লাশ খাদক
#লাশ_খাদক
ময়মনসিংহ সরকারী মেডিকেল'র সামনে রায়ান দাঁড়িয়ে আছে সি.এন.জি'র অপেক্ষায়। পেশায় একজন ডাক্টার, থাকেন মির্জাপুর বড় খালার বাসায়। প্রতিদিন ৫০ মাইল লোকাল বাসে জার্নি করে ডিউটিতে আসেন। বাসায় ফিরতে মাঝে মাঝে রাত হয় রায়ানের, আজও তাই হলো। রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। চার দিকে গুটি কয়েক সি.এন.জি ড্রাইভার আরামসে পান চিবুচ্ছে আর পায়চারি করছে। কিন্তু কেউ রাজি হচ্ছে না যাবার জন্যে। অন্য সময় বলার আগেই শালার বেটারা রাজি হয়ে যেত। বেশির ভাগ সেধে সেধে জিজ্ঞাস করতে ছুটে আসত মামা কই যাবেন? আর আজ ভাব ধরেছে পঞ্চাশ টাকা বেশি দেবো বলাতেও রাজি হচ্ছে না। মেজাজ প্রচন্ড রকম খারাপ হচ্ছে রায়ানের।
রোড ফাকা থাকায় রোডের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দূর থেকে একটা সি.এন.জি কে ইশারা দিল রায়ান। কাছে এসে সি.এন.জি থামিয়ে ড্রাইভার সাব মাথাটা একটু বাড়িয়ে জিজ্ঞাস করলেন,
- কই যাবেন মামা?
- মির্জাপুর
- যাওন যাইব না মামা, লাশের গাড়ি। তাছাড়া আমি তো মামা টাঙ্গাইল পর্যন্ত যাইমু, আপনেরে কেমনে লই।
- অসুবিধা নাই মামা, আপনার সিটের পাশে কষ্ট করে আমাকে একটু বসতে দিলেই হবে। ভাড়া নিয়ে ভাববেন না, আপনি যা চাইবেন তাই দেবো। দেখেন না মামা, পারেন কিনা...
ড্রাইভার সাব কিছুক্ষণ চুপ থেকে_
- আইচ্ছা ওঠেন। কিন্তু মামা ভয় পায়েন না লাশের গাড়ি বইলা। আর আগেই কইয়া লই, আমি কিন্তু একটু পর পর বিড়ি ধরাইমু, লাশের গাড়িতো। আপনের সমস্যা নাই নাইতো মামা?
- না, ঠিক আছে আপনি চলেন...
প্রায় আধ ঘন্টা দু'জনই চুপচাপ থাকার পর ড্রাইভার সাব...
- মেডিকেলে কারে লইয়া আইছিলেন মামা, রাইত হইল যে?
- কাউকেই না, আমি একজন ডাক্টার। এখানেই আমার এ বছর পোস্টিং হয়েছে।
- ও আইচ্ছা ভাল কথা। আপনে কি প্রতিদিন এই টাইমেই বাড়িত ফেরেন?
- না আজ একটু লাশ কাটাকাটি করতে করতে দেরি হয়ে গেল।
- ভালই অইছে, ডাক্টাররে গাড়িত উঠাইছি। আপনাগো তো ভয়-ডর কিচ্ছু নাই। অন্য পেসেঞ্জার উঠাইলে বিপদে পরতে হইত।
এমনিতেই পাহাড়ের রাস্তা, তার মধ্যে লাশের গাড়ি।
রায়ানের ভালই লাগছে হালকা হাসি মেরে ড্রাইভার সাব তার সাথে কথা বলছে। আবার পান চিবুনোর স্টাইলও জোস, ঠিক যেন অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবুর মতন। কথার ধরণও প্রায় কাছাকাছি।
- গাড়ি চালাইতে আইসায় মরছি বুঝছেন মামা, ওই দেখেন সামনে তিন জন যাত্রী। তাগোরে ঘাড়িতে না উঠাইলে মাইন্ড করে। তাগোরে যায়গা মত রাইখা তারপর বাসায় যাওন লাগে। কই যাই না যাই, খবর নাই কিন্তু ঠিক এই টাইমে আইসা এখানে দাঁড়ায় থাকে সি.এন.জি'র লিগা। কথাও কয় না খালি ইশারা দিয়া বোঝায় কই থামতে হইব।
- ও...। পৃথিবী টা আজব মামা আপনি চলেন শোয়া বারটা বাজতেসে...
- খিকখিকখিক! মামা মাথা ঠিক আছে, নাকি ঘড়ি নষ্ট? শোয়া তিনটা বাজে মামা! দেখেন ভাল কইরা...
- অদ্ভূত শোয়া তিনটাই তো বাজে! আজ কাজের চাপে কি মাথাটা গেছে আমার!
রায়ান বিড়বিড় করছে। পেছন থেকে কিসের যেন কটমট শব্দও বিরক্ত লাগছে এই মুহূর্তে তার।
- আচ্ছা মামা, গাড়ির পেছনে কটমটে শব্দটা কিসের? বিরক্ত লাগছে...
- ও, আপনারে তো বলা হয় নাই। মনের ভুলেও পেছন ফিরে তাকাইবেন না!
অসুবিধা আছে....
রায়ান একটু অবাকই হচ্ছে ড্রাইভার সাবের কথায়। আর যত সময় যাচ্ছে ওই অদ্ভূত শব্দটাও ততই বাড়ছে। প্রায় পনেরো মিনিট পর রায়ান এবার আর নিজের জিঘাংসাকে ধরে রাখতে পারলো না। সে ঘার ফিরে তাকাল। অবাক কান্ড, আবছা হেড লাইটের আলোতেও রায়ান স্পষ্টই দেখতে পেল, ওই তিন ব্যক্তি (পেসেঞ্জার) গাড়িতে রাখা লাশখানা ছিবড়ে খাচ্ছে। তাদের সারা অদ্ভূত-ভয়ংকর চেহেরায় রক্তের ছড়াছড়ি!
ড্রাইভার সাবের দিকে তাকিয়ে রায়ান থ মেরে আছে!
- ক্যান আপনারে কইছিলাম না, পেছনে তাকাইবেন নাহ!
সাড়ে ছ'টার দিকে নাম না জানা বাজারের আবর্জনায় রায়ানকে বেহুশ অবস্থায় দেখতে পেয়ে বাজারের লোকজন এসে ভিড় জমায়। পানি-টানি ছিটিয়ে কোনমতে তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনে। পরে শুধু এইটুকু বলেই রায়ান আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে__
ওরা...লাশ খায়, ওরা লাশ খাদক...!
___চন্দ্রবিন্দু
[ বিঃদ্রঃ লেখাটির ঘটনা এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক]
ময়মনসিংহ সরকারী মেডিকেল'র সামনে রায়ান দাঁড়িয়ে আছে সি.এন.জি'র অপেক্ষায়। পেশায় একজন ডাক্টার, থাকেন মির্জাপুর বড় খালার বাসায়। প্রতিদিন ৫০ মাইল লোকাল বাসে জার্নি করে ডিউটিতে আসেন। বাসায় ফিরতে মাঝে মাঝে রাত হয় রায়ানের, আজও তাই হলো। রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। চার দিকে গুটি কয়েক সি.এন.জি ড্রাইভার আরামসে পান চিবুচ্ছে আর পায়চারি করছে। কিন্তু কেউ রাজি হচ্ছে না যাবার জন্যে। অন্য সময় বলার আগেই শালার বেটারা রাজি হয়ে যেত। বেশির ভাগ সেধে সেধে জিজ্ঞাস করতে ছুটে আসত মামা কই যাবেন? আর আজ ভাব ধরেছে পঞ্চাশ টাকা বেশি দেবো বলাতেও রাজি হচ্ছে না। মেজাজ প্রচন্ড রকম খারাপ হচ্ছে রায়ানের।
রোড ফাকা থাকায় রোডের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দূর থেকে একটা সি.এন.জি কে ইশারা দিল রায়ান। কাছে এসে সি.এন.জি থামিয়ে ড্রাইভার সাব মাথাটা একটু বাড়িয়ে জিজ্ঞাস করলেন,
- কই যাবেন মামা?
- মির্জাপুর
- যাওন যাইব না মামা, লাশের গাড়ি। তাছাড়া আমি তো মামা টাঙ্গাইল পর্যন্ত যাইমু, আপনেরে কেমনে লই।
- অসুবিধা নাই মামা, আপনার সিটের পাশে কষ্ট করে আমাকে একটু বসতে দিলেই হবে। ভাড়া নিয়ে ভাববেন না, আপনি যা চাইবেন তাই দেবো। দেখেন না মামা, পারেন কিনা...
ড্রাইভার সাব কিছুক্ষণ চুপ থেকে_
- আইচ্ছা ওঠেন। কিন্তু মামা ভয় পায়েন না লাশের গাড়ি বইলা। আর আগেই কইয়া লই, আমি কিন্তু একটু পর পর বিড়ি ধরাইমু, লাশের গাড়িতো। আপনের সমস্যা নাই নাইতো মামা?
- না, ঠিক আছে আপনি চলেন...
প্রায় আধ ঘন্টা দু'জনই চুপচাপ থাকার পর ড্রাইভার সাব...
- মেডিকেলে কারে লইয়া আইছিলেন মামা, রাইত হইল যে?
- কাউকেই না, আমি একজন ডাক্টার। এখানেই আমার এ বছর পোস্টিং হয়েছে।
- ও আইচ্ছা ভাল কথা। আপনে কি প্রতিদিন এই টাইমেই বাড়িত ফেরেন?
- না আজ একটু লাশ কাটাকাটি করতে করতে দেরি হয়ে গেল।
- ভালই অইছে, ডাক্টাররে গাড়িত উঠাইছি। আপনাগো তো ভয়-ডর কিচ্ছু নাই। অন্য পেসেঞ্জার উঠাইলে বিপদে পরতে হইত।
এমনিতেই পাহাড়ের রাস্তা, তার মধ্যে লাশের গাড়ি।
রায়ানের ভালই লাগছে হালকা হাসি মেরে ড্রাইভার সাব তার সাথে কথা বলছে। আবার পান চিবুনোর স্টাইলও জোস, ঠিক যেন অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবুর মতন। কথার ধরণও প্রায় কাছাকাছি।
- গাড়ি চালাইতে আইসায় মরছি বুঝছেন মামা, ওই দেখেন সামনে তিন জন যাত্রী। তাগোরে ঘাড়িতে না উঠাইলে মাইন্ড করে। তাগোরে যায়গা মত রাইখা তারপর বাসায় যাওন লাগে। কই যাই না যাই, খবর নাই কিন্তু ঠিক এই টাইমে আইসা এখানে দাঁড়ায় থাকে সি.এন.জি'র লিগা। কথাও কয় না খালি ইশারা দিয়া বোঝায় কই থামতে হইব।
- ও...। পৃথিবী টা আজব মামা আপনি চলেন শোয়া বারটা বাজতেসে...
- খিকখিকখিক! মামা মাথা ঠিক আছে, নাকি ঘড়ি নষ্ট? শোয়া তিনটা বাজে মামা! দেখেন ভাল কইরা...
- অদ্ভূত শোয়া তিনটাই তো বাজে! আজ কাজের চাপে কি মাথাটা গেছে আমার!
রায়ান বিড়বিড় করছে। পেছন থেকে কিসের যেন কটমট শব্দও বিরক্ত লাগছে এই মুহূর্তে তার।
- আচ্ছা মামা, গাড়ির পেছনে কটমটে শব্দটা কিসের? বিরক্ত লাগছে...
- ও, আপনারে তো বলা হয় নাই। মনের ভুলেও পেছন ফিরে তাকাইবেন না!
অসুবিধা আছে....
রায়ান একটু অবাকই হচ্ছে ড্রাইভার সাবের কথায়। আর যত সময় যাচ্ছে ওই অদ্ভূত শব্দটাও ততই বাড়ছে। প্রায় পনেরো মিনিট পর রায়ান এবার আর নিজের জিঘাংসাকে ধরে রাখতে পারলো না। সে ঘার ফিরে তাকাল। অবাক কান্ড, আবছা হেড লাইটের আলোতেও রায়ান স্পষ্টই দেখতে পেল, ওই তিন ব্যক্তি (পেসেঞ্জার) গাড়িতে রাখা লাশখানা ছিবড়ে খাচ্ছে। তাদের সারা অদ্ভূত-ভয়ংকর চেহেরায় রক্তের ছড়াছড়ি!
ড্রাইভার সাবের দিকে তাকিয়ে রায়ান থ মেরে আছে!
- ক্যান আপনারে কইছিলাম না, পেছনে তাকাইবেন নাহ!
সাড়ে ছ'টার দিকে নাম না জানা বাজারের আবর্জনায় রায়ানকে বেহুশ অবস্থায় দেখতে পেয়ে বাজারের লোকজন এসে ভিড় জমায়। পানি-টানি ছিটিয়ে কোনমতে তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনে। পরে শুধু এইটুকু বলেই রায়ান আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে__
ওরা...লাশ খায়, ওরা লাশ খাদক...!
___চন্দ্রবিন্দু
[ বিঃদ্রঃ লেখাটির ঘটনা এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক]
No comments