PHYSIMISTRIAN
#ফিজিমিস্ট্রিয়ূন
লেখা-মৌমিতা শিকদার।
আমি লোকটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। তারপর অপলক দৃষ্টিতে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠলাম
"কি করছেন!?"
সে ফিজিক্স বইটা থেকে মাথা তুলে বলে উঠলো
"বই পড়ছি
তুমি ও পড়বে?"
আমি অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত রেখে বললাম
" আমিও দেখতে পাচ্ছি আপনি গান গাচ্ছেন না, বই পড়ছেন।কিন্তু এটা কোন ধরনের স্টাইল?? ডিভানে মাথা রেখে শুয়ে খাটে পা রেখে বই পড়া! জায়গা বন্ধ করে রেখেছেন।আমি বারান্দায় যাবো। পা নামান!!"
সৈকত পা টা আস্তে করে নামালো। আমি তাড়াতাড়ি চলে গেলাম বারান্দায়। সৈকত।ফের বই পড়া শুরু করে দিলো। কাপড়গুলো মেলে দিয়ে কিছুক্ষণ পরই ফিরে আসলাম।রাস্তা আবারো ব্লক -_-
আমি-" পা টা নামান!"
সৈকত একই ভাবে বই পড়েই যাচ্ছে। কোনো হুশজ্ঞান নেই তার। এতোই ডুবে গেছে বইয়ে! আমি আচমকা হাত থেকে ফিজিক্স বইটা এক ঝটকায় নিয়ে নিলাম।
"কি বলেছি কানে যায় না? পা টা নামান!"
সৈকত "আচ্ছা" বলেই পা নামিয়ে ফেললো।আমি বই ফিরিয়ে দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চলে গেলাম।
সৈকত এর সাথে বিয়ে হয়েছে মাত্র একমাস হয়ে গেলো। বিয়ের আগে জানতাম সে বই পড়ুয়া। এখন বুঝি সে গল্পের বই পড়ুয়া না। ফিজিক্স কেমিস্ট্রি বই পড়ুয়া। অফিস থেকে এসেই বই নিয়ে বসে যায়। তার অফিস ব্যাগেই দুই তিনটা কেমিস্ট্রি বই থাকে সবসময়।
আমি বিয়ের আগের থেকেই অন্যজন কে ভালোবাসতাম। চশমা পড়ুয়া, গান প্রিয় এক উচ্ছল ছেলে ছিলো সে। কিন্তু বিয়ের দিন ই সে তার ফোন, ফেইসবুক, ইমো সব বন্ধ করে রাখে। আর যোগাযোগ করেনি। খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন।কেনো যেনো আমার আগেই আশংকা হয়েছিলো যে এমন ই কিছু একটা হবে।প্রায় সবার ই তো হয়।আমি বাদ যাবো কেন!
তো বিয়ের আসরে ছিলেন এই লোক। সৈকত আহমেদ। বাবার থমকে যাওয়া আর মায়ের বারবার শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মোছা, আত্মীয়স্বজনদের বাঁকা চাহনী, এসব দেখে হুট করে বিয়ে করবে বলে জানিয়ে দেয়।বাবা তার বাল্যবন্ধুর ছেলের থেকে এতোটাও আশা করেন নি। আফজাল আংকেল, বাবার বন্ধু ও সায় দেন এ বিয়েতে। তাদের ও নাকি আমাকে পছন্দ। ব্যস। সকলের সম্মতিতেই ফিল্মিভাবে হয়ে গেলো বিয়ে।বিয়ে তো নয় যেনো এক খেলা!
বিয়ের রাতে আমি বসে ছিলাম। মনে অজস্র প্রশ্ন,চিন্তা ছিলো। হঠাৎ করে সৈকত তার রুমে ঢুকেই প্রায় এক প্রকার দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলো। আমি ফুলের পাঁপড়ি ছড়ানো খাটে সব ভুলে হা করে দেখছিলাম তার কান্ড :O ।সে তার বালিশ টার কভার খুলে কিছু একটা খুঁজলো, পেলো না। খাটের নিচ এ দেখলো। ডেস্কের প্রতিটা ড্রয়ার দেখলো। ড্রেসিংটেবিল এ খুজলো। ডিভান এর নিচে খুঁজলো। পরে আমার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত বোধ করতে করতে বলে উঠলো
" দয়া করে কি নামবেন একটু খাট থেকে? একটা জিনিস খুঁজছি। "
আমি ভারি গহনা,শাড়ি নিয়ে নেমে গেলাম। উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে তার খাটের তোষক পুরোটার এক অংশ উলটে দিলো :O । তারপর তার মুখে প্রশান্তির এক হাসি দেখলাম।সে দুইহাত দিয়ে একগাদা বই বের করে বলে উঠলো।
" পেয়েছি! আহহ পেয়ে গেছি! "
আমাকে না দেখার ভান করে সে ডিভানে শুয়ে পড়লো।পাশে ছয় সাত টা বই!
আমার তখন অবাক হওয়ার পালা। সে বই তুলে নিলো একটা।আমাকে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে হঠাৎ বলে উঠলো
" আসলে আমার বন্ধু বইগুলো লুকিয়ে রেখেছিল এখানে।আমি তো বই পড়তে খুব ভালোবাসি তাই। এখন খুঁজে পেলাম।আমি পড়ি হ্যাঁ? আপনি ঘুমান।লাইট টা, আচ্ছা থাক অফ ই থাক। ল্যাম্পের আলোতে পড়ি আমি। সমস্যা নেই।"
সে এটা বলেই আর দেরি না করে বই পড়া শুরু করে দিলো। আমি ও বই পড়তে খুব ভালোবাসি। তাই হাত বাড়িয়ে একটা বই তুলে দেখলাম
"পদার্থবিজ্ঞান এর সফল অভিযান"
ফিজিক্স!
আমি তাড়াতাড়ি নামিয়ে রেখেছিলাম বইটা।
সেই থেকেই শুরু। আস্তে আস্তে বুঝে ফেলি যে এই লোক কাঠখোট্টা বই এর প্রেমিক।
মোবাইল এর শব্দে বাস্তবে ফিরে এলাম। কি হবে আর এসব চিন্তা করে! বাদ ই দেই।যা হওয়ার হয়েই তো গেছে।
।
।
।
।
রান্নাঘর এ গিয়ে দেখলাম জমিলার মা একমনে ফুলকপি কাটছে। এই বাড়িতে জমিলার মা রান্না বান্না, ঘর মোছার কাজ করে।
আমি এগিয়ে চুলার উপর রাখা তরকারী টা নেড়ে দিলাম। চেখে লবণ দিলাম।। বুয়া আমাকে দেখে হঠাৎ করে পান খাওয়া লাল দাঁতে বলে উঠলো,
" আফা আপনে আইছেন কেন? যান। ভাইয়ার সাথে সুময় কাটান। মাত্র এক মাস হইলো বিয়ার। এহনো আপনেরা ঘুরতে যান নাই। সুমোয় কাটান না।নয়া বিয়াত্তারা কতো সুমোয় কাটায়! অনেক দেহি। তয় আপনাগো মতো কাউরে দেহিনাই। ভাই সারাদিন বই নিয়া পইড়া থাহে। কিছু কন না ক্যা? জানেন আমার বিয়ার পর আমি আর জমিলার আব্বা মিলা....
সে হেসে উঠলো। আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
আমি-" হয়েছে। কাজ করো!"
আমি রুমে এসে পড়লাম। সে তখন ও বই পড়ছে। কিন্তু এটা আগের বই না, অন্য বই।নাম " কেমিস্ট্রি এর ১৬৭ টা মজার বিক্রিয়া!"
উফ। অসহ্য। আমি আড়চোখে লোকটার দিয়ে তাকালাম। চোখ বড় বড় করে সে একমনে বই পড়ছে। আমার কাছে কেন জানি অনেক বিরক্ত লাগে।সে কি মানুষ নাকি! এভাবে কেউ বই পড়ে? তাও আবার রসায়ন এর বই! কোনো গল্পের বই হলেও বুঝতাম। এই মানুষটাকে না দেখলে জানতাম ই না যে পৃথিবীতে কেউ আবার রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান এর বই শখ করে পড়ে!
আমি তার মনোযোগ নষ্ট করার জন্য গান ছেড়ে দিলাম। ভলিউম বাড়িয়ে দিলাম।
"নেশা কেটে গেলে, তুমিও কেটে যাবে,
মাথার ভেতরে গাজা ঘুরে, গাজার ভেতরে মাথা,তামাক বৃক্ষের পাতা। নেশা কেটে গেলে তুমিও কেটে যা------বে!"
লোকটা গানের শব্দে অবাক হয়ে বই রেখে আমার দিকে তাকালো।
"কি হয়েছে নীলা??? এতো জোরে গান ছেড়েছো কেন?"
আমি-" আপনি বই পড়েন।নিষেধ করছি কখনো? তো আমাকেও গান শুনতে দেন!"
সৈকত -"আচ্ছা ঠিক আছে শোনো।"
এই বলে পকেট থেকে একগাদা তুলো বের করে একটু ছিড়ে দুই কানে গুঁজে দিলো। আমি হা করে তাকিয়ে থাকলাম।তার দিকে। গান বন্ধ করে দিলাম। ভাল্লাগেনা যত্তসব। আমি মেজাজ খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
।
।
।
।
ঝননন!! ঝনাৎ!! "
আমি লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম ঘুম থেকে।কি যেনো পড়ছে মনে হলো!
আমি তাড়াতাড়ি শব্দের উৎসের দিকে গেলাম। বাড়ির একটা রুম আছে,সেখানে সৈকত এর সব বই, আর পরীক্ষা নিরীক্ষণ এর যন্ত্রপাতি।সেখান থেকেই আওয়াজ আসছে!
আমি দরজা ধাক্কাতে লাগলাম। আবার আওয়াজ আসলো।কিছু গড়িয়ে পড়ার আওয়াজ। কি হলো! এতো আওয়াজ কেন রুমের ভেতর!
অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো আমার। আমি বারবার দরজা নক করতে লাগলাম
"সৈকত, কি হয়েছে? শুনতে পাচ্ছেন?? সৈকত!"
কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর সৈকত দরজা খুলে দিলো। রুম ভর্তি কি যেনো এক বিদঘুটে গন্ধ।! সারা মেঝে ছড়ানো ছোট ছোট কালো পিন।টেবিলে লাল রঙ এর একটা পদার্থ একটু পড়ে আছে।পাশেই ভাঙা শিশি।বুঝলাম।সে তার চিরচেনা এক্সপেরিমেন্ট করছে!
আমি-" কি এসব?!
সৈকত-" নীলা, পরীক্ষা করছিলাম ব্রোমিন....
আমি বাঁধা দিয়ে উঠলাম
আমি-" এইসব বিদঘুটে পরীক্ষার কথা আমি জানতে চাই না।আমি সাইন্সের না কমার্স এর ছাত্রী ছিলাম।
"
এই বলে তাড়াতাড়ি মুখে শাড়ির আঁচল চাপা দিয়ে বের হয়ে গেলাম রুম থেকে। নিজের ঘরে এসে বারান্দায় চলে গেলাম। জোরে জোরে শ্বাস নিলাম। বিষাক্ত বাতাস সব বের করে দিলাম। আল্লাহ! কি সব ভয়ানক এক্সপেরিমেন্ট। ভাবখানা দেখে মনে হয় যেনো বিজ্ঞানী! হায়রে! কেমন লোক এটা! এইসব বিদঘুটে বই,পরীক্ষা করতে থাকে।অসহ্য। এতো শখ কিভাবে হয়!
আমি আমার খাটের সাথে লাগোয়া তাক থেকে হুমায়ূন আহমেদের একটা বই বের করলাম। " বৃষ্টি ও মেঘমালা।"
অনেক দিন পড়িনা হুমায়ূন আহমেদের বই।আমার আবার ভীষণ প্রিয় উনার বই! অনেক প্রিয় ♥
আমি বইটা পড়তে লাগলাম।একটু পর সৈকত ফ্রেশ হয়ে আসলো।আমার হাতে বই দেখে অবাক হয়ে গেলো
:O
সৈকত-" ওয়াও নীলা! তুমিও বই পড়ো! বাহ! কি বই এটা?" ☺
আমি-" বৃষ্টি ও মেঘমালা 😒 "
সৈকত -" ওউ :( "
বুঝলাম ওর মন খারাপ হয়েছে।বাহ।আমি কি ওর মতো সারাদিন ওইসব আজাইরা বই পড়বো নাকি! ওগুলা কি বই! বই নামের কলংক! আর এখন কেনো পড়ে এইসব বই! লাভ কি পড়ে! পরীক্ষা দিবে নাকি!
মনে মনে বললাম-" পদার্থবিদ্যা রসায়ন এর ঘন যৌগের দ্রবণ পানিতে গুলিয়ে আপনাকে খাইয়ে দিলে ভালো হবে!"
যাক।সেটা তো করতে পারবো ও না।এসব চিন্তা করে কি হবে। আমার মহান ভাগ্য। এই লোক এর সাথে বিয়ে হয়েছে আমার। কি সুন্দর ভাগ্য। যেই লোক সারাদিন বইয়ে মুখ গুঁজে থাকে, একটু বলেও না যে আসো ঘুরতে যাই দুজন। জোছনা রাতে বলেও না যে আসো দুজন মিলে চাঁদ টা দেখি। উপভোগ করি দৃশ্য টা। সোডিয়াম লাইটের আলোতে দুইজনে মিলে হাটবো। আহ কি কি ভেবেছিলাম! আর এখন! কেমন লোক এটা। আমরা দুইজন সম্পূর্ণ বিপরীত দুই মেরুর মানুষ। আমার পছন্দ প্রকৃতি, সুন্দর গান, ঘুরতে যাওয়া, সাজগোজ করা।আর লোকটার পছন্দ শুধু পদার্থ আর রসায়নের বই। কি আর বলার আছে!!
।
।
।
।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সৈকত আগেই চলে গেছে অফিসে। আমি জানি।সাথে করে নিশ্চয়ই এক গাদা বই নিয়ে গেছে! আর লাঞ্চ আওয়ারে লাঞ্চ হিসেবে সেই বইগুলো গিলবে গোগ্রাসে!
আমি ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গিয়ে বুয়ার সাথে টুকটাক কিছু জরুরী কথা বলে আবার রুমে আসলাম। বিছানায় বসে পড়লাম। আমার হাতে অফুরন্ত সময়।বিয়ের পর সারাদিন ঘরে বসেই কাটাই। বই পড়ি,গান শুনি। আমি আমার মোবাইল টা হাতে নিতেই হঠাৎ করে চোখ চলে গেলো মাটিতে রাখা কিছু একটার উপর। কি এটা। আমি এগিয়ে গেলাম। সৈকতের ডায়রী নাকি! হ্যাঁ তাই তো মনে হচ্ছে।
আমার খুব কৌতুহল সৃষ্টি হলো।নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি নাকি একটু বেশি ই আগ্রহ থাকে। আমি জানি পারমিশন ছাড়া অন্যের ডায়রী এভাবে পড়া উচিত না। কিন্তু কৌতুহল ও হচ্ছে খুব!
আমি আর কিছু না ভেবে চকলেট রঙা ডায়রীটা খুললাম। কিছু সাদা পৃষ্ঠা তার পর ই একটা কিছু আঁকা। কি আঁকা এটা।
আমি গভীরভাবে লক্ষ করলাম। একটা মানুষ, মনে হয় বসে আছে।বাগানে। মাথায় বড় বড় চুল লোকটার। তার মাথার উপরে একটা গাছ।আপেল গাছ। লোকটাকে দেখে নিউটন নিউটন মনে হচ্ছে!
ওহহহ! আমি বুঝে গেলাম। এটা ও সেই পদার্থবিজ্ঞান এর বিষয়। হায় আল্লাহ!
আমি পৃষ্ঠা উল্টালাম।একটা পৃষ্ঠাতে কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ার কথা লেখা। সালফিউরিক এসিড,সালফার, ক্যালসিয়াম অক্সাইড।হ্যান এসিড,ত্যান অক্সাইড।! এই যৌগ সেই যৌগ।
আরো কিছুক্ষণ পৃষ্ঠা উল্টালাম।সব ই কাঠিন্যতায় ভরা :(
আমি ঝট করে ডায়রীটা বন্ধ করেই যেখানে ছিলো সেখানে রেখে দিলাম।মাথা টা ঝিমঝিম করছে এসব পড়ে! একটু ঘুমালে ভালো হয়! আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম।একটু পর ই গভীর ঘুমে ডুবে গেলাম।
।
।
।
সৈকত, আপনার হাতে এগুলো কিসের গ্যালন?"
সৈকত হাহা করে হাসলো আমার দিকে তাকিয়ে।আজ তার হাসি,তার চেহারা আগের কতো সুন্দর,নিষ্পাপ লাগছেনা।বরং ভয়ানক এক কুটিল হাসি মনে হচ্ছে!
হাসতে হাসতে সৈকত বললো
" মাই ডিয়ার ওয়াইফ, আজ তোমাকে পুড়িয়ে মারবো। সোজা বেহেস্তে পাঠিয়ে দিবো "
এই বলে আমার দিকে গ্যালন গুলোর মুখ খুলে পানি ছিটাতে লাগলো।আমি কেমন যেনো এক গন্ধ পেলাম।ওমা। এগুলো তো পানি না।কেরোসিন!
সৈকত আমার দিকে প্রায় দুই গ্যালন কেরোসিন ছিটালো আমার চারপাশে ঘুরে ঘুরে।আমি হা হয়ে গেলাম। বিস্ময়ে মুখ থেকে কথা বের হচ্ছেনা! এতো নিষ্ঠুর ও! এতোটা খারাপ!! আমি ভাবতেও পারিনি!
আমি কান্না কান্না স্বরে বললাম-"প্লিজ আমাকে মারবেন না! "
সৈকত আবারো হাসলো কেরোসিন ছিটাতে ছিটাতে। কতক্ষণ পর কেরোসিন ঢালা শেষ হলো।
এবার সে পকেট থেকে ম্যাচ বের করে কাঠি জ্বালালো আর
শীতল কন্ঠে বলে উঠলো
"good bye.... অনেক মিস করবো তোমাকে!"
এই বলে হাসতে হাসতে আমার দিকে আগুন জ্বালানো ম্যাচের কাঠিটা ছুড়ে দিলো!!
।
।
।না-আ-আ-আ-আ-আআ!!
আমি খুব জোড়ে চিৎকার করেই উঠে পড়লাম। কি যেনো একটা টিকটিক করে যাচ্ছে, পুরো হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে!! খুব ই অন্ধকার! আচ্ছা আমি কি মারা গেছি o.O
আমি চারপাশে তাকালাম। হঠাৎ হাতের সামনে মোবাইল দেখলাম।
এই জগতেও মোবাইল আছে :O
আমি মোবাইল টা জ্বালালাম। তখন ই নিজেকে বিছানাতে আবিষ্কার করলাম। দেয়ালঘড়িটা টিকটিক করছে আর এসির কারণে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।যাক ভয়ের কিছু নেই। তার মানে ওইসব স্বপ্ন ছিলো! আমি বেঁচে আছি!
আমি হাঁফ ছেড়ে বাচলাম! কি ভয়ানক স্বপ্ন! ভয় লাগছে এখনো! পাশের ডেস্ক থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললাম।
রুমটা অন্ধকার লাগছে। মোবাইলটা জ্বালিয়ে দেখি বিকেল ৫ টা বাজে :O এতোক্ষণ হয়ে গেলো! এতোসময় ধরে এই স্বপ্ন টা দেখেছি!
আমি খাট থেকে নামলাম।
লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। সৈকত হঠাৎ করেই রুমে ভূতের মতোন করে ঢুকলো।আমি চমকে উঠলাম।
সৈকত-"ঘুম ভাঙলো? জমিলার মা চলে গেছে।উঠেছো যখন খেয়ে নাও। ঘুমাচ্ছ দেখে ডাকিনি আর তোমাকে"
আমি কিছু বললাম না। এখনো ভয় লাগছে। ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ও বই নিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে গেলো।আমি ভাত খেয়ে নিলাম। ভাত খেতে খেতে মনে হলো
আচ্ছা ও আবার কোনো এসিড বা যৌগ খাবারে মিশিয়ে আমাকে মারবে না তো! :'(
আমি ভাতগুলোর দিকে তাকালাম।নাহ মনে হয় না।কি সুন্দর নিষ্পাপ ভাত, তরকারী। খিদে ও পেয়েছে খুব! বিষ হলে থাকুক বিষ।আগে খেয়ে নেই। -_- পরে ভাগ্যে যা থাকে তা হবে।
খাওয়ার পর বারান্দায় গিয়ে বসলাম। বারান্দাটা আমার খুব প্রিয় এক জায়গা। আকাশের দিকে তাকালাম।
সন্ধ্যা নামছে। কি সুন্দর এক পরিবেশ! মনোমুগ্ধকর। চোখ জুড়িয়ে যায়।
আমি অনেকক্ষণ বারান্দায় বসে বসে প্রাণভরে উপভোগ করলাম দৃশ্য টা। আচ্ছা, আমার তো খুব ই ইচ্ছে ছিলো,আমার স্বামী হবে প্রকৃতিপ্রেমী, অন্যরকম এক মানুষ। আমার মতো হবে! সে এমন কেনো হলো! কেনো এইরকম! :( সারাজীবন এমন এক কাঠখোট্টার সাথেই আমাকে জীবন অতিবাহিত করতে হবে! :(
আমার মন টা খারাপ হয়ে গেলো।হুমায়ূন আহমেদ এর বই পড়ে আরো বেশি ইচ্ছা জেগেছিলো এমন এক ধরনের মানুষের।আর সেটা উলটা ই হলো। আসলে মানুষ এর চাওয়া সবসময় পূরণ হয়না! যে যা পায় সেটা নিয়েই তাকে খুশি থাকতে হয়।
আমি উঠে গেলাম।ড্রয়িংরুমে গিয়ে উঁকি দিলাম।সৈকত বসে বসে বই পড়ছে। এক হাতে কিছু তারের কুন্ডলী। সেটার দিকে বারবার তাকাচ্ছে আর বই পড়ছে। খুব মনোযোগ দিয়ে। মনে মনে বললাম
"তারের কুন্ডলী টা গিলে খেয়ে ফেলেন! :/ তবে আরো ভালো! "
।
।
।
।খাবার টেবিলেও দেখি সে রসায়ন বই নিয়ে বসেছে। এক লোকমা মুখে দেয়,আবার বই পড়ে। ইচ্ছে করছিলো রসায়নের বইটা টান দিয়ে নিয়ে সব পৃষ্ঠা ছিড়ে পানিতে ভিজিয়ে বলি
"নেন খান।উপাদেয় খাদ্য। ভাত খাওয়া লাগবেনা। ভাত তরকারী খায় মানুষেরা।আপনি তো মানুষ না।এলিয়েন।তাই ভিজা কাগজ গলাধঃকরণ করেন -_- "
।
।
।
।
রাতের খাওয়া দাওয়ার পর আমি খাটে হুমায়ূন আহমেদ এর একটা বই নিয়ে বসলাম।সে ওইপাশে আবারো কেমিস্ট্রি বই পড়ে, আর আমি হুমায়ূন আহমেদের " মেঘ বলেছে যাবো যাবো " বইটা। সে ওইপাশে রাসায়নিক বিষয় ভাবে, আর এদিকে আমি সুন্দর গল্প নিয়ে ভাবি!!
বইটা পড়তে পড়তে চোখ এ ঘুম চলে আসলো। আস্তে আস্তে গভীর নিদ্রায় চলে গেলাম।
।
।
।
নীলা, উঠো..... এই নীলা।
আমি ঘুম ঘুম চোখে সামনের মানুষটার দিকে তাকালাম।এটা কি! হিমু আমার সামনে কেন!
আমি বুঝলাম আবার ভ্রম হচ্ছে বা স্বপ্ন দেখছি। হায়রে! এই ভ্রম,স্বপ্ন আমাকে শেষ করে দিবে দেখছি! আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
আবার ডাকলো
"এই নীলা।"
আমি এবার বুঝলাম সৈকত ডাকছে।কিন্তু সে হলুদ পাঞ্জাবীতে কেন!
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।সে হলুদ পাঞ্জাবী পড়া। কাঠখোট্টা লোকটা হলুদ পাঞ্জাবী পড়া! :O এটাও কি সম্ভব!
আমি-" আপনি হলুদ পাঞ্জাবী পড়েছেন?" :O
সৈকত-"তুমি আগে উঠো তো।"
আমি উঠলাম। সে আমার হাত ধরলো আচমকা। আমি হকচকিয়ে গেলাম। এই প্রথম হাত ধরলো!
আমি-"হাত ধরলেন কেন ??"
সৈকত-"ইচ্ছে হয়েছে তাই।এখন আমরা হাটবো বাইরে। চলো।"
আমি ওর কথায় অবাক হয়ে গেলাম। সৈকত রাস্তায় বের হলো। পুরো রাস্তা নিঝুম। একদম নিস্তব্ধ।উপরে সোডিয়ামের হালকা লাইট।এর ই মাঝে আমরা হেটে চলেছি দুজন।
আঊ!
সৈকত হঠাৎ ব্যথায় শব্দ করে উঠলো। আমি তাড়াতাড়ি ওর দিকে তাকালাম।কিছু বলতে গিয়েই হঠাৎ চোখ চলে গেলো ওর পায়ে। তাকিয়ে দেখি ও পায়ে জুতো পড়েনি :O
আমি-"খালি পায়ে আসছেন কেন?"
সৈকত-" মন চেয়েছে তাই।চলো ।"
সৈকত আমার হাত ধরে হেটে চললো অনেকটা পথ। সারাপথ ই আমার মাথায় ঘুরছিলো যে সৈকত এতোসব কিভাবে করছে,জানে কিভাবে! যেই মানুষ কাঠখোট্টা বই ছাড়া কোনো বই ই পড়েনা।সে হঠাৎ করে একদম আমার স্বপ্নের মানুষটার মতো কিভাবে হয়ে উঠলো! তবে কি আমি ঘুমানোর পর সে আমার পাশের তাক থেকে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়েছে! এটাও কি সম্ভব!
আমরা অনেকক্ষণ হাটলাম। তারপর একটা স্থানে আমরা দুজনে বসে পড়লাম।
বিরাট আকারের চাঁদ উঠেছে। উথলে পড়া জোছনা! ঢাকা শহরের ঝিঁ ঝিঁ পোকার ঐকতান শুনতে পাচ্ছি। খুব অবাক একটা ব্যাপার। দূর থেকে কোনো এক পুলিশ ও আমাদের দেখে চলে গেলো। জিজ্ঞাসাবাদ ও করলো না। :O সামনে দিয়ে একটা রিকশা টুংটুং করে বেল বাজিয়ে চলে গেলো। রাস্তাটা কেমন খালি! আমি জীবনে এই প্রথম রাত ৩ টা বাজে এভাবে বাইরে আসলাম।
কিছুক্ষণ পর,
সৈকত আমার হাতটা ধরে বলে উঠলো
"খুব সুন্দর এক জোছনা রাত! দেখো! কি অপরূপ সুন্দর! "
আমি উত্তর দিতে পারলাম না। আমার কাছে কেনো যেনো মনে হচ্ছে এসব স্বপ্ন। আচ্ছা আসলেই স্বপ্ন নয়তো! কেননা আমার ইচ্ছে এভাবে হুট করে পূরণ হয়ে যাবে ভাবিনি কখনো আমি! ওর দিকে তাকালাম।সৈকত কে দেখে যেনো আজ একদম অন্যরকম মনে হচ্ছে! কাঠখোট্টা সৈকত মনে হচ্ছে না!
নিস্তব্ধ রাস্তা, চাঁদের আলো। আমি আর সৈকত।কি সুন্দর একটা দৃশ্য!
আমি সৈকত এর হাতটা শক্ত করে ধরলাম।ওর কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম। স্বপ্ন হোক বা আসল হোক। এই মুহূর্ত টা,সময় টা অনেক মূল্যবান আমার কাছে। কিছুক্ষণের জন্য না হয় সব ভুলে ওর সাথেই এই সময় টা কাটাই!!
(সমাপ্ত)
লেখা-মৌমিতা শিকদার।
আমি লোকটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। তারপর অপলক দৃষ্টিতে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠলাম
"কি করছেন!?"
সে ফিজিক্স বইটা থেকে মাথা তুলে বলে উঠলো
"বই পড়ছি
তুমি ও পড়বে?"
আমি অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত রেখে বললাম
" আমিও দেখতে পাচ্ছি আপনি গান গাচ্ছেন না, বই পড়ছেন।কিন্তু এটা কোন ধরনের স্টাইল?? ডিভানে মাথা রেখে শুয়ে খাটে পা রেখে বই পড়া! জায়গা বন্ধ করে রেখেছেন।আমি বারান্দায় যাবো। পা নামান!!"
সৈকত পা টা আস্তে করে নামালো। আমি তাড়াতাড়ি চলে গেলাম বারান্দায়। সৈকত।ফের বই পড়া শুরু করে দিলো। কাপড়গুলো মেলে দিয়ে কিছুক্ষণ পরই ফিরে আসলাম।রাস্তা আবারো ব্লক -_-
আমি-" পা টা নামান!"
সৈকত একই ভাবে বই পড়েই যাচ্ছে। কোনো হুশজ্ঞান নেই তার। এতোই ডুবে গেছে বইয়ে! আমি আচমকা হাত থেকে ফিজিক্স বইটা এক ঝটকায় নিয়ে নিলাম।
"কি বলেছি কানে যায় না? পা টা নামান!"
সৈকত "আচ্ছা" বলেই পা নামিয়ে ফেললো।আমি বই ফিরিয়ে দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চলে গেলাম।
সৈকত এর সাথে বিয়ে হয়েছে মাত্র একমাস হয়ে গেলো। বিয়ের আগে জানতাম সে বই পড়ুয়া। এখন বুঝি সে গল্পের বই পড়ুয়া না। ফিজিক্স কেমিস্ট্রি বই পড়ুয়া। অফিস থেকে এসেই বই নিয়ে বসে যায়। তার অফিস ব্যাগেই দুই তিনটা কেমিস্ট্রি বই থাকে সবসময়।
আমি বিয়ের আগের থেকেই অন্যজন কে ভালোবাসতাম। চশমা পড়ুয়া, গান প্রিয় এক উচ্ছল ছেলে ছিলো সে। কিন্তু বিয়ের দিন ই সে তার ফোন, ফেইসবুক, ইমো সব বন্ধ করে রাখে। আর যোগাযোগ করেনি। খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন।কেনো যেনো আমার আগেই আশংকা হয়েছিলো যে এমন ই কিছু একটা হবে।প্রায় সবার ই তো হয়।আমি বাদ যাবো কেন!
তো বিয়ের আসরে ছিলেন এই লোক। সৈকত আহমেদ। বাবার থমকে যাওয়া আর মায়ের বারবার শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মোছা, আত্মীয়স্বজনদের বাঁকা চাহনী, এসব দেখে হুট করে বিয়ে করবে বলে জানিয়ে দেয়।বাবা তার বাল্যবন্ধুর ছেলের থেকে এতোটাও আশা করেন নি। আফজাল আংকেল, বাবার বন্ধু ও সায় দেন এ বিয়েতে। তাদের ও নাকি আমাকে পছন্দ। ব্যস। সকলের সম্মতিতেই ফিল্মিভাবে হয়ে গেলো বিয়ে।বিয়ে তো নয় যেনো এক খেলা!
বিয়ের রাতে আমি বসে ছিলাম। মনে অজস্র প্রশ্ন,চিন্তা ছিলো। হঠাৎ করে সৈকত তার রুমে ঢুকেই প্রায় এক প্রকার দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলো। আমি ফুলের পাঁপড়ি ছড়ানো খাটে সব ভুলে হা করে দেখছিলাম তার কান্ড :O ।সে তার বালিশ টার কভার খুলে কিছু একটা খুঁজলো, পেলো না। খাটের নিচ এ দেখলো। ডেস্কের প্রতিটা ড্রয়ার দেখলো। ড্রেসিংটেবিল এ খুজলো। ডিভান এর নিচে খুঁজলো। পরে আমার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত বোধ করতে করতে বলে উঠলো
" দয়া করে কি নামবেন একটু খাট থেকে? একটা জিনিস খুঁজছি। "
আমি ভারি গহনা,শাড়ি নিয়ে নেমে গেলাম। উনি আমাকে অবাক করে দিয়ে তার খাটের তোষক পুরোটার এক অংশ উলটে দিলো :O । তারপর তার মুখে প্রশান্তির এক হাসি দেখলাম।সে দুইহাত দিয়ে একগাদা বই বের করে বলে উঠলো।
" পেয়েছি! আহহ পেয়ে গেছি! "
আমাকে না দেখার ভান করে সে ডিভানে শুয়ে পড়লো।পাশে ছয় সাত টা বই!
আমার তখন অবাক হওয়ার পালা। সে বই তুলে নিলো একটা।আমাকে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে হঠাৎ বলে উঠলো
" আসলে আমার বন্ধু বইগুলো লুকিয়ে রেখেছিল এখানে।আমি তো বই পড়তে খুব ভালোবাসি তাই। এখন খুঁজে পেলাম।আমি পড়ি হ্যাঁ? আপনি ঘুমান।লাইট টা, আচ্ছা থাক অফ ই থাক। ল্যাম্পের আলোতে পড়ি আমি। সমস্যা নেই।"
সে এটা বলেই আর দেরি না করে বই পড়া শুরু করে দিলো। আমি ও বই পড়তে খুব ভালোবাসি। তাই হাত বাড়িয়ে একটা বই তুলে দেখলাম
"পদার্থবিজ্ঞান এর সফল অভিযান"
ফিজিক্স!
আমি তাড়াতাড়ি নামিয়ে রেখেছিলাম বইটা।
সেই থেকেই শুরু। আস্তে আস্তে বুঝে ফেলি যে এই লোক কাঠখোট্টা বই এর প্রেমিক।
মোবাইল এর শব্দে বাস্তবে ফিরে এলাম। কি হবে আর এসব চিন্তা করে! বাদ ই দেই।যা হওয়ার হয়েই তো গেছে।
।
।
।
।
রান্নাঘর এ গিয়ে দেখলাম জমিলার মা একমনে ফুলকপি কাটছে। এই বাড়িতে জমিলার মা রান্না বান্না, ঘর মোছার কাজ করে।
আমি এগিয়ে চুলার উপর রাখা তরকারী টা নেড়ে দিলাম। চেখে লবণ দিলাম।। বুয়া আমাকে দেখে হঠাৎ করে পান খাওয়া লাল দাঁতে বলে উঠলো,
" আফা আপনে আইছেন কেন? যান। ভাইয়ার সাথে সুময় কাটান। মাত্র এক মাস হইলো বিয়ার। এহনো আপনেরা ঘুরতে যান নাই। সুমোয় কাটান না।নয়া বিয়াত্তারা কতো সুমোয় কাটায়! অনেক দেহি। তয় আপনাগো মতো কাউরে দেহিনাই। ভাই সারাদিন বই নিয়া পইড়া থাহে। কিছু কন না ক্যা? জানেন আমার বিয়ার পর আমি আর জমিলার আব্বা মিলা....
সে হেসে উঠলো। আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
আমি-" হয়েছে। কাজ করো!"
আমি রুমে এসে পড়লাম। সে তখন ও বই পড়ছে। কিন্তু এটা আগের বই না, অন্য বই।নাম " কেমিস্ট্রি এর ১৬৭ টা মজার বিক্রিয়া!"
উফ। অসহ্য। আমি আড়চোখে লোকটার দিয়ে তাকালাম। চোখ বড় বড় করে সে একমনে বই পড়ছে। আমার কাছে কেন জানি অনেক বিরক্ত লাগে।সে কি মানুষ নাকি! এভাবে কেউ বই পড়ে? তাও আবার রসায়ন এর বই! কোনো গল্পের বই হলেও বুঝতাম। এই মানুষটাকে না দেখলে জানতাম ই না যে পৃথিবীতে কেউ আবার রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান এর বই শখ করে পড়ে!
আমি তার মনোযোগ নষ্ট করার জন্য গান ছেড়ে দিলাম। ভলিউম বাড়িয়ে দিলাম।
"নেশা কেটে গেলে, তুমিও কেটে যাবে,
মাথার ভেতরে গাজা ঘুরে, গাজার ভেতরে মাথা,তামাক বৃক্ষের পাতা। নেশা কেটে গেলে তুমিও কেটে যা------বে!"
লোকটা গানের শব্দে অবাক হয়ে বই রেখে আমার দিকে তাকালো।
"কি হয়েছে নীলা??? এতো জোরে গান ছেড়েছো কেন?"
আমি-" আপনি বই পড়েন।নিষেধ করছি কখনো? তো আমাকেও গান শুনতে দেন!"
সৈকত -"আচ্ছা ঠিক আছে শোনো।"
এই বলে পকেট থেকে একগাদা তুলো বের করে একটু ছিড়ে দুই কানে গুঁজে দিলো। আমি হা করে তাকিয়ে থাকলাম।তার দিকে। গান বন্ধ করে দিলাম। ভাল্লাগেনা যত্তসব। আমি মেজাজ খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
।
।
।
।
ঝননন!! ঝনাৎ!! "
আমি লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম ঘুম থেকে।কি যেনো পড়ছে মনে হলো!
আমি তাড়াতাড়ি শব্দের উৎসের দিকে গেলাম। বাড়ির একটা রুম আছে,সেখানে সৈকত এর সব বই, আর পরীক্ষা নিরীক্ষণ এর যন্ত্রপাতি।সেখান থেকেই আওয়াজ আসছে!
আমি দরজা ধাক্কাতে লাগলাম। আবার আওয়াজ আসলো।কিছু গড়িয়ে পড়ার আওয়াজ। কি হলো! এতো আওয়াজ কেন রুমের ভেতর!
অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো আমার। আমি বারবার দরজা নক করতে লাগলাম
"সৈকত, কি হয়েছে? শুনতে পাচ্ছেন?? সৈকত!"
কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর সৈকত দরজা খুলে দিলো। রুম ভর্তি কি যেনো এক বিদঘুটে গন্ধ।! সারা মেঝে ছড়ানো ছোট ছোট কালো পিন।টেবিলে লাল রঙ এর একটা পদার্থ একটু পড়ে আছে।পাশেই ভাঙা শিশি।বুঝলাম।সে তার চিরচেনা এক্সপেরিমেন্ট করছে!
আমি-" কি এসব?!
সৈকত-" নীলা, পরীক্ষা করছিলাম ব্রোমিন....
আমি বাঁধা দিয়ে উঠলাম
আমি-" এইসব বিদঘুটে পরীক্ষার কথা আমি জানতে চাই না।আমি সাইন্সের না কমার্স এর ছাত্রী ছিলাম।
"
এই বলে তাড়াতাড়ি মুখে শাড়ির আঁচল চাপা দিয়ে বের হয়ে গেলাম রুম থেকে। নিজের ঘরে এসে বারান্দায় চলে গেলাম। জোরে জোরে শ্বাস নিলাম। বিষাক্ত বাতাস সব বের করে দিলাম। আল্লাহ! কি সব ভয়ানক এক্সপেরিমেন্ট। ভাবখানা দেখে মনে হয় যেনো বিজ্ঞানী! হায়রে! কেমন লোক এটা! এইসব বিদঘুটে বই,পরীক্ষা করতে থাকে।অসহ্য। এতো শখ কিভাবে হয়!
আমি আমার খাটের সাথে লাগোয়া তাক থেকে হুমায়ূন আহমেদের একটা বই বের করলাম। " বৃষ্টি ও মেঘমালা।"
অনেক দিন পড়িনা হুমায়ূন আহমেদের বই।আমার আবার ভীষণ প্রিয় উনার বই! অনেক প্রিয় ♥
আমি বইটা পড়তে লাগলাম।একটু পর সৈকত ফ্রেশ হয়ে আসলো।আমার হাতে বই দেখে অবাক হয়ে গেলো
:O
সৈকত-" ওয়াও নীলা! তুমিও বই পড়ো! বাহ! কি বই এটা?" ☺
আমি-" বৃষ্টি ও মেঘমালা 😒 "
সৈকত -" ওউ :( "
বুঝলাম ওর মন খারাপ হয়েছে।বাহ।আমি কি ওর মতো সারাদিন ওইসব আজাইরা বই পড়বো নাকি! ওগুলা কি বই! বই নামের কলংক! আর এখন কেনো পড়ে এইসব বই! লাভ কি পড়ে! পরীক্ষা দিবে নাকি!
মনে মনে বললাম-" পদার্থবিদ্যা রসায়ন এর ঘন যৌগের দ্রবণ পানিতে গুলিয়ে আপনাকে খাইয়ে দিলে ভালো হবে!"
যাক।সেটা তো করতে পারবো ও না।এসব চিন্তা করে কি হবে। আমার মহান ভাগ্য। এই লোক এর সাথে বিয়ে হয়েছে আমার। কি সুন্দর ভাগ্য। যেই লোক সারাদিন বইয়ে মুখ গুঁজে থাকে, একটু বলেও না যে আসো ঘুরতে যাই দুজন। জোছনা রাতে বলেও না যে আসো দুজন মিলে চাঁদ টা দেখি। উপভোগ করি দৃশ্য টা। সোডিয়াম লাইটের আলোতে দুইজনে মিলে হাটবো। আহ কি কি ভেবেছিলাম! আর এখন! কেমন লোক এটা। আমরা দুইজন সম্পূর্ণ বিপরীত দুই মেরুর মানুষ। আমার পছন্দ প্রকৃতি, সুন্দর গান, ঘুরতে যাওয়া, সাজগোজ করা।আর লোকটার পছন্দ শুধু পদার্থ আর রসায়নের বই। কি আর বলার আছে!!
।
।
।
।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সৈকত আগেই চলে গেছে অফিসে। আমি জানি।সাথে করে নিশ্চয়ই এক গাদা বই নিয়ে গেছে! আর লাঞ্চ আওয়ারে লাঞ্চ হিসেবে সেই বইগুলো গিলবে গোগ্রাসে!
আমি ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গিয়ে বুয়ার সাথে টুকটাক কিছু জরুরী কথা বলে আবার রুমে আসলাম। বিছানায় বসে পড়লাম। আমার হাতে অফুরন্ত সময়।বিয়ের পর সারাদিন ঘরে বসেই কাটাই। বই পড়ি,গান শুনি। আমি আমার মোবাইল টা হাতে নিতেই হঠাৎ করে চোখ চলে গেলো মাটিতে রাখা কিছু একটার উপর। কি এটা। আমি এগিয়ে গেলাম। সৈকতের ডায়রী নাকি! হ্যাঁ তাই তো মনে হচ্ছে।
আমার খুব কৌতুহল সৃষ্টি হলো।নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি নাকি একটু বেশি ই আগ্রহ থাকে। আমি জানি পারমিশন ছাড়া অন্যের ডায়রী এভাবে পড়া উচিত না। কিন্তু কৌতুহল ও হচ্ছে খুব!
আমি আর কিছু না ভেবে চকলেট রঙা ডায়রীটা খুললাম। কিছু সাদা পৃষ্ঠা তার পর ই একটা কিছু আঁকা। কি আঁকা এটা।
আমি গভীরভাবে লক্ষ করলাম। একটা মানুষ, মনে হয় বসে আছে।বাগানে। মাথায় বড় বড় চুল লোকটার। তার মাথার উপরে একটা গাছ।আপেল গাছ। লোকটাকে দেখে নিউটন নিউটন মনে হচ্ছে!
ওহহহ! আমি বুঝে গেলাম। এটা ও সেই পদার্থবিজ্ঞান এর বিষয়। হায় আল্লাহ!
আমি পৃষ্ঠা উল্টালাম।একটা পৃষ্ঠাতে কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ার কথা লেখা। সালফিউরিক এসিড,সালফার, ক্যালসিয়াম অক্সাইড।হ্যান এসিড,ত্যান অক্সাইড।! এই যৌগ সেই যৌগ।
আরো কিছুক্ষণ পৃষ্ঠা উল্টালাম।সব ই কাঠিন্যতায় ভরা :(
আমি ঝট করে ডায়রীটা বন্ধ করেই যেখানে ছিলো সেখানে রেখে দিলাম।মাথা টা ঝিমঝিম করছে এসব পড়ে! একটু ঘুমালে ভালো হয়! আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম।একটু পর ই গভীর ঘুমে ডুবে গেলাম।
।
।
।
সৈকত, আপনার হাতে এগুলো কিসের গ্যালন?"
সৈকত হাহা করে হাসলো আমার দিকে তাকিয়ে।আজ তার হাসি,তার চেহারা আগের কতো সুন্দর,নিষ্পাপ লাগছেনা।বরং ভয়ানক এক কুটিল হাসি মনে হচ্ছে!
হাসতে হাসতে সৈকত বললো
" মাই ডিয়ার ওয়াইফ, আজ তোমাকে পুড়িয়ে মারবো। সোজা বেহেস্তে পাঠিয়ে দিবো "
এই বলে আমার দিকে গ্যালন গুলোর মুখ খুলে পানি ছিটাতে লাগলো।আমি কেমন যেনো এক গন্ধ পেলাম।ওমা। এগুলো তো পানি না।কেরোসিন!
সৈকত আমার দিকে প্রায় দুই গ্যালন কেরোসিন ছিটালো আমার চারপাশে ঘুরে ঘুরে।আমি হা হয়ে গেলাম। বিস্ময়ে মুখ থেকে কথা বের হচ্ছেনা! এতো নিষ্ঠুর ও! এতোটা খারাপ!! আমি ভাবতেও পারিনি!
আমি কান্না কান্না স্বরে বললাম-"প্লিজ আমাকে মারবেন না! "
সৈকত আবারো হাসলো কেরোসিন ছিটাতে ছিটাতে। কতক্ষণ পর কেরোসিন ঢালা শেষ হলো।
এবার সে পকেট থেকে ম্যাচ বের করে কাঠি জ্বালালো আর
শীতল কন্ঠে বলে উঠলো
"good bye.... অনেক মিস করবো তোমাকে!"
এই বলে হাসতে হাসতে আমার দিকে আগুন জ্বালানো ম্যাচের কাঠিটা ছুড়ে দিলো!!
।
।
।না-আ-আ-আ-আ-আআ!!
আমি খুব জোড়ে চিৎকার করেই উঠে পড়লাম। কি যেনো একটা টিকটিক করে যাচ্ছে, পুরো হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে!! খুব ই অন্ধকার! আচ্ছা আমি কি মারা গেছি o.O
আমি চারপাশে তাকালাম। হঠাৎ হাতের সামনে মোবাইল দেখলাম।
এই জগতেও মোবাইল আছে :O
আমি মোবাইল টা জ্বালালাম। তখন ই নিজেকে বিছানাতে আবিষ্কার করলাম। দেয়ালঘড়িটা টিকটিক করছে আর এসির কারণে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।যাক ভয়ের কিছু নেই। তার মানে ওইসব স্বপ্ন ছিলো! আমি বেঁচে আছি!
আমি হাঁফ ছেড়ে বাচলাম! কি ভয়ানক স্বপ্ন! ভয় লাগছে এখনো! পাশের ডেস্ক থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললাম।
রুমটা অন্ধকার লাগছে। মোবাইলটা জ্বালিয়ে দেখি বিকেল ৫ টা বাজে :O এতোক্ষণ হয়ে গেলো! এতোসময় ধরে এই স্বপ্ন টা দেখেছি!
আমি খাট থেকে নামলাম।
লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। সৈকত হঠাৎ করেই রুমে ভূতের মতোন করে ঢুকলো।আমি চমকে উঠলাম।
সৈকত-"ঘুম ভাঙলো? জমিলার মা চলে গেছে।উঠেছো যখন খেয়ে নাও। ঘুমাচ্ছ দেখে ডাকিনি আর তোমাকে"
আমি কিছু বললাম না। এখনো ভয় লাগছে। ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ও বই নিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে গেলো।আমি ভাত খেয়ে নিলাম। ভাত খেতে খেতে মনে হলো
আচ্ছা ও আবার কোনো এসিড বা যৌগ খাবারে মিশিয়ে আমাকে মারবে না তো! :'(
আমি ভাতগুলোর দিকে তাকালাম।নাহ মনে হয় না।কি সুন্দর নিষ্পাপ ভাত, তরকারী। খিদে ও পেয়েছে খুব! বিষ হলে থাকুক বিষ।আগে খেয়ে নেই। -_- পরে ভাগ্যে যা থাকে তা হবে।
খাওয়ার পর বারান্দায় গিয়ে বসলাম। বারান্দাটা আমার খুব প্রিয় এক জায়গা। আকাশের দিকে তাকালাম।
সন্ধ্যা নামছে। কি সুন্দর এক পরিবেশ! মনোমুগ্ধকর। চোখ জুড়িয়ে যায়।
আমি অনেকক্ষণ বারান্দায় বসে বসে প্রাণভরে উপভোগ করলাম দৃশ্য টা। আচ্ছা, আমার তো খুব ই ইচ্ছে ছিলো,আমার স্বামী হবে প্রকৃতিপ্রেমী, অন্যরকম এক মানুষ। আমার মতো হবে! সে এমন কেনো হলো! কেনো এইরকম! :( সারাজীবন এমন এক কাঠখোট্টার সাথেই আমাকে জীবন অতিবাহিত করতে হবে! :(
আমার মন টা খারাপ হয়ে গেলো।হুমায়ূন আহমেদ এর বই পড়ে আরো বেশি ইচ্ছা জেগেছিলো এমন এক ধরনের মানুষের।আর সেটা উলটা ই হলো। আসলে মানুষ এর চাওয়া সবসময় পূরণ হয়না! যে যা পায় সেটা নিয়েই তাকে খুশি থাকতে হয়।
আমি উঠে গেলাম।ড্রয়িংরুমে গিয়ে উঁকি দিলাম।সৈকত বসে বসে বই পড়ছে। এক হাতে কিছু তারের কুন্ডলী। সেটার দিকে বারবার তাকাচ্ছে আর বই পড়ছে। খুব মনোযোগ দিয়ে। মনে মনে বললাম
"তারের কুন্ডলী টা গিলে খেয়ে ফেলেন! :/ তবে আরো ভালো! "
।
।
।
।খাবার টেবিলেও দেখি সে রসায়ন বই নিয়ে বসেছে। এক লোকমা মুখে দেয়,আবার বই পড়ে। ইচ্ছে করছিলো রসায়নের বইটা টান দিয়ে নিয়ে সব পৃষ্ঠা ছিড়ে পানিতে ভিজিয়ে বলি
"নেন খান।উপাদেয় খাদ্য। ভাত খাওয়া লাগবেনা। ভাত তরকারী খায় মানুষেরা।আপনি তো মানুষ না।এলিয়েন।তাই ভিজা কাগজ গলাধঃকরণ করেন -_- "
।
।
।
।
রাতের খাওয়া দাওয়ার পর আমি খাটে হুমায়ূন আহমেদ এর একটা বই নিয়ে বসলাম।সে ওইপাশে আবারো কেমিস্ট্রি বই পড়ে, আর আমি হুমায়ূন আহমেদের " মেঘ বলেছে যাবো যাবো " বইটা। সে ওইপাশে রাসায়নিক বিষয় ভাবে, আর এদিকে আমি সুন্দর গল্প নিয়ে ভাবি!!
বইটা পড়তে পড়তে চোখ এ ঘুম চলে আসলো। আস্তে আস্তে গভীর নিদ্রায় চলে গেলাম।
।
।
।
নীলা, উঠো..... এই নীলা।
আমি ঘুম ঘুম চোখে সামনের মানুষটার দিকে তাকালাম।এটা কি! হিমু আমার সামনে কেন!
আমি বুঝলাম আবার ভ্রম হচ্ছে বা স্বপ্ন দেখছি। হায়রে! এই ভ্রম,স্বপ্ন আমাকে শেষ করে দিবে দেখছি! আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
আবার ডাকলো
"এই নীলা।"
আমি এবার বুঝলাম সৈকত ডাকছে।কিন্তু সে হলুদ পাঞ্জাবীতে কেন!
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।সে হলুদ পাঞ্জাবী পড়া। কাঠখোট্টা লোকটা হলুদ পাঞ্জাবী পড়া! :O এটাও কি সম্ভব!
আমি-" আপনি হলুদ পাঞ্জাবী পড়েছেন?" :O
সৈকত-"তুমি আগে উঠো তো।"
আমি উঠলাম। সে আমার হাত ধরলো আচমকা। আমি হকচকিয়ে গেলাম। এই প্রথম হাত ধরলো!
আমি-"হাত ধরলেন কেন ??"
সৈকত-"ইচ্ছে হয়েছে তাই।এখন আমরা হাটবো বাইরে। চলো।"
আমি ওর কথায় অবাক হয়ে গেলাম। সৈকত রাস্তায় বের হলো। পুরো রাস্তা নিঝুম। একদম নিস্তব্ধ।উপরে সোডিয়ামের হালকা লাইট।এর ই মাঝে আমরা হেটে চলেছি দুজন।
আঊ!
সৈকত হঠাৎ ব্যথায় শব্দ করে উঠলো। আমি তাড়াতাড়ি ওর দিকে তাকালাম।কিছু বলতে গিয়েই হঠাৎ চোখ চলে গেলো ওর পায়ে। তাকিয়ে দেখি ও পায়ে জুতো পড়েনি :O
আমি-"খালি পায়ে আসছেন কেন?"
সৈকত-" মন চেয়েছে তাই।চলো ।"
সৈকত আমার হাত ধরে হেটে চললো অনেকটা পথ। সারাপথ ই আমার মাথায় ঘুরছিলো যে সৈকত এতোসব কিভাবে করছে,জানে কিভাবে! যেই মানুষ কাঠখোট্টা বই ছাড়া কোনো বই ই পড়েনা।সে হঠাৎ করে একদম আমার স্বপ্নের মানুষটার মতো কিভাবে হয়ে উঠলো! তবে কি আমি ঘুমানোর পর সে আমার পাশের তাক থেকে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়েছে! এটাও কি সম্ভব!
আমরা অনেকক্ষণ হাটলাম। তারপর একটা স্থানে আমরা দুজনে বসে পড়লাম।
বিরাট আকারের চাঁদ উঠেছে। উথলে পড়া জোছনা! ঢাকা শহরের ঝিঁ ঝিঁ পোকার ঐকতান শুনতে পাচ্ছি। খুব অবাক একটা ব্যাপার। দূর থেকে কোনো এক পুলিশ ও আমাদের দেখে চলে গেলো। জিজ্ঞাসাবাদ ও করলো না। :O সামনে দিয়ে একটা রিকশা টুংটুং করে বেল বাজিয়ে চলে গেলো। রাস্তাটা কেমন খালি! আমি জীবনে এই প্রথম রাত ৩ টা বাজে এভাবে বাইরে আসলাম।
কিছুক্ষণ পর,
সৈকত আমার হাতটা ধরে বলে উঠলো
"খুব সুন্দর এক জোছনা রাত! দেখো! কি অপরূপ সুন্দর! "
আমি উত্তর দিতে পারলাম না। আমার কাছে কেনো যেনো মনে হচ্ছে এসব স্বপ্ন। আচ্ছা আসলেই স্বপ্ন নয়তো! কেননা আমার ইচ্ছে এভাবে হুট করে পূরণ হয়ে যাবে ভাবিনি কখনো আমি! ওর দিকে তাকালাম।সৈকত কে দেখে যেনো আজ একদম অন্যরকম মনে হচ্ছে! কাঠখোট্টা সৈকত মনে হচ্ছে না!
নিস্তব্ধ রাস্তা, চাঁদের আলো। আমি আর সৈকত।কি সুন্দর একটা দৃশ্য!
আমি সৈকত এর হাতটা শক্ত করে ধরলাম।ওর কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম। স্বপ্ন হোক বা আসল হোক। এই মুহূর্ত টা,সময় টা অনেক মূল্যবান আমার কাছে। কিছুক্ষণের জন্য না হয় সব ভুলে ওর সাথেই এই সময় টা কাটাই!!
(সমাপ্ত)
No comments