#আর_মাত্র_দু'পা
#জান্নাত
জম্ম নেয়ার পূর্বক্ষণ থেকেই যুদ্ধের শুরু৷ শুক্রানুর সাথে ডিম্বানুর মিলিত হওয়ার লড়াই৷ তারপর মায়ের অন্ধকার গর্ভে দশমাস টিকে থাকার লড়াই, সেখান থেকে জম্মের সময় মায়ের সাথেই যুদ্ধ করে পৃথিবীর আলো দেখার লড়াই৷ যুদ্ধই জীবনের সবকিছু৷ লড়াই করেই বাঁচতে হয় জীবনে৷
ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছে আরিত্রী৷ মায়ের মুখটা মনে পড়ে না ওর৷ কয়েকবছর পর বাবা ঘরে আরিত্রীর নতুন মা আনে৷ প্রথম প্রথম ভালোই আদর যতন করতো৷ মনে হয় যেনো নিজেরই মেয়ে৷ যখন যা লাগে সবদিকে মায়ের নজর৷ ওর মনেই হয় না এটা ওর সৎ মা৷
বছর কয়েক পরে বোন হলো আরিত্রীর তারও কয়েকবছর পর ভাই হলো৷ আদর আরিত্রী পায় কিন্তু কোথায় যেনো তৃপ্তি মেটে না৷ বাবার থেকে চেয়ে মায়ের একটা ছবি নেয় আরিত্রী৷ মন খারাপের সময় মায়ের ছবির সাথে কথা বলে৷
একটা মেয়ে হিসেবে যতটুকু নিরাপত্তা দরকার ছিলো তার ১০ ভাগের এক ভাগও পায় নি আরিত্রী৷ ক্ষিধে পেলে খাবার আর লজ্জা নিবারণের জন্য পোশাক৷ নিজেকে বাসার আসবাবপত্র মনে হয় আরিত্রীর৷ আসবাবপত্রেরও যত্ন নেয় মানুষ কিন্তু ওর নয়৷ ওকে কেউ মানুষই মনে করে না৷
সবার জ্যোসনা রাত্রি ভালো লাগে কিন্তু ওর অমাবস্যা ভালো লাগে৷ ঘন কালো অন্ধকার যেনো ভালোবাসায় ঘিরে রাখে ওকে৷ সবাই যখন পর করে অমাবস্যা তখন আপন করে৷ কফি হাতে অমাবস্যা রাতে ছাদে হাঁটছে আরিত্রী৷
পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন কোচিং স্যার প্রতিদিন তার পাশেই আরিত্রীকে বসতে দিতেন৷ সুযোগ পেলেই পড়ার ফাঁকে শরীরের স্পর্শকাতর অংশগুলো ছুঁয়ে দিতেন৷ তখন বুঝতো না আরিত্রী কিন্তু এখন বুঝছে আসলে তিনি ওসব করে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন৷
আরিত্রীর তখন ক্লাস সিক্স এ পড়ে৷ একরাতে ওর সৎ মামা ওর বিছানায় আসে৷ ঘুমের মধ্যে শরীরে কারো স্পর্শ টের পায়৷ ধড়ফর করে উঠে বসতে চায় আরিত্রী কিন্তু পারে না৷ কেউ ওকে ধরে আছে৷ ডিম লাইটের হালকা আলোতে মামার অবয়ব পরিলক্ষিত হয়৷
কিশোরি বয়সের শরীরে পুরুষের অনুভব৷ ভীতি ও ভালোলাগা দুটোই ছিলো৷ মুহুর্তে মামার নিঃশ্বাস আরিত্রীর শরীরে৷ ও বুঝতেও পারছিলো না কি ঘটতে যাচ্ছে৷ সবকিছু বোঝার পূর্বেই মামা তার ক্ষিধে মিটিয়ে চলে যায় নিজ বিছানায়৷
নিজের মধ্যে কেমন যেনো অনুভূতি হচ্ছিলো৷ কি ঘটেছে তা বুঝতে পারছে না আরিত্রী৷ তবে বিষয়টা খুব একটা ভালো না সেটা বুঝতে পারছে৷ কিছুদিন পর রাতে আবার মামা আসলো৷ এবার আরিত্রী বুঝলো এটা হতে দেয়া যাবে না৷ আরিত্রী শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নাক বরাবর ঘুষি দিলো৷ চলে গেলেন মামা৷ আর আসেনি৷ কিন্তু সেই রাতের বিভৎস স্মৃতি কি মোছা যায়? নাকি কখনো যাবে?
এমনি সমস্যায় আরিত্রীকে পড়তে হয়েছে বারবার৷ হয়তো ওর মা থাকলে সচেতন করতেন কিংবা বলার লোক পেত কিন্তু এখন যে ও বড্ড একা৷
পড়ার পাশাপাশি একটা এনজিওতে চাকুরি নিতে গেলো কিন্তু সেখানে আর কাউকে দেখলো না ইন্টারভিউয়ের জন্য৷ অফিসে বসে থাকা লোকটি আস্তে করে উঠলো দরজা আটকাতে৷ তারপর নারী স্বাস্থ্য নিয়ে বুঝাতে বসলেন৷ কিছুক্ষণ পর হাত ধরলেন৷ বাকিটা বুঝতে আর বাকি রইলো না আরিত্রীর৷ চাকরি লাগবে না বলে চলে গেলো আরিত্রী৷
হাঁটতে হাঁটতে ছাদের কিনারায় পৌছে গেলো আরিত্রী৷ হাত থেকে মগটা ফেলে দিলো৷ এতোটা নিচে গিয়ে পড়লো ভাঙার শব্দও পাওয়া গেলো না কিন্তু আরিত্রী নিশ্চিত হলো যে ওটা যে মগ ছিলো সেটা বোঝার আর কোন উপায়ই থাকবে না৷ আর মাত্র দু'পা এগুলেই আরিত্রীও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে কেউ থাকবে না ওর জন্য কাঁদার৷
"আচ্ছা কেউ কাঁদবে বলেই কি আমি মরবো? নাকি কেউ কাঁদবে না বলে বাঁচবো? না, আমি শুধু আমার জন্য বাঁচবো৷ যা ঘটেছে তাতে আমার দোষ নেই আর যদি দোষ থেকেও থাকে তার বিচারেরও সমাপ্তি নিশ্চয়ই আছে৷ সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাইবো আর সৃষ্টিকর্তার পায়ে নিজেকে সমর্পিত করবো৷ যে জীবনটাকে শুরু করেছিলাম লড়াই করে সে জীবনটাকে লড়াই ছাড়া শেষ করে দিবো? এতোটা ভিতু আমি? লড়াই করতে ভয় পাই? অনেকটা সময় তো পিছনে ফেলে এসেছি আর তো মাত্র দু'পা এগুলেই সাফল্য৷ সামনে দু'পা এগুলেই আমার মৃত্যু কিন্তু জীবন পথে দু'পা এগুলেই আমার সাফল্য৷ এতোদূর এসে আমি ভিতুর মতো নিজেকে সরিয়ে নিবো? না, আমি বাঁচবো৷ মাত্র দু'পা এগিয়ে আমি সাফল্যকে ছিনিয়ে আনবো৷"
উল্টো দিকে ফিরলো আরিত্রী৷ না, দু'পা এগিয়ে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিবে না আরিত্রী৷ জীবন পথে দু'পা এগিয়ে সাফল্যকে ধরবে৷ মুখে ফুটিয়ে তুললো বিজয়ের হাসি৷
#জান্নাত
জম্ম নেয়ার পূর্বক্ষণ থেকেই যুদ্ধের শুরু৷ শুক্রানুর সাথে ডিম্বানুর মিলিত হওয়ার লড়াই৷ তারপর মায়ের অন্ধকার গর্ভে দশমাস টিকে থাকার লড়াই, সেখান থেকে জম্মের সময় মায়ের সাথেই যুদ্ধ করে পৃথিবীর আলো দেখার লড়াই৷ যুদ্ধই জীবনের সবকিছু৷ লড়াই করেই বাঁচতে হয় জীবনে৷
ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছে আরিত্রী৷ মায়ের মুখটা মনে পড়ে না ওর৷ কয়েকবছর পর বাবা ঘরে আরিত্রীর নতুন মা আনে৷ প্রথম প্রথম ভালোই আদর যতন করতো৷ মনে হয় যেনো নিজেরই মেয়ে৷ যখন যা লাগে সবদিকে মায়ের নজর৷ ওর মনেই হয় না এটা ওর সৎ মা৷
বছর কয়েক পরে বোন হলো আরিত্রীর তারও কয়েকবছর পর ভাই হলো৷ আদর আরিত্রী পায় কিন্তু কোথায় যেনো তৃপ্তি মেটে না৷ বাবার থেকে চেয়ে মায়ের একটা ছবি নেয় আরিত্রী৷ মন খারাপের সময় মায়ের ছবির সাথে কথা বলে৷
একটা মেয়ে হিসেবে যতটুকু নিরাপত্তা দরকার ছিলো তার ১০ ভাগের এক ভাগও পায় নি আরিত্রী৷ ক্ষিধে পেলে খাবার আর লজ্জা নিবারণের জন্য পোশাক৷ নিজেকে বাসার আসবাবপত্র মনে হয় আরিত্রীর৷ আসবাবপত্রেরও যত্ন নেয় মানুষ কিন্তু ওর নয়৷ ওকে কেউ মানুষই মনে করে না৷
সবার জ্যোসনা রাত্রি ভালো লাগে কিন্তু ওর অমাবস্যা ভালো লাগে৷ ঘন কালো অন্ধকার যেনো ভালোবাসায় ঘিরে রাখে ওকে৷ সবাই যখন পর করে অমাবস্যা তখন আপন করে৷ কফি হাতে অমাবস্যা রাতে ছাদে হাঁটছে আরিত্রী৷
পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন কোচিং স্যার প্রতিদিন তার পাশেই আরিত্রীকে বসতে দিতেন৷ সুযোগ পেলেই পড়ার ফাঁকে শরীরের স্পর্শকাতর অংশগুলো ছুঁয়ে দিতেন৷ তখন বুঝতো না আরিত্রী কিন্তু এখন বুঝছে আসলে তিনি ওসব করে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন৷
আরিত্রীর তখন ক্লাস সিক্স এ পড়ে৷ একরাতে ওর সৎ মামা ওর বিছানায় আসে৷ ঘুমের মধ্যে শরীরে কারো স্পর্শ টের পায়৷ ধড়ফর করে উঠে বসতে চায় আরিত্রী কিন্তু পারে না৷ কেউ ওকে ধরে আছে৷ ডিম লাইটের হালকা আলোতে মামার অবয়ব পরিলক্ষিত হয়৷
কিশোরি বয়সের শরীরে পুরুষের অনুভব৷ ভীতি ও ভালোলাগা দুটোই ছিলো৷ মুহুর্তে মামার নিঃশ্বাস আরিত্রীর শরীরে৷ ও বুঝতেও পারছিলো না কি ঘটতে যাচ্ছে৷ সবকিছু বোঝার পূর্বেই মামা তার ক্ষিধে মিটিয়ে চলে যায় নিজ বিছানায়৷
নিজের মধ্যে কেমন যেনো অনুভূতি হচ্ছিলো৷ কি ঘটেছে তা বুঝতে পারছে না আরিত্রী৷ তবে বিষয়টা খুব একটা ভালো না সেটা বুঝতে পারছে৷ কিছুদিন পর রাতে আবার মামা আসলো৷ এবার আরিত্রী বুঝলো এটা হতে দেয়া যাবে না৷ আরিত্রী শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নাক বরাবর ঘুষি দিলো৷ চলে গেলেন মামা৷ আর আসেনি৷ কিন্তু সেই রাতের বিভৎস স্মৃতি কি মোছা যায়? নাকি কখনো যাবে?
এমনি সমস্যায় আরিত্রীকে পড়তে হয়েছে বারবার৷ হয়তো ওর মা থাকলে সচেতন করতেন কিংবা বলার লোক পেত কিন্তু এখন যে ও বড্ড একা৷
পড়ার পাশাপাশি একটা এনজিওতে চাকুরি নিতে গেলো কিন্তু সেখানে আর কাউকে দেখলো না ইন্টারভিউয়ের জন্য৷ অফিসে বসে থাকা লোকটি আস্তে করে উঠলো দরজা আটকাতে৷ তারপর নারী স্বাস্থ্য নিয়ে বুঝাতে বসলেন৷ কিছুক্ষণ পর হাত ধরলেন৷ বাকিটা বুঝতে আর বাকি রইলো না আরিত্রীর৷ চাকরি লাগবে না বলে চলে গেলো আরিত্রী৷
হাঁটতে হাঁটতে ছাদের কিনারায় পৌছে গেলো আরিত্রী৷ হাত থেকে মগটা ফেলে দিলো৷ এতোটা নিচে গিয়ে পড়লো ভাঙার শব্দও পাওয়া গেলো না কিন্তু আরিত্রী নিশ্চিত হলো যে ওটা যে মগ ছিলো সেটা বোঝার আর কোন উপায়ই থাকবে না৷ আর মাত্র দু'পা এগুলেই আরিত্রীও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে কেউ থাকবে না ওর জন্য কাঁদার৷
"আচ্ছা কেউ কাঁদবে বলেই কি আমি মরবো? নাকি কেউ কাঁদবে না বলে বাঁচবো? না, আমি শুধু আমার জন্য বাঁচবো৷ যা ঘটেছে তাতে আমার দোষ নেই আর যদি দোষ থেকেও থাকে তার বিচারেরও সমাপ্তি নিশ্চয়ই আছে৷ সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাইবো আর সৃষ্টিকর্তার পায়ে নিজেকে সমর্পিত করবো৷ যে জীবনটাকে শুরু করেছিলাম লড়াই করে সে জীবনটাকে লড়াই ছাড়া শেষ করে দিবো? এতোটা ভিতু আমি? লড়াই করতে ভয় পাই? অনেকটা সময় তো পিছনে ফেলে এসেছি আর তো মাত্র দু'পা এগুলেই সাফল্য৷ সামনে দু'পা এগুলেই আমার মৃত্যু কিন্তু জীবন পথে দু'পা এগুলেই আমার সাফল্য৷ এতোদূর এসে আমি ভিতুর মতো নিজেকে সরিয়ে নিবো? না, আমি বাঁচবো৷ মাত্র দু'পা এগিয়ে আমি সাফল্যকে ছিনিয়ে আনবো৷"
উল্টো দিকে ফিরলো আরিত্রী৷ না, দু'পা এগিয়ে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিবে না আরিত্রী৷ জীবন পথে দু'পা এগিয়ে সাফল্যকে ধরবে৷ মুখে ফুটিয়ে তুললো বিজয়ের হাসি৷
No comments