে ধরে রেখেছে। আমি আম্মুকে কাঁদতে বারণ করছি কিন্তু আম্মু আমার কথা শুনতেই পাচ্ছে না। হঠাৎ আম্মু অজ্ঞান হয়ে গেলো।
আমার শরীরটাকে একটা বদ্ধ কুটিরে রেখে আসা হলো। ওখানে দরজা জানালা কিচ্ছু নেই, আছে শুধু ভয়ানক অন্ধকার।
আমি ঐ অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এলাম, আমার নিথর দেহ ওখানেই পড়ে আছে। আমি বুঝে উঠতে পারছি না যে আমি এখন কোথায় যাবো। আমি বাসায় গেলাম, ওখানে গিয়ে দেখলাম আমার আম্মু এখনো খুব কাঁদছে, আব্বুর ব্লাডপ্রেসার বেড়ে গেছে বলে ডাক্তার আব্বুকে ঘুমের ইঞ্জেকশন করে স্যালাইন পুস করে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। আমার ভাইটা চুপচাপ ওর ঘরের মেঝেতে বসে আছে, আর কিছুক্ষণ পর পর চোখ মুছতেছে। আমার আপু আমার বাঁধাই করা ছবিটা বুকে নিয়ে আমার বিছানায় শুয়ে আছে। সারাটা দিন কেউ কিচ্ছু যে খায়নী সেটা কিচেনে ঢুকেই বুঝেছি।
আমি ওদের সাথে কথা বলতে চাইলাম কিন্তু কেউ শুনতেই পেলো না। খুব চেষ্টা করলাম বুঝাতে যে আমি ওদের সামনে কিন্তু কেউ দেখতেই পেলো না। এই আফসোসে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমি বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। হঠাৎ আমার তৌসিফের কথা মনে পড়লো। সে কি জানে যে আমি মরে গেছি? আমি তৌসিফের বাসায় গেলাম। ওর দরজা বন্ধ ছিল, আমি নক করতে গিয়েই বন্ধ দরজার ভেতরে ঢুকে পড়লাম। রুমে ঢুকে দেখলাম খাটের পাশে মেঝেতে তৌসিফ হাতপা ছড়িয়ে বসে আছে। ঘড়িতে দেখলাম রাত তিনটা বাজে। আমি ওর সামনে গিয়ে বললাম -"এই তুমি এখনো ঘুমাওনী কেনো?"
তৌসিফও আমার কথা শুনতে পেলো না। হঠাৎ তৌসিফের বেডে চোখ পড়তেই দেখলাম আমার এক গাদা ছবি সারা বেডে ছড়িয়ে আছে। আমি বুঝলাম তৌসিফ জেনে গেছে যে আমি মরে গেছি। কিন্তু ওকে কি করে বুঝাবো যে আমি ওর পাশেই আছি? বুঝাতে পারলাম না। অনেক আফসোস নিয়ে আল্লাহকে বললাম-"হে মাবুদ তুমি একটি বার তৌসিফকে বুঝিয়ে দাও যে আমি এখানেই আছি"
সারা রাত সে জেগেই কাটালো। আমিও সারা রাত ওর পাশে বসে ওকে দেখেই কাটালাম। ভালবাসার মানুষটাকে এভাবে দেখতে তো চাইনী আমি! চেয়ে ছিলাম ওর বধূ হয়ে ওর পাশে থেকে সারাটা জীবণ ওকে দেখবো।
রিলেশনের চার বছর পর হঠাৎ তৌসিফের কি হলো জানি না, সে এক দিন আমাকে বললো-" অর্নিতা আমাকে মুক্তি দাও, আমি আর পারছি না" এটা ছাড়াও সে আরো অনেক কিছুই বলে ছিল তাতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, বিচ্ছেদটাই তার প্রত্যাশিত ছিল।
কেনো মুক্তি চায় সেটা সে কিছুতেই বলেনী। আমার ভালবাসার মানুষটি মুখ ফুটে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি সেটা দেবো না, সেটা কি করে হয়? বেঁচে থেকে তো মুক্তি দিতে পারতাম না কারণ আমি ওকে বড্ড ভালবাসি, আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না তাই মরে গিয়ে ওকে মুক্তি দিতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু শেষমেষ সেটাও হলো না। আমি মরার পরে আরো বেশী ওর কাছেই থাকতে শুরু করলাম।
আমি সেই থেকে তৌসিফের সাথেই থাকি। এক রুমে একই বেডে। কিন্তু তৌসিফ সেটা জানে না। আমি ওর পাশে শুয়ে থেকে সারা রাত ওকে দেখি। মাঝে মাঝে ওর বুকে মাথাও রাখি। এর মধ্যেও একটা সুখ অনুভব হয়।
হঠাৎ একদিন শুনলাম তৌসিফের বিয়ে, আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। তৌসিফ প্রথমে রাজী না থাকলেও অবশেষে রাজী হলো। আমি আর এটা সহ্য করতেই পারছিলাম না। রাত দিন এক করে শুধু কাঁদছিলাম। এক দিন রাতে আমার ধাক্কাতে ফুলদানি পড়ে গেলো। আমি তো অবাক! আমার মরার পর কখনো কারো সাথে ধাক্কা লাগেনী আজ ধাক্কা লাগলো কেনো সেটা বুঝতে পারলাম না। তৌসিফ ঘুম থেকে জেগে উঠে লাইট দিল। তারপর কিছু দেখতে না পেয়ে আবার ঘুমিয়ে গেলো। সেই থেকে আমার এটা ওটার সাথে ধাক্কা লাগে। শুধু মানুষের সাথেই লাগে না।
তৌসিফ বিয়ে করলো, বাসর ঘরে বউ বসে আছে। ঐ রুমে আমিও বসে আছি, পার্থক্য হলো ওর বউ লাল শাড়ী পরে আছে আর আমি সাদা শাড়ী পরে আছি। জানি না এই সাদা শাড়ীটা কখন পরলাম।
অনেক রাতে তৌসিফ রুমে ঢুকলো। আমার বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো। তৌসিফ ওর বউকে বললো-"তোমার সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠতে আমার একটু সময় লাগবে"
মেয়েটা লাজুক স্বরে বললো-"কেনো?"
মেয়েটার কথা শুনে আমার তো ওর গলা টিপে ধরতে ইচ্ছে করছিল। তৌসিফ বললো-"আমি একটা মেয়েকে ভালবাসতাম সেই মেয়েটা কয়েক মাস আগে সুইসাইড করেছে। তুমি কি বুঝতে পারছো যে আমার মনটা কতটা আহত হয়ে আছে? ওর স্মৃতি গুলো ঝাপসা হওয়া পর্যন্ত আমাকে সময় দাও"
মেয়েটা আর কিছু বললো না।
আমি বেশ স্বস্তি অনুভব করলাম। স্মৃতি ঝাপসা হবার আগেই আমাকে কিছু করতে হবে। মেয়েটাকে বিছানাতে শুতে বলে তৌসিফ সোফাতে শুয়ে পড়লো। আমিও ওর পাশে গিয়ে ওর বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম। তৌসিফ সারা রাত ঘুমালো না। ওর বউ ঘুমানোর পরে তৌসিফ ফোন বের করে আমার ছবি গুলো দেখতে শুরু করলো। তারপর হঠাৎ তৌসিফের দু চোখ জলে ছলছল করে উঠলো। ওর চোখে জল দেখে আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। আমি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলাম। হঠাৎ তৌসিফ লাফ দিয়ে বসে বললো-"কে কাঁদছে এখানে?"
আমি তো হতভম্ব হয়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আছি। তৌসিফ মনের ভুল ভেবে আবার শুয়ে পড়লো। আমি বুঝতে পারলাম যে আমার কান্নার আওয়াজটা তৌসিফ শুনতে পেয়েছে। মনে মনে খুশিও হলাম।
তৌসিফের বউকে তাড়ানোর দায়িত্বটা আমি নিলাম। ওর রান্না করা খাবার গুলো নষ্ট করেই দায়িত্ব উদ্বোধন করলাম। চা বানানোর পরে আরো দু চামচ চিনি মেশালাম। তরকারী রান্নার পরে এম মুঠো লবণ আর মরিচের গুড়ো ছড়িয়ে দিলাম। ওর রান্নার জন্য সবাই ওর উপর ক্ষিপ্ত হলো।
মেয়েটা একা একা রুমে বসে কাঁদে, এটা দেখে আমারও খারাপ লাগে কিন্তু কি করবো আমি? তৌসিফ আর আমার মাঝে অন্য কাউকে বরদাস্ত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর মরা মানুষের আবার মনুষ্যত্ব থাকে নাকি?
কিন্তু তৌসিফ ধীরে ধীরে ঐ মেয়েটার প্রতি দূর্বল হতে শুরু করলো। আর এখানে আমার কিচ্ছু করার নেই।
আসলেই আমি খুব বোকা, বেঁচে থাকতেই যে মানুষটা আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, মরে যাবার পর সে কাছে টানবে কি করে? আমার ভালবাসার মানুষটি আমার সামনে অন্য কাউকে ভালবাসছে এটা সইবার ক্ষমতা যেমন জীবিত মানুষের নেই তেমনি মৃত মানুষেরও নেই। তাই ওকে মুক্তি দিয়ে ওর রুম থেকে বিদায় নিয়ে ওদের ছাদে গিয়ে থাকতে শুরু করলাম। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে তৌসিফ ছাদে আসে সিগারেট খেতে। ঐ সময় টুকু ওকে দেখবার জন্য আমি রোদ ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ছাদে বসে থাকি। সকালে যখন সে অফিসে বের হয় তখন আমি দৌড়ে ওদের সদর দরজার বাহিরে গিয়ে দাড়াই। ওর কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে চলে আসি। জানি না কেনো তৌসিফ সদর দরজার বাহিরে কয়েক মিনিট একা দাড়িয়ে থাকে। তারপর বের হয়ে যাবার পর একবার পিছনে তাকায়। আমি হাত নাড়িয়ে ওকে বিদায় জানাই। সারাটা দিন ছাদে দাড়িয়ে তৌসিফের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করি।
একদিন মাঝ রাতে ছাদে দাড়িয়ে তৌসিফ সিগারেট টানছিল। আমি ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম। সে হঠাৎ বললো-"এমনটা কেনো করলে অর্নিতা?"
ওর কথা শুনে আমি তো চমকে উঠলাম। আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না যে সে আমাকে দেখতে পেলো কি করে?
সে-"চুপ কেনো আছো? বলো আমি শুনবো"
আমি বলার ভাষা হারিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
সে এবার আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো-" প্রথম দিন থেকেই আমি তোমাকে দেখতে পাই। কিন্তু তোমাকে বুঝতে দিইনী। তুমি পাশে আছো জেনেও বিয়ে করেছি, এটা তোমার প্রতি আমার দ্বিতীয় অপরাধ। ক্ষমা চাইব না তবুও, আমাকে অভিশাপ দিয়ে ভষ্ম করে দাও অর্নিতা। এটাই আমার প্রাপ্য"
আমি চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে কাঁদছি। মানুষটার ভেতরটা যে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে সেটা আমি বুঝতে পারছি। ওকে সুখী দেখতে আমার এই বসতীটাও যে ছেড়ে দিতে হবে সেটা বুঝে গেছি। তাই বললাম-"ঠিক আছে চলে যাবো আমি, তুমি ভালো থেকো তৌসিফ"
তৌসিফ নিচে বসে পড়লো, তারপর ডুকরে ডুকরে কাঁদলো। এই দৃশ্যটা দেখার সামর্থ্য আমার ছিল না তাই ওখান থেকে সরে এলাম। তারপর থেকে ওদের বাসার কোণে একটা বকুল গাছের আড়ালে আমি বসে থাকি। দূর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তৌসিফকে দেখি। সে আমাকে দেখতে পায় না। কিন্তু রোজ রাতে সে ছাদে দাড়িয়ে আমাকে খুঁজে সেটা আমি রোজ দেখি। মাঝে মাঝে মনে হয় চুপি চুপি ওর রুমে গিয়ে ওর ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখখানা একটি বার দেখে আসি কিন্তু একটা বিবাহিত পুরুষের রুমে গিয়ে আমার কষ্ট ছাড়া যে আর কোনো প্রাপ্য নেই সেটা আমি জানি। তাই দূর থেকেই ওকে দেখে আমি খুশি থাকি।
একটা জীবণ জুড়েও ভালবেসে শেষ করা যায় না। হয়ত অনন্ত জীবণেও এ ভালবাসা শেষ হবে না। আমার এই উড়ে চলা জীবণের কোনো সীমানা নেই।
দিন রাত জুড়ে শুধু একটা মানুষকে আড়াল থেকে দেখবার পিপাসায় অনন্তকাল জুড়ে আমি তৃষ্ণার্ত জেগে থাকবো।
হারিয়ে গেছি, এ পৃথিবীর বুকে আরেকটি স্তুতি লেখা হলো অপ্রাপ্তির। আমি এমনই অভাগী যে, এ জনম পরজনম কোথাও তোকে পেলাম না। আমার অনুসিক্ত ভালবাসা তোকে ছুঁলো, দেখ আমি কতটা দূরে, যোজন যোজন দূরে রে! এক ফোটা ভালবাসার জন্য আকুলতা থেকে গেলো শুধু তোর কাছেই ......
No comments