* অপ্রস্ফুটিত -------
---------------------তাহমিনা নাহার।
ক্যাটাগরী-
সাহিত্য।
--------------
২-৫-২০১৭
-----------------
---কিছু কলি ঝরে পড়ে ফুল হয়ে ফুটার
আগেই। আর এই ঝরে যাওয়ার পেছনে
সমাজের কিছু বিশেষ ব্যক্তিবর্গের হাত যখন থাকে, কলিগুলো যখন থাকে
আর্থিক, সামাজিক দিক থেকে বড়
অসহায়,তখন ঐ দুস্কৃতকারীদের কৃতকর্ম
মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছু করার
থাকেনা অসহায় বাবা,মায়ের।
একটা বোবা জানোয়ারও লজ্জ্বাবোধ করে, কিন্তু মানুষনামী পাপীদের লজ্জ্বা
বোধ হয়না।
--আমার এই কথাগুলো বলার পেছনে
আছে একটি অটিজম( আউতিজমো) মেয়ে শিশুর
অসহায়ত্বের করুণ কাহিনী, যার পরিণতিতে সে মেয়েটি এই সুন্দর পৃথিবী
থেকে ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরে গেলো। এ' দায় ভার কার? তার বাবা, মার?
না মনে হয়, আগেই বলেছি তার বাবার
আর্থিক সঙ্গতি ছিলো খুবই দুর্বল। বাবা
চাইলেও প্রতিবাদ করতে পারতোনা।
বাবা কখনো রিক্সা চালাতো, কখনো মাছ
বিক্রি করতো, কখনো সবজি বিক্রি করে
সংসার চালাতো, মোটকথা যখন যে কাজ
পেতো তা করে সংসার চালাতো। মেয়েটির
মা পাড়ার এ' ঘরে, ও' ঘরে কাজ করে সন্ধ্যায় কুড়ে ঘরটিতে ফিরতো একথালা
ভাত নিয়ে তার দুটো সন্তানের ক্ষুধা নিবারনের আশায়। দুটো সন্তানের মধ্যে
একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। ছেলেটি
একদিন অনাহারে, অর্ধাহারে রোগে ভোগে
চলে গেলো ওপারে। মা বাবা অনেক কষ্ট
নিয়ে হলেও বেঁচে রইলো মেয়েটিকে বুকে
ধরে, সে ছিলো অটিজম। কিন্তু দেখতে
ছিল মেয়েটি অপরূপা সুন্দরী।মাথা ভর্তি
ঝাকরা চুল,ঠিক গোলাপের পাপড়ীর
মতো দুটো ঠোঁট যা ছিলো অনেক মানুষরুপী জানোয়ারদের লোভনীয় জিনিস। শিশুটিকে তারা শিশু ভাবেনি,নারী
ভেবেছে তারা সাত বছরের শিশুটিকে।
এমনই সুন্দরী ছিলো যে,সে যে এই মা,বাবার সন্তান সেটা কেউ না জানলে বিশ্বাসই করতোনা। কেউ কেউ এমনও বলতো, মেয়েটি এই বাবার সন্তান নয়। কারণ এতোটুকু সৌন্দর্য এই ঘরে আসতে পারেনা, বাবা,মা, ভাই কারোরই এমন সৌন্দর্য ছিলোনা, তাহলে কার সন্তান?এও
বলাবলি হতো এলাকায় মা তার পেটের
দায়ে কত বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করেছে,
মেয়েটি হয়তোবা সেইসব কোন বড় লোকের পাপের ফসল। যাকগে, হতেও
পারে না ও হতে পারে, তবে সে তার
মায়ের গর্ভে জন্মছে এটা বড় সত্য। বাবাও
পরম বিশ্বাসে তাকে নিজের মেয়ে বলেই
জানে।
সেই ফুলের মতো, অটিজম মেয়েটি----
সাত কিংবা আট বছর বয়স, তখন থেকেই
সে ( কলি) এলাকার কিছু লোকের যৌনতার শিকার হয়। কিভাবে বুঝা গেল?
হঠাৎ হঠাৎ তাকে খুঁজে না পেলে, অনেক্ষন
পর ফিরে এলে মা তাকে জিজ্ঞেস করতো,
--" কোথায় গিয়েছিলি?
--" অমুক ডেকেছিলো, আমাকে এতো
গুলো চকলেট দিছে।
--" আর কি করছে?
সে খুব খুশী হয়ে তার শরীরের বিশেষ
কিছু অঙ্গ দেখিয়ে বলতো,
--" এখানে হাত দিছে, ওখানে হাত দিছে।
গরীব মা তখন মেয়ের মুখে হাত চেপে
ধরে বলতো,
--" চুপ, চুপ, আর যাবিনা, কেউ চকলেট
দিলেও, এ'কথাগুলোও কাউকে বলবিনা।
কলি তখন খিলখিলিয়ে হাসতো,বলতো,
-- "ঠিক আছে, যাবোওনা, চকলেটও
নিবোনা।
পরদিন সকাল বেলা মা যখন পেটের দায়ে
বাইরে যেতো, কলি আবার তাই করতো।
এ' কান, ও'কান করে সবাই জানলো সেকথা, ছোট বড় সবাই মজা করতো যেন
কলিকে নিয়ে। কেউ তার গায়ে হাত দিতো,
কেউ জেনেও হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস
করতো,
-" কলি, কোথায় গিয়েছিলি?
--" অমুকের সাথে ঘুমাইতে।
সে ' কথা তারা একে অন্যকে রসিয়ে রসিয়ে বলতো।
কলির তাতে লজ্জ্বা হতোনা, সে বরং খুশীই
হতো। কলির মা লজ্জ্বা পেলেও করার
কিছুই ছিলোনা। হ্যা,তবে সেই অমুক কিংবা তমুককে জিজ্ঞেস করেছে, হাতে
পায়ে ধরে অনুনয় বিনয় করে বলছে,
--" আমার বোকা মেয়েটার সর্বনাশ তোমরা
করোনা।
বিনিময়ে তারা অস্বীকার করেছে। এমনি
করে দিন যেতে লাগলো।কলির যখন
বয়স এগার হলো, তার মা, বাবা তাকে
কারো বাড়ীতে কাজের মেয়ে হিসেবে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাইলো, যেন সে আর বাইরে
বাইরে ঘুরতে না পারে, যেন সে নিরাপত্তা
পায়, কেউ যেন অতি আদরের মেয়েটির
চরম সর্বনাশটা না করে ফেলতে পারে।
তাই তারা পরম এবং চরম বিশ্বাসে সেই
এলাকার এক ধনী লোকের বাড়ীতে কাজে
দিলো।
-- বয়স যখন কলির বারো হলো, প্রথম
বারের মতো সে নারী হলো, শুধু একবার,
শুধু একবারের পরই কলির শরীরে ফুটে
ওঠলো মাতৃত্বের আভাস। তবু সে নিজে
কিছু বুঝতোনা। কিছু কিছু নমুনা, যেমন,
খাওয়ায় অরুচি, টক দেখলে পাগলের
মতো খেতে চাওয়া, যা একজন অন্তঃসত্বা
মেয়ে করে, তাই করতো। তা ' দেখে কলির
মা তার কাছে জান্তে চাইলো,
" কার সাথে ঘুমাইছিলি?
কলির জবাব,
--" ও' বাড়ীর নানাজ্বীর সাথে।
এরপর? এরপর কলির মা ঐ বাড়ীর
নানাজ্বীর সাথে কথা বলেছে, বলেছে তাকে,
--" আমার মেয়েটাকে বিয়ে করতে বলছিনা, তার শরীর থেকে আপনার এই
পাপ উপড়ে দিন।
নানাজ্বী অস্বীকার করেছে, সেটা নাকি তার
নয়।
কলির বাবা,মা, সালিশ ডেকে বিচার চাইলে, গৃহকর্তা আবারো অস্বীকার করলো।
তবে এটা বল্লো,
--" যার পাপই হোক, আমার বাড়ীতে থেকে
যখন কলির এই হাল হলো, আমি টাকা
দেবো,যেন তার পেটের পাপ মুক্তি পায়।
দিয়েছিলোও টাকা নানাজ্বী। সে টাকা নিয়ে
কলিকে মুক্ত করতে ডাক্তারের কাছে নিয়েও গিয়েছিলো কলির বাবা,মা। কিন্তু
ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে, ভ্রুন আর ভ্রুন নেই, ততদিনে একটি শিশুর
শরীরে বেড়ে ওঠেছে আরেকটি শিশু।
এখন তা' ধ্বংশ করতে গেলে কলিই
হয়তো বাঁচবেনা। আদরের কলিকে
বাঁচাতে বাবা,মা এই সিদ্ধান্ত থেকে সড়ে
এলো। শিশুর গর্ভে শিশু বাড়তে থাকলো।
কলি কিন্তু কিছুই বুঝছেনা। সে আগের
মতো দৌঁড়ঝাপ, গাছে ওঠা সব চালিয়ে
যেতে থাকলো। যার ফলে নয় মাসের আগেই, মাত্র সাত মাসেই কলির প্রসব
যন্ত্রনা শুরু হলো। সেদিন সে স্বভাব
সুলভ ভাবেই গাঁয়ের রাস্তায় খেলাধুলায়
মেতে ছিলো, ঠিক সেই মুহুর্তেই সে প্রসব
যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতেই এই নিষ্ঠুর
পৃথিবী থেকে চলে গেলো না ফেরার দেশে।
কিছুলোক জড়ো হয়ে কলির মৃত্যু
যন্ত্রনাটা বেশ উপভোগ করছিলো।
হায়রে মানুষ!
একদিকে ভালোই হলো হয়তো, এমন
নিস্পাপ শিশু কলিকে আর বারবার মা
হতে হবেনা, এমন মানুষরুপী
নরাধমদের অত্যাচার আর সইতে হবেনা।
প্রতিটা মেয়েই মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে
চায়, তবে সেটা কাঙ্খিত, অনাকাঙ্খিত নয়।
কলির বাবা মার আর অটিজম মেয়েটির
জন্য দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম করতে হবেনা।
কলিকে হারিয়ে কলির মায়ের বুকফাটা
চিৎকারের শব্দ আজো সেই গ্রামে ধ্বনিত
হয়। পাপী কিংবা পাপীদের তাতে একটুও
ফারাক পড়েনি, কোন কলির জন্য কখনো
পড়বেও না। কারণ, কলিরা শুধু বাবা,মায়ের সন্তান, হোক সে কালো, হোক
সুন্দরী, হোক বুদ্ধিমতী, হোক না সে
অটিজম।।
--------------------------------------------------------
---------------------তাহমিনা নাহার।
ক্যাটাগরী-
সাহিত্য।
--------------
২-৫-২০১৭
-----------------
---কিছু কলি ঝরে পড়ে ফুল হয়ে ফুটার
আগেই। আর এই ঝরে যাওয়ার পেছনে
সমাজের কিছু বিশেষ ব্যক্তিবর্গের হাত যখন থাকে, কলিগুলো যখন থাকে
আর্থিক, সামাজিক দিক থেকে বড়
অসহায়,তখন ঐ দুস্কৃতকারীদের কৃতকর্ম
মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছু করার
থাকেনা অসহায় বাবা,মায়ের।
একটা বোবা জানোয়ারও লজ্জ্বাবোধ করে, কিন্তু মানুষনামী পাপীদের লজ্জ্বা
বোধ হয়না।
--আমার এই কথাগুলো বলার পেছনে
আছে একটি অটিজম( আউতিজমো) মেয়ে শিশুর
অসহায়ত্বের করুণ কাহিনী, যার পরিণতিতে সে মেয়েটি এই সুন্দর পৃথিবী
থেকে ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরে গেলো। এ' দায় ভার কার? তার বাবা, মার?
না মনে হয়, আগেই বলেছি তার বাবার
আর্থিক সঙ্গতি ছিলো খুবই দুর্বল। বাবা
চাইলেও প্রতিবাদ করতে পারতোনা।
বাবা কখনো রিক্সা চালাতো, কখনো মাছ
বিক্রি করতো, কখনো সবজি বিক্রি করে
সংসার চালাতো, মোটকথা যখন যে কাজ
পেতো তা করে সংসার চালাতো। মেয়েটির
মা পাড়ার এ' ঘরে, ও' ঘরে কাজ করে সন্ধ্যায় কুড়ে ঘরটিতে ফিরতো একথালা
ভাত নিয়ে তার দুটো সন্তানের ক্ষুধা নিবারনের আশায়। দুটো সন্তানের মধ্যে
একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। ছেলেটি
একদিন অনাহারে, অর্ধাহারে রোগে ভোগে
চলে গেলো ওপারে। মা বাবা অনেক কষ্ট
নিয়ে হলেও বেঁচে রইলো মেয়েটিকে বুকে
ধরে, সে ছিলো অটিজম। কিন্তু দেখতে
ছিল মেয়েটি অপরূপা সুন্দরী।মাথা ভর্তি
ঝাকরা চুল,ঠিক গোলাপের পাপড়ীর
মতো দুটো ঠোঁট যা ছিলো অনেক মানুষরুপী জানোয়ারদের লোভনীয় জিনিস। শিশুটিকে তারা শিশু ভাবেনি,নারী
ভেবেছে তারা সাত বছরের শিশুটিকে।
এমনই সুন্দরী ছিলো যে,সে যে এই মা,বাবার সন্তান সেটা কেউ না জানলে বিশ্বাসই করতোনা। কেউ কেউ এমনও বলতো, মেয়েটি এই বাবার সন্তান নয়। কারণ এতোটুকু সৌন্দর্য এই ঘরে আসতে পারেনা, বাবা,মা, ভাই কারোরই এমন সৌন্দর্য ছিলোনা, তাহলে কার সন্তান?এও
বলাবলি হতো এলাকায় মা তার পেটের
দায়ে কত বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করেছে,
মেয়েটি হয়তোবা সেইসব কোন বড় লোকের পাপের ফসল। যাকগে, হতেও
পারে না ও হতে পারে, তবে সে তার
মায়ের গর্ভে জন্মছে এটা বড় সত্য। বাবাও
পরম বিশ্বাসে তাকে নিজের মেয়ে বলেই
জানে।
সেই ফুলের মতো, অটিজম মেয়েটি----
সাত কিংবা আট বছর বয়স, তখন থেকেই
সে ( কলি) এলাকার কিছু লোকের যৌনতার শিকার হয়। কিভাবে বুঝা গেল?
হঠাৎ হঠাৎ তাকে খুঁজে না পেলে, অনেক্ষন
পর ফিরে এলে মা তাকে জিজ্ঞেস করতো,
--" কোথায় গিয়েছিলি?
--" অমুক ডেকেছিলো, আমাকে এতো
গুলো চকলেট দিছে।
--" আর কি করছে?
সে খুব খুশী হয়ে তার শরীরের বিশেষ
কিছু অঙ্গ দেখিয়ে বলতো,
--" এখানে হাত দিছে, ওখানে হাত দিছে।
গরীব মা তখন মেয়ের মুখে হাত চেপে
ধরে বলতো,
--" চুপ, চুপ, আর যাবিনা, কেউ চকলেট
দিলেও, এ'কথাগুলোও কাউকে বলবিনা।
কলি তখন খিলখিলিয়ে হাসতো,বলতো,
-- "ঠিক আছে, যাবোওনা, চকলেটও
নিবোনা।
পরদিন সকাল বেলা মা যখন পেটের দায়ে
বাইরে যেতো, কলি আবার তাই করতো।
এ' কান, ও'কান করে সবাই জানলো সেকথা, ছোট বড় সবাই মজা করতো যেন
কলিকে নিয়ে। কেউ তার গায়ে হাত দিতো,
কেউ জেনেও হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস
করতো,
-" কলি, কোথায় গিয়েছিলি?
--" অমুকের সাথে ঘুমাইতে।
সে ' কথা তারা একে অন্যকে রসিয়ে রসিয়ে বলতো।
কলির তাতে লজ্জ্বা হতোনা, সে বরং খুশীই
হতো। কলির মা লজ্জ্বা পেলেও করার
কিছুই ছিলোনা। হ্যা,তবে সেই অমুক কিংবা তমুককে জিজ্ঞেস করেছে, হাতে
পায়ে ধরে অনুনয় বিনয় করে বলছে,
--" আমার বোকা মেয়েটার সর্বনাশ তোমরা
করোনা।
বিনিময়ে তারা অস্বীকার করেছে। এমনি
করে দিন যেতে লাগলো।কলির যখন
বয়স এগার হলো, তার মা, বাবা তাকে
কারো বাড়ীতে কাজের মেয়ে হিসেবে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাইলো, যেন সে আর বাইরে
বাইরে ঘুরতে না পারে, যেন সে নিরাপত্তা
পায়, কেউ যেন অতি আদরের মেয়েটির
চরম সর্বনাশটা না করে ফেলতে পারে।
তাই তারা পরম এবং চরম বিশ্বাসে সেই
এলাকার এক ধনী লোকের বাড়ীতে কাজে
দিলো।
-- বয়স যখন কলির বারো হলো, প্রথম
বারের মতো সে নারী হলো, শুধু একবার,
শুধু একবারের পরই কলির শরীরে ফুটে
ওঠলো মাতৃত্বের আভাস। তবু সে নিজে
কিছু বুঝতোনা। কিছু কিছু নমুনা, যেমন,
খাওয়ায় অরুচি, টক দেখলে পাগলের
মতো খেতে চাওয়া, যা একজন অন্তঃসত্বা
মেয়ে করে, তাই করতো। তা ' দেখে কলির
মা তার কাছে জান্তে চাইলো,
" কার সাথে ঘুমাইছিলি?
কলির জবাব,
--" ও' বাড়ীর নানাজ্বীর সাথে।
এরপর? এরপর কলির মা ঐ বাড়ীর
নানাজ্বীর সাথে কথা বলেছে, বলেছে তাকে,
--" আমার মেয়েটাকে বিয়ে করতে বলছিনা, তার শরীর থেকে আপনার এই
পাপ উপড়ে দিন।
নানাজ্বী অস্বীকার করেছে, সেটা নাকি তার
নয়।
কলির বাবা,মা, সালিশ ডেকে বিচার চাইলে, গৃহকর্তা আবারো অস্বীকার করলো।
তবে এটা বল্লো,
--" যার পাপই হোক, আমার বাড়ীতে থেকে
যখন কলির এই হাল হলো, আমি টাকা
দেবো,যেন তার পেটের পাপ মুক্তি পায়।
দিয়েছিলোও টাকা নানাজ্বী। সে টাকা নিয়ে
কলিকে মুক্ত করতে ডাক্তারের কাছে নিয়েও গিয়েছিলো কলির বাবা,মা। কিন্তু
ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে, ভ্রুন আর ভ্রুন নেই, ততদিনে একটি শিশুর
শরীরে বেড়ে ওঠেছে আরেকটি শিশু।
এখন তা' ধ্বংশ করতে গেলে কলিই
হয়তো বাঁচবেনা। আদরের কলিকে
বাঁচাতে বাবা,মা এই সিদ্ধান্ত থেকে সড়ে
এলো। শিশুর গর্ভে শিশু বাড়তে থাকলো।
কলি কিন্তু কিছুই বুঝছেনা। সে আগের
মতো দৌঁড়ঝাপ, গাছে ওঠা সব চালিয়ে
যেতে থাকলো। যার ফলে নয় মাসের আগেই, মাত্র সাত মাসেই কলির প্রসব
যন্ত্রনা শুরু হলো। সেদিন সে স্বভাব
সুলভ ভাবেই গাঁয়ের রাস্তায় খেলাধুলায়
মেতে ছিলো, ঠিক সেই মুহুর্তেই সে প্রসব
যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতেই এই নিষ্ঠুর
পৃথিবী থেকে চলে গেলো না ফেরার দেশে।
কিছুলোক জড়ো হয়ে কলির মৃত্যু
যন্ত্রনাটা বেশ উপভোগ করছিলো।
হায়রে মানুষ!
একদিকে ভালোই হলো হয়তো, এমন
নিস্পাপ শিশু কলিকে আর বারবার মা
হতে হবেনা, এমন মানুষরুপী
নরাধমদের অত্যাচার আর সইতে হবেনা।
প্রতিটা মেয়েই মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে
চায়, তবে সেটা কাঙ্খিত, অনাকাঙ্খিত নয়।
কলির বাবা মার আর অটিজম মেয়েটির
জন্য দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম করতে হবেনা।
কলিকে হারিয়ে কলির মায়ের বুকফাটা
চিৎকারের শব্দ আজো সেই গ্রামে ধ্বনিত
হয়। পাপী কিংবা পাপীদের তাতে একটুও
ফারাক পড়েনি, কোন কলির জন্য কখনো
পড়বেও না। কারণ, কলিরা শুধু বাবা,মায়ের সন্তান, হোক সে কালো, হোক
সুন্দরী, হোক বুদ্ধিমতী, হোক না সে
অটিজম।।
--------------------------------------------------------
No comments